আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমি। পূর্ব-পশ্চিমে তা ৪ হাজার ৮শ কিলোমিটার বা ৩ হাজার মাইল আর উওর-দক্ষিণে ১ হাজার ৮শ কিলোমিটার বা ১ হাজার মাইল চওড়া।
সব মিলিয়ে সাহারা মরুভূমির আয়তন ৯২ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৩৬ লাখ বর্গ মাইল, যা যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের আয়তনের সমান। প্রায় ১২টি দেশজুড়ে সাহারা মরুভূমি অবস্থিত। দেশগুলো হলো মিসর, মরক্কো, লিবিয়া, মালি, মৌরতানিয়া, আলজেরিয়া, চাদ, ইরিত্রিয়া, নাইজার, সুদান, তিউনিসিয়া ও পশ্চিম সাহারা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশ পৃথিবীর একটি টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। অতীতে আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে ছিল টেথিস সাগর। প্রায় ৪ কোটি বছর আগে টেকটোনিক প্লেটের গতিশীলতার ফলে তা উত্তরের দিকে সরে এসে আফ্রিকা ও ইউরোপকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেয়।
ফলে আফ্রিকার উত্তর অংশ সংকীর্ণ হয়ে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে উঠে যায়। এরপর ধীরে ধীরে জল বিচ্ছিন্ন হয়ে এই এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়। মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে মাত্র দেড় শ কিলোমিটার দূরে সাহারা মরুভূমির একটি অংশের নাম, ওয়াদি আল হিতান। আরবি ভাষায় ওয়াদি আল হিতান অর্থ তিমির উপত্যকা।
প্রায় ৩৬ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত ডোরাডান প্রজাতির তিমির জীবাশ্ম এখানে পাওয়া যায়। সাহারা মরুভূমি যে অতীতে বিশাল সমুদ্র ছিল এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই ওয়াদি আল হিতান। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম পাওয়া গেছে এখানে। সাহারা মরুভূমিকে দেখলে মনে হবে যেন প্রকৃতি থেকে সবুজ রং মুছে ফেলা হয়েছে।
কিন্তু সমুদ্র থেকে মরুভূমি হওয়ার পরও বহুবার সাহারা মরুভূমি সজীব হয়ে উঠেছে। প্রতি ২০ হাজার বছর পরপর সাহারা মরুভূমি জলাভূমি ও তৃণভূমিতে পরিণত হয়। কেননা পৃথিবী নিজ অক্ষ পথে প্রতি ২০ হাজর বছর পরপর সামান্য উত্তর দিকে কাত হয়ে যায়। ফলে পৃথিবীর মৌসুমি বায়ুর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। আর ঠিক ওই সময় সাহারা মরুভূমিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অঞ্চল সবুজে পরিণত হয়।
সর্বশেষে ৫ থেকে ৭ হাজার বছর আগে সাহারা অঞ্চলে মানুষ ও পশুপাখির বসবাস ছিল। ধারণা করা হয়, ১৫ হাজার বছর পর সাহারা মরুভূমি আবারও সবুজ হয়ে উঠবে। সাহারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বালির স্তূপ। এই মরুভূমির বালি দিয়ে সমগ্র পৃথিবীকে ৮ ইঞ্চি পুরু করে ঢেকে ফেলা যাবে। সাহারায় একবার বালুর ঝড় শুরু হলে তা একাধারে চার দিন পর্যন্ত চলতে পারে।
এই বালু ঝড়ের সঙ্গে বয়ে আসা প্রচুর বালু তৈরি করে ছোটখাটো বালির পাহাড়। বালুর পাথর প্রায় ১৫ তলা বিল্ডিংয়ের সমান উঁচু হতে পারে। মরু ঝড়ের ফলে সৃষ্ট বালির পাহাড়গুলো স্থায়ী নয়। এগুলো বছরে প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয়। লিবিয়ার অন্তর্গত সাহারা মরুভূমির আল আজিজিয়ায় এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে।
সান নিউজ/এসএ