নিজস্ব প্রতিনিধি,নওগাঁ : ৬ ঋতুর আমাদের এই বাংলাদেশের বসন্তকালকে সৌন্দর্যের রাজা বলা হয়ে থাকে। ফাগুনে বসন্তের ছোঁয়ায় পলাশ-শিমুলের বনে বনে লেগেছে অগ্নিঝরা ফুলের মেলা। শীতের কঠোরতার জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করতে আবারেও ফিরে এলো বাংলার বুক মাতাল করতে ঋতুরাজ বসন্ত।
চারিদিকে রঙিন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে, তেমনি নতুন আরেক সাজে সেজেছে নওগা জেলার রাণীনগর-আত্রাই উপজেলার বিস্তৃন্ন এলাকার আম বাগানগুলো।
সেই আমের মুকুলের ঘ্রাণে নওগাঁর রাণীনগর-আত্রাই উপজেলার সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। শোভা পাচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব মহিমা। মুকুলে-মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো, প্রায় ৬০ শতাংশ গাছেই এসেছে মুকুল। বাগান মালিক, কৃষিবিদ ও আমচাষিরা আশা করছেন বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ দুই উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে।
আমচাষি ও বাগান মালিকরা বাগানের পরিচর্চা নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরের ন্যায় গাছে মুকুল আশার আগে থেকেই গাছের পরিচর্চা করে থাকেন তারা। যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাঁধার সময় কোনও সমস্যার সৃষ্টি না হয়। সারিবদ্ধ গাছে ভরপুর আমের মুকুল যেন শোভা ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব মহিমায়।
এ উপজেলা ফজলি, খিড়সা, মোহনা, রাজভোগ, রূপালী, গোপালভোগসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষের উপযোগী হওয়ায় চাষিরা নিজ উদ্যোগে প্রথমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করে আমের বাগান সৃজন করলেও বর্তমানে তারা নিজেরাই চারা উৎপাদন করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সুফলও পেয়েছেন আমচাষী ও বাগান মালিকরা।
আম চাষে সফল কৃষক রাণীনগর উপজেলার করজগ্রামের কাজী শাখাওয়াৎ হোসেন, জাহাঙ্গীর মোল্লা ও আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের মজিবর রহমান জানান, পুরাপুরিভাবে এখনও সব গাছে মুকুল আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যেই সকল গাছেই মুকুল আসবে। আমরা এ আম থেকে অনেক টাকা আয় করেছি।
কাজী শাখাওয়াৎ হোসেন, জাহাঙ্গীর মোল্লা ও মজিবর রহমানের মতো ভবানীপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, আনছার আলী, আনিছসহ অনেকেই আমের বাগান তৈরি করেছেন। তারা জানান, এবার কাঙ্ক্ষিত ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা। সুবিধাভোগীদের সুফল দেখে চাষিরা আম চাষে উৎসাহিত হয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে নতুন নতুন বাগান করছেন।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো: শহীদুল ইসলাম ও আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার জানান, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় বিরাজমান আবহাওয়া ও মাটি আম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। দিন দিন আমের বাগান সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে আমের বাগান তৈরি হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে আম বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে আম সরবরাহ করা শুরু হবে।
তারা আরও জানান, বর্তমানে রাণীনগর উপজেলায় প্রায় ৩৩ হেক্টর ও আত্রাই উপজেলায় প্রায় ১১০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আমের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। গাছে গাছে আমের মুকুল আসার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি পরিচর্যা করতে হবে তা কৃষি অফিস সব সময় পরামর্শ দিয়ে আসছে।
সান নিউজ/বাকী/এসএ