সান নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে মার্কিন কংগ্রেসের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন হলেও এ ধরনের আক্রমণ এর আগেও ঘটেছে। আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ৬ জানুয়ারির এই হামলায় সে দেশের আইনসভা কংগ্রেসের ক্যাপিটল হিল ভবন কয়েক ঘণ্টা দখল করে রাখে।
ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কংগ্রেস ভবনের নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে সংঘর্ষে অন্তত চারজন মারা গেছে।
নিরাপত্তা রক্ষীদের অভিযানের পর ক্যাপিটল ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করে দিয়ে অধিবেশন আবার শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে এরপর ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির পরিচালক স্যামুয়েল হলিডে জানিয়েছেন, এরকম অ-সংগঠিত না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ওপর ২০০ বছর আগেও একবার হামলা চালানো হয়।
সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১৮১২ সালে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
সেই যুদ্ধে ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ বাহিনী ওয়াশিংটন ডিসির প্রতিরক্ষাব্যুহ ভেদ করে এবং ক্যাপিটল ভবন ও অন্যান্য কিছু দালান পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ইতিহাস অনুযায়ী, “ব্রিটিশ সৈন্যরা মশাল এবং গানপাউডার দিয়ে ক্যাপিটল ভবন, প্রেসিডেন্টের বাসস্থান এবং অন্যান্য সরকারি দফতর পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।”
সেই আগুন থেকে শুধুমাত্র একটি মেহগনি কাঠের ডেস্ক রক্ষা পেয়েছিল- যা এখনও সিনেট চেম্বারে শোভা পাচ্ছে।
ঘেন্ট শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে ব্রিটেন-আমেরিকার ওই লড়াইয়ের অবসান ঘটে।
এর পরের উল্লেখযোগ্য হামলার ঘটনাটি ঘটে প্রায় ১০০ বছর পর।
পলিটিফ্যাক্ট নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, ১৯১৫ সালের ২ জুলাই মধ্যরাতের কিছু আগে সিনেট রিসেপশন চেম্বারে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান বিভাগের একজন সাবেক অধ্যাপক এরিখ মেনটার ডায়নামাইট ব্যবহার করে এই বিস্ফোরণ ঘটান।
তিনি লিখেছিলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঝংকারের বিরুদ্ধে তিনি এই কাজ করেছেন, “যাতে শান্তির শান্তির বাণী যুদ্ধে নিনাদকেও ছাপিয়ে ওঠে।”
গ্রেফতারের কিছুদিন পর কারাগারের মধ্যেই এরিখ মেনটার আত্মহত্যা করেন।
মার্কিন সংসদের ওপর হামলার পরবর্তী ঘটনাটি ঘটে ঠিক ৩৯ বছর পর।
১৯৫৪ সালের ১ মার্চ মার্কিন-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড পুয়ের্তো রিকোর স্বাধীনতাকামীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের গ্যালারিতে ঢুকে পড়ে।
হাউস হিস্ট্রি ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী, পুয়ের্তোরিকান ন্যাশনালিস্ট পার্টির সদস্যরা “কংগ্রেস কক্ষ লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় এবং গ্যালারিতে পুয়োর্তোরিকোর পতাকা উড়িয়ে দেয়।”
ওই ঘটনায় পাঁচজন কংগ্রেস সদস্য- অ্যালভিন বেন্টলি, বেন জেনসেন, ক্লিফোর্ড ডেভিস, জর্জ ফ্যালন এবং কেনেথ রবার্টস আহত হন।
সংসদের কর্মকর্তারা হামলাকারী চারজনকে আটক করেন এবং বাকি একজন পালিয়ে গেলেও পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ক্যাপিটল হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির স্যামুয়েল হলিডে বলছেন, ৬ জানুয়ারির ঘটনার সাথে ১৯৫৪ সালের ঘটনার তুলনা হতে পারে না, কারণ পুয়ের্তোরিকান স্বাধীনতাকামীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কংগ্রেসের ভেতর আগে থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গিয়েছিল।
পলিটিফ্যাক্টের তথ্য অনুযায়ী এরপরও কিছু হামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে : ১ মার্চ ১৯৭১: ক্যাপিটল ভবনে বোমা বিস্ফোরণ। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে ভবনটির ক্ষতি হয়। লাওসে মার্কিন-সমর্থিত অভিযানের প্রতিবাদে ‘দ্য ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে একটি গোপন সংগঠন এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে।
৭ নভেম্বর ১৯৮৩ : রাত প্রায় ১১টার দিকে ক্যাপিটল ভবনের উত্তর শাখার তিন তলায় এক বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। এই বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে এক ব্যক্তি ক্যাপিটলের টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ফোন করে এই বোমার কথা জানায়। সে নিজেকে 'সশস্ত্র প্রতিরক্ষা ইউনিট' নামে এক গোপন সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করে। গ্রেনাডা এবং লেবাননে মার্কিন অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ঐ ব্যক্তি জানায়।
২৪ জুলাই ১৯৯৮ : সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে যাওয়ার সময় এক সশস্ত্র হামলাকারীর গুলিতে ক্যাপিটল পুলিশের দুজন কর্মকর্তা- অফিসার জেকব চেস্টনাট এবং ডিটেকটিভ জন গিবসন- নিহত হন। হামলাকারী রাসেল ইউজিন ওয়েস্টনকে আটক করা হলেও মানসিক ভারসাম্যহীনতার জন্য তার বিচার করা যায়নি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
সান নিউজ/এসএম