নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে পেরিলার বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। বাংলাদেশে নতুন ভোজ্যতেলের ফসল সাউ পেরিলা-১ এর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বৃহৎ পরিসরে চাষাবাদ শুরু হতে যাচ্ছে।পেরিলার তেল বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ তেল দেশের তেলের ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বাণিজ্যিকভাবে চাহিদা বেশি থাকায় ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সাউ পেরিলা-১ চাষের উৎসাহ দেখিয়েছে বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বীজ বোর্ডে সাউ পেরিলা-১ নামে পেরিলার নতুন জাতের নিবন্ধন পায় ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি।
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীতে পরীক্ষামূলক চাষও শুরু হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। প্রাপ্ত সফল্যে আগামীতে বরেন্দ্রজুড়ে উচ্চমূল্যের পেরিলা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। বাংলাদেশে যে পেরিলার চাষ হচ্ছে সেটি কোরিয়ান পেরিলা।
গোদাগাড়ীর পেরিলা চাষের কৃষক শাহাদাত হোসাইন জানান, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার ফেসবুক পোস্টে উপজেলায় পেরিলার গবেষণা প্লট বিষয়ে জানতে পারেন। যোগাযোগ করার পর তিনিও সেই সুযোগ পেয়েও যান। পরে পেরিলা বীজ, সার ও কীটনাশকসহ সব ধরনের সহায়তা নেন কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ মারফত।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এ যুবক জানান, প্রথমে ৭ কাঠা জমিতে পেরিলা আবাদ করেন। তা থেকে বীজ পেয়েছিলেন ৯ কেজি। বীজ ভাঙিয়ে তেল হয়েছে ১ লিটার ৮০০ গ্রাম। পুরো তেলই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংগ্রহ করেছে।
পেরিলা চাষে তেমন বাড়তি যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানান তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, বীজতলায় বীজ বপন করে এক মাসের মাথায় এর চারা তৈরি হয়। এর পর জমি তৈরি করে সাধারণত মরিচ কিংবা বেগুন চারা রোপণের মতো সারিবদ্ধ করে পেরিলা চারা রোপণ করতে হয়। পেরিলা চাষের সমস্যা প্রসঙ্গে বলেন, শুধু শুয়োপোকা পেরিলার পাতা খেয়ে ফেলছিল। তা ছাড়া কিছু গাছে ছত্রাকের আক্রমণে কাণ্ড পচে যায়। এ দুই বালাই নিয়ন্ত্রণে তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মেনে কীটনাশক প্রয়োগ করেন।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, দেশের ১৪টি অঞ্চলে একযোগে পেরিলার গবেষণা প্লট ছিল। বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া এবং গোদাগাড়ী পৌর এলাকার লালবাগ রামনগর এলাকায় দুটি প্রদর্শনী প্লট ছিল পেরিলার। নতুন এ ফসল চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, পেরিলার চারা আগস্টে জমিতে রোপণ করতে হয়। কিন্তু গোদাগাড়ীতে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে রোপণ করেছিলেন তারা। আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে তোলা হয় ফসল। এর পর স্থানীয় সরিষা ভাঙানোর মেশিনে পেরিলার বীজ ভাঙানো হয়েছে। প্রতিকেজি পেরিলায় তেল পাওয়া গেছে ৪০০ গ্রামের মতো। বাজারে প্রতিলিটার পেরিলার তেল ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে শেকৃবি কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচএমএম তারিক হোসাইনের অধীনে পেরিলা নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করেন কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। তিনি জানান, জমিতে পেরিলার জীবনকাল ৭০ থেকে ৭৫ দিন। এটি সহজেই চার ফসলি জমিতে চাষের আওতায় আনা সম্ভব।
পেরিলার প্রতিটি পুষ্প মঞ্জরিতে ১০০ থেকে ১৫০টি বীজ পাওয়া যায়। ফলে অন্য তেল ফসল থেকে এর উৎপাদনমাত্রা অনেকাংশে বেশি। গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. এইচএম তারিক হোসাইন বলেন, মূলত চীন, কোরিয়া ও থাইল্যান্ডে পেরিলার বহুল প্রচলন রয়েছে।
শুধু তাই নয়- চাইনিজ, কোরিয়ান ও থাই রেস্টুরেন্টগুলো সবজি হিসেবে পেরিলার পাতা ব্যবহার করে। দেশীয় এমন রেস্টুরেন্টগুলো বিদেশ থেকে পেরিলার পাতা আমদানি করে। বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা প্রচুর। তিনি আরও জানান, বীজে ২৫ শতাংশের ওপরে আমিষ থাকায় তেল আহরণের পর তা থেকে প্রাপ্ত খৈল গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারসহ জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
৭০-৭৫ দিনের এ ফসল থেকে হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ ১.৫ টন পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করা যাবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন বাণিজ্যিকভাবে চাষে যেমন তেলের আমদানির পরিমাণ কমে যাবে, তেমনি সাউ পেরিলা-১ দেশের অর্থনীতিতেও আনতে পারে আমূল পরিবর্তন।
সান নিউজ/এসএ