ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
নোভেল করোনাভাইরাস অর্থাৎ কোভিড-১৯ সম্ভাব্য ওষুধ খুঁজতে গিয়ে এক কার্যকর অ্যান্টিবডির সন্ধান পেয়েছেন চীনা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। কোষে নতুন করোনাভাইরাস প্রবেশে বাধা দিতে এসব অ্যান্টিবডি দারুণ কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিবডি সফলভাবে কাজ করবে বলে মনে করছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।
গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৯ লাখ মানুষ। চীনে গত বছরের শেষ দিকে উহানে ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা দিলে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৫৫৪ জন। তবে এদের মধ্যে নব্বই ভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। মারা গেছেন ৩ হাজার ৩১২ জন।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রায় শতভাগ সফল হয়েছে চীন। ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক না থাকলেও রোগী মৃত্যুর হার দেশটিতে এখন অনেক কম।
এদিকে, বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং লিংকি জানান, তাদের সন্ধান পাওয়া অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি ওষুধ বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রের চেয়ে অধিক কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, করোনা চিকিৎসায় এটি একটি ‘বর্ডারলাইন’ বা ‘সীমান্তরেখা’। এর আগেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ রকম প্লাজমা বা রক্তরস পদ্ধতি ব্যবহারের নজির রয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি হিসেবে ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’র কথা বলেন। তাঁর দাবি, নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে প্লাজমা থেরাপি। এ চিকিৎসাপদ্ধতিও দেখাতে পারে আশার আলো।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্লাজমায় অ্যান্টিবডি থাকে, তবে রক্তের ধরন দ্বারা এটি সীমাবদ্ধ।
গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ঝাং ও তাঁর এক দল গবেষক শেনঝেনে থার্ড পিপল হাসপাতালে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের রক্তে অ্যান্টিবডি বিশ্লেষণ শুরু করেন। তাঁরা ২০৬টি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি পৃথক করেন যার ভাইরাসের প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার একটি জোরালো ক্ষমতা রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঝাং জানান, অ্যান্টিবডি পৃথক করার পর তাঁরা আরও একটি পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে কোষে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারে কি না, তা দেখা হয়। প্রথম ২০ বা ততোধিক অ্যান্টিবডির মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৪টি অ্যান্টিবডি ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকিয়ে দেয়। এর মধ্যে দুটি খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
গবেষকেরা এর পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি শনাক্ত করেন এবং এগুলোকে সংযুক্ত করে করোনাভাইরাসের পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে চেষ্টা করছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগ্রহী ওষুধ নির্মাতারা এটি নিয়ে পরীক্ষা করতে পারবেন। প্রথমে পশু ও পরে মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে।
গবেষক দলটি ইতিমধ্যে বায়োটেক ফার্ম ব্রি বায়োসায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে।
ক্যানসার চিকিৎসা বা সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় অ্যান্টিবডির দারুণ সুফল পাওয়া গিয়েছে। তবে অ্যান্টিবডি কোনো ভ্যাকসিন নয় এটি ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের রোগপ্রতিরোধের ক্ষেত্রে দারুণ সাহায্যে করবে।