সিদ্দিক আলম দয়াল,গাইবান্ধা
এক সময়ের চরম অভাব আর দারিদ্রতা দমিয়ে রাখতে পারে নি সাহেরা খাতুনকে। পরিশ্রম দিয়ে দারিদ্রতাকে জয় করার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন সাহেরা খাতুন।
ছাগল পালন করে অল্প সময়েই জীবনের রং বদলে দিয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি। একটি ছাগল থেকে হয়েছেন কয়েক লক্ষ টাকার মালিক। তাই তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। তিনি এখন এলাকার অনেকের কাছে একটি উদাহরণ। তার এই সফলতা দেখে খুশী গ্রামবাসীরা।
ভাষারপাড়ার নদীর বাঁধে আশ্রিত জামিল উদ্দিন বলেন ,আমিও নদীভাঙ্গা মানুষ । কাজ করে নিজের পায়ে দাড়াতে পারিনি । কিন্তু তার গ্রামের আরেক বাসিন্দা সাহেরা বেগমের কথা গর্ব করে বলেন। বলেন গাইবান্ধার সদর উপজেলার বাগুড়িয়া গ্রামের সাহেরা খাতুন। স্বামীর নাম সাহেব আলী। ১৯৯৬ সালে ব্রহ্মপুত্র নদী ভাংগনে তার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হলে তিন সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে। চরম দারিদ্রতার মধ্যে দু তিন দিন পর একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছিল তার। সে সময় অন্যের জমিতে দিন মজুরীর কাজ করে একটি ছাগল ক্রয় করেন।
বুক ভরা আশা নিয়ে ছাগলটিকে পরম মমতায় লালন পালন করেন। মাত্র ৬ মাস পর ছাগলের ৩ টি বাচ্চা হয়। এক সময় এই চারটি ছাগল থেকে ৩ বছরে ২০টি ছাগলের মালিক হয়ে যান সাহেরা। তারমধ্যে খাসির পরিমান প্রায় অর্ধেক। তার স্বপ্ন সত্যি হতে থাকে। এভাবেই আস্তে আস্তে ছাগল বিক্রি করে তিনি বেশ মুনাফা পেতে থাকেন। হাতে জমতে থাকে টাকা। সেই টাকায় সাহেরা খাতুন তার স্বামী সাহেব আলীকে করে দিয়েছেন মনোহারী দোকান। দোকানেরে আয় আর ছাগল বিক্রি থেকে সংসার খরচের পর ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করিয়েছেন।
গিদারী ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ইদু বলেন, এখন আর তার কোন কষ্ট নেই । সাহেরা খাতুনের ছাগল খামার, ৪ টি গরু , বাগুড়িয়া বাজারে একটি দোকান হয়েছে। আবাদী জমি কিনেছেন। শুধুমাত্র ছাগল পালন করেই জায়গা কিনে ১৪ লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়িও করেছেন , কিনেছেন সোলার আলো। ছেলেমেয়েদের বড় করে মানুষ করেছেন। তারাও এখন কাজ করে আয় রোজগার করে। সাহেরা খাতুনকে এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। অন্যের জমিতে মজুরী খাটতে হয়না। এখন তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। হয়েছেন স্বাবলম্বী ।
সাহেরা খাতুন তার সফলতা নিয়ে বলেন , একসময় আমি ভাত দেখিনি চোখে, খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। অন্যের জমিতে মজুরী খেটে একটি ছাগল কিনেছিলাম। সেই ছাগল থেকেই আমার আজ অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন আমি সবাইকে নিয়ে ভালো আছি।
সান নিউজ/সালি