সাইফু ইসলাম মাসুম : সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। শৈশবে যেসব খেলাধুলা খেলেছিলেন আজকের বৃদ্ধরা সেসব খেলাধুলা না দেখতে পেয়ে তারাও এখন ভুলে গেছেন বহু খেলার নাম। এক সময় গ্রামের শিশু ও যুবকরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অভ্যস্ত ছিল। তারা অবসরে গ্রামের খোলা মাঠে দলবেঁধে খেলতো এসব খেলা। আর খেলাধুলার মাধ্যমে শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো ছেলেমেয়েরা। কিন্তু মাঠ-বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়ায়, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব খেলাধুলা। গ্রামীণ খেলা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করত।
বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন। খোদ পাড়াগাঁয়েও সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌচি, কানামাছি প্রভৃতি গ্রামীণ খেলার প্রচলন নেই। গ্রামবাংলার খেলাধুলার মধ্যে যেসব খেলা হারিয়ে গেছে তাদের মধ্যে হা-ডু-ডু, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, মন্দুরুজ, গাদন, খো-খো, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, গোশত তোলা, চিক্কা, এ্যাঙ্গো এ্যাঙ্গো, কুতকুত, ল্যাংচা, কিং কিং খেলা, বোমবাস্টিং, হাড়িভাঙা, বুদ্ধিমন্তর, চাঁ খেলা, বৌচি, কাঠিছোঁয়া, দড়ি লাফানো, বরফ পানি, দড়ি টানাটানি, চেয়ার সিটিং, রুমাল চুরি, চোখবুঝাবুঝি, কানামাছি, ওপেন্টি বাইস্কোপ, নৌকাবাইচ, ঘোড়াদৌড়, এলাটিং বেলাটিং, আগডুম বাগডুম, ইকড়ি মিকড়ি, ঝুম ঝুমা ঝুম, নোনতা বলরে, কপাল টোকা, বউরানী, ছক্কা, ব্যাঙ্গের মাথা, লাঠিখেলা, বলীখেলা, আইচ্চা ভাঙ্গা,কুৎ কুৎ, মইলা, রাম সাম যদু মদু, চোর ডাকাত, মার্বেল, সাতচাড়া, থিলো এম্প্রেস, ষোলগুড্ডা, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, চিলমোরগ, বুঝাবুঝি, বদন, লাপা লাপি, লগো লগো, ডালিম খেলা অন্যতম। ইচিং বিচিং, এক্কাদোক্কা, ওপেন টু বাইস্কোপ, কড়ি খেলা ,কানামাছি, কাবাডি, কুতকুত, গোল্লাছুট, জব্বারের বলীখেলা, টোপাভাতি, ডাংগুলি, দাড়িয়াবান্ধা, নুনতা খেলা, নৌকা বাইচ, পুতুল খেলা, ফুল টোকা, বউচি, বাংলাদেশের খেলাধুলা, বাঘ ছাগল খেলা, মার্বেল খেলা, মোরগ লড়াই (গ্রামীণ খেলা), লাটিম, ষাঁড়ের লড়াই, ষোল গুটি। ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া এসব খেলাধুলা এখন আর তেমন কোথাও চোখে পড়ে না।
নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন শুধুই গল্প। আবার নাম শুনে অনেকেই হাসে। গ্রামের এসব খেলাগুলোর মধ্যে হা-ডু-ডু, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌচি, ডাংগুলি ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এসব খেলা চলাকালে শতশত মানুষের ঢল নামতো খেলা প্রাঙ্গণে। কিন্তু এখন গ্রামের খোলা মাঠ কমে যাওয়ায় এসব খেলা শুধুই স্মৃতি। এক সময় এ দেশের ছেলেমেয়েরা গ্রামীণ খেলাকে প্রধান খেলা হিসেবে খেলতো। আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অবশ্যই গ্রামীণ ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করা অতি জরুরি। যাতে করে আগামী প্রজন্ম আমাদের গ্রামীণ খেলাকে জানতে পারে। ভুলে না যায় আমাদের নিজস্ব ক্রীড়া ঐতিহ্য। ছোট্ট বেলার অগনিত খেলা গুলো নিয়ে আজকের এই আয়োজন -
কিছু কিছু খেলা আছে যা সাধারণত কেবল মেয়েরাই খেলে থাকে। মেয়েরা ফুটবল বা ক্রিকেট তেমন একটা খেলে না আর সে কারণেই হয়তো তাদের খেলাগুলো এখনও অল্পবিস্তর টিকে আছে। বাংলাদেশে মেয়েদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয় দুটো খেলা হলো টোপাভাতি খেলা ও পুতুল খেলা। এছাড়াও আছে এক্কা দোক্কা, কড়ি খেলা, ঘুটি খেলা, এলাটিং বেলাটিং, ওপেনটি বায়োস্কোপ ইত্যাদি। শুরুতে তাই চলো জেনে নিই ঘরে-বাইরে-স্কুলে ছোট মেয়েদের কিছু মজার খেলার কথা।
পুতুল খেলা খেলেনি এমন মেয়ে বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বাড়িতে মাটি, কাঠ কিম্বা কাপড় দিয়ে মানুষের আদলে পুতুল বানানো হয়। গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন মেলা, যেমন বৈশাখী মেলা, রথের মেলা, পৌষ সংক্রান্তি, চড়ক পুজা, শিবরাত্রি, মহররম, ঈদ এবং নানা পার্বণে হরেকরকমের পুতুল তৈরি করা হয়। অবশ্য এখন প্লাস্টিকের পুতুলেরও খুব চল হয়েছে।
পুতুল খেলা
ছেলে-মেয়ে, বর-কনে এমনি নানা ধরনের পুতুল কাপড় ও গয়না দিয়ে সাজানো হয়। রান্না-বান্না, সন্তান লালন-পালন, মেয়ে পুতুলের সাথে ছেলে পুতুলের বিয়ে ইত্যাদি নানা বিষয়ের অভিনয় করেই খেলা হয় পুতুল খেলা। আসলে পুতুল খেলার মধ্যে পুরো সংসারের একটা ছবি ফুটে ওঠে। পুতুলগুলো যেন ছোট ছোট মেয়েদের সন্তান। মায়ের মতো স্নেহ-আদর দিয়ে, খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুম পাড়ানো পর্যন্ত সব কাজই করে খুকুমায়েরা। কেবল আদর সোহাগই নয় প্রয়োজনে শাসনও করে ছোট্ট মেয়েরা তাদের পুতুল সন্তানকে। পুতুল খেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব হলো একজনের মেয়ের সঙ্গে আরেক জনের ছেলে পুতুলের বিয়ে দেয়া।
টোপাভাতি/জুলাবাতি
পুতুল খেলার মতোই মেয়েদের আরেকটি প্রিয় খেলা হলো টোপাভাতি/জুলাবাতি বা রান্না করার খেলা। টোপা অর্থ মাটির হাঁড়ি-বাসন আর ভাতি মানে ভাত রান্না করা।কঞ্চি বা লাঠি হয় ঘরের খুঁটি, পাতার ছাউনি দিয়ে বানানো হয় খেলাঘর। ঘর লেপা, চুলা তৈরি, খুদ দিয়ে ভাত রান্না, ধুলোকে চিনি বা লবণ আর গাছের বড় পাতাকে ব্যাবহার করা হয় বাসন হিসেবে। কেউ কেউ আশেপাশের ঝোপঝাড়ে যায় বাজার করতে। রকমারি কাল্পনিক কেনাকাটা করে নিয়ে আসে। সেখানে থাকে মাছ-মাংস থেকে সব রকমের তরকারি। মেলা থেকে কেনা টিনের বটি দিয়ে চলে তরি-তরকারি কাটার কাজ। খেলনা চুলো না থাকলে তিনটে ইটের টুকরো বা ঢেলা দিয়ে বানানো হয় চুলা। সেই চুলায় ফু দিয়ে-দিয়ে আগুন জ্বলানো হয়। আগুনের ধোঁয়ার চোখ হয়ে যায় লাল। সবটাই অভিনয়। কিন্তু দেখলে মনে হবে বাস্তব সংসারেই ঘটে চলছে এসব। মুখ দিয়ে শব্দ করে পাতার থালায় চলে খাওয়ার পর্ব। এ সময় এক অনাবিল আনন্দে ভরে থাকে বাচ্চাদের মুখ।
এক্কাদোক্কা/চাড়া
এক্কাদোক্কা/চাড়া আমাদের দেশের মেয়েদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি খেলা। ভাঙ্গা মাটির হাড়ি বা কলসির টুকরা দিয়ে চাড়া বা ঘুটি বানিয়ে বাড়ির উঠানে কিম্বা খোলা জায়গায় আয়তাকার দাগ কেটে খেলা হয় এক্কাদোক্কা/চাড়া। ঘরের মধ্যে আড়াআড়ি দাগ টেনে তৈরি করা হয় আরো ছয়টি খোপ।বেশ সরল নিয়মের এই খেলাটি একা একাই খেলা যায়। আবার বন্ধুরা মিলে এক্কাদোক্কার প্রতিযোগিতাও করা যায়। এক এক করে প্রতিটি ঘরে চাড়া ছুড়ে এবং এক পায়ে লাফ দিয়ে দাগ পার হয়ে ওই চাড়া পায়ের আঙ্গুলের টোকায় ঘরের বাইরে আনতে হয়। আঙ্গুলের টোকায় চাড়াটি কোন দাগের উপর পড়লে কিম্বা দুই পাশের রেখা পার হয়ে গেলে খেলোয়াড় দান হারায়। তখন দান পায় দ্বিতীয় জন। এভাবে যে সব ঘর পার হয়ে আসতে পারে সে-ই এক্কাদোক্কায় জিতে যায়।
অঞ্চলভেদে এক্কাদোক্কার নিয়মে কিছু কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন মুখ উপরের দিকে তুলে চাড়াটি কপালে রেখে ঘর অতিক্রম করা, দাগে পা পড়লে দান বাদ হওয়া ইত্যাদি। কোথাও আবার শেষ ঘরটি পার হওয়ার সময় না ঘুরে চাড়াটি ছুড়ে মারা হয়।
খেলাটি এখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। গ্রামাঞ্চলে ও মফস্বল এলাকায় এখনো মেয়েদের এক্কাদোক্কা খেলতে দেখা যায়।
ওপেনটি বায়োস্কোপ
মেয়েদের আরেকটি প্রিয় খেলা – ওপেনটি বায়োস্কোপ। ওপেনটি বায়োস্কোপ / নাইন টেন টুইস্কোপ / সুলতানা বিবিয়ানা / সাহেব বাবুর বৈঠকখানা / রাজবাড়িতে যেতে পান সুপারি খেতে/ পানের আগায় মরিচ বাটা/ স্প্রিংয়ের চাবি আঁটা/ … এমনি মজার ছড়া আওড়াতে হয় খেলাটির সময়।
এ খেলাতে দুটি মেয়ে মুখোমুখি অল্প দুরত্বে দাঁড়িয়ে পরষ্পরের হাত দুটো ধরে উঁচু করে রাখে যাতে মনে হয় একটা দরেরাজা তৈরি হয়েছে। তাদের তৈরি দরোজার মাঝ দিয়ে অন্যেরা লাইন ধরে চক্রাকারে ঘুরতে পারে। এসময় সবাই মিলে সুরে সুরে আবৃত্তি করতে থাকে ওপেনটি বায়োস্কোপের ছড়াটি। ছড়ার শেষ লাইনের (আমার নাম জাদুমণি/যেতে হবে অনেকখানি, অথবা যার নাম বেনুমালা/তারে দিব মুক্তারমালা ) শেষ শব্দটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে দরোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকা ওই মেয়ে দুটি তাদের হাত নামিয়ে সবচেয়ে কাছের মেয়েকে ধরে ফেললে সবাই মিলে তাকে ওপরে তুলে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। এভাবেই শেষ হয় ওপেনটি বায়োস্কোপ।
এলাটিং বেলাটিং
নামটি শুনেই বোঝা যায় বেশ মজার খেলা এলাটিং বেলাটিং। খেলার শুরুতেই মেয়েরা মাটিতে আঁকা একটি রেখার দুই দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে একদল দুই কদম এগিয়ে ছড়ার প্রথম লাইন ‘এলাটিং বেলাটিং’ বলে আবার পিছনে সরে দাঁড়ায়। একই ভাবে দ্বিতীয় দল আবার সামনে এগিয়ে এসে ‘কি খবর আইল’ বলে পাল্টা চরণ বলে। এভাবেই কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে খেলাটি চলতে থাকে। ছড়ার শেষ লাইন ‘নিয়ে যাও বালিকারে’ বলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় পক্ষের একটি মেয়েকে ধরে টেনে নিজেদের দলে নেয়ার চেষ্টা করে। তাকে ধরে রাখতে বা টেনে নিতে পারলে প্রথমবারের খেলা শেষ হয়। হৈ-চৈ আর আনন্দে খেলা চলে এলাটিং বেলাটিং।
এই খেলায় অতীতে দাস হিসেবে নারীদের বিক্রি করা কিম্বা নারী অপহরণের ছবি ফুটে ওঠে।
গুটি খেলা
মেয়েদের আরেকটি প্রিয় খেলার নাম গুটি খেলা। ষোলগুটি বা ছত্রিশগুটি নামে ছক কেটে ছেলেরা যে খেলা করে এটি ঠিক সেরকম খেলা নয়। দেশের বহু অঞ্চলে এটি ‘কুত্তা খেলা’ নামেও পরিচিত। সাধারণত দশ-বারো বছরের মেয়েরা এই খেলাটি খেলে। ইট বা পাথড়ের পাঁচটি গোল টুকরা নিয়ে খেলতে হয় এটি।শুরুতে গুটিগুলোকে মাটিতে ছড়িয়ে ফেলতে হয়। তারপর মাটিতে ছড়ানো গুটিগুলো থেকে একটি হাতে নিয়ে তা উপরে ছুড়ে দেয়। ছুড়ে দেয়া গুটিটি মাটিতে পড়ার আগেই ওই গুটি সহ মাটিতে ছড়ানো এক বা একাধিক গুটি হাতে তুলতে হয়।মাটি থেকে ছড়ানো গুটি খুঁটে খুঁটে তুলতে হয় বলে অনেক অঞ্চলে একে ‘খোটাখুটি’ খেলাও বলা হয়। কুত্তা বা খোটাখুটি খেলার সময় ছড়া ব্যবহৃত হয়। মেয়েরা গুটি মাটিতে ছড়িয়ে দেবার সময় এবং একটি-একটি করে গুটি মাটি থেকে তোলার সময় ছড়া আবৃত্তি করে। দেখলে বোঝা যায়, খেলার সঙ্গে ছড়ার মধুর সম্পর্ক রয়েছে। তাই ছড়া আবৃত্তি না করলে খেলাটি মোটেই জমেনা।খেলাটি একাই, দোলাই, তিনাই, চারাই ও পাঁচাই বা পঞ্চম – এই পাঁচটি স-রে বিভক্ত। প্রথম পর্বে একটি করে ছড়ানো গুটি তোলা হয়। এরপর দুটি করে। এভাবে গুটি খেলা একাই থেকে শুরু হয়ে পঞ্চমে গিয়ে শেষ হয়। মনোযোগ ও হাতের ক্ষিপ্রতার উপর নির্ভর করে এ খেলার জয় পরাজয়। অল্প পরিসরে এক জায়গায় বসেই খেলা বলে বর্ষা-বাদলের দিনে গুটি খেলা মেয়েদের অবসরযাপন ও বিনোদনের সুযোগ এনে দেয়।
এতক্ষণ যেসব খেলার কথা বললাম এগুলো সাধারণত মেয়েরা খেলে থাকে। তেমনি কেবল ছেলেদের জন্যেও রয়েছে কিছু মজার খেলা। ঘুড়ি ওড়ানো, ডাঙ্গুলি, গাইগোদানি, দে পাখাল, ঝাপ্পুরি, হোলডুগ ইত্যাদি বেশিরভাগ জায়গায় ছেলেদেরই খেলতে দেখা যায়। এসো জেনে নিই এসব খেলার অল্প-স্বল্প বৃত্তান্ত।
হাডুডু বা কাবাডি
১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে সমাদৃত হয়েছে যে খেলাটি তার নাম হাডুডু। গ্রামবাংলার সব অঞ্চলেই জনপ্রিয় এই খেলাটি সাফ গেমসেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সেখানে এই খেলাটির নাম অবশ্য কাবাডি। হাডুডু বা কাবাডি কেবল আমাদের দেশের প্রচলিত খেলাই নয় বরং পুরো উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় খেলা হাডুডু। প্রত্যেক দলে ৮ থেকে ১০ জন করে মোট দুটি দল খেলায় প্রতিযোগিতা করে। আয়তকার কোর্টের মাপ হয় দৈর্ঘ্যে সাড়ে ১২ মিটার এবং প্রস্তে ১০ মিটার। হাডুডু খেলায় ছুঁয়ে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর দমও থাকতে হয়। প্রত্যেক দলের খেলোয়াড় একজনের পর আরেকজন একদমে ‘ডুগ-ডুগ’ বা ‘কাবাডি কাবাডি’ বলতে বলতে বিপক্ষ দলের সীমানায় ঢুকে যদি প্রতিপক্ষের কাউকে ছুঁয়ে যদি বের হয়ে আসতে পারে তবে সেই দল যেমন পয়েন্ট পায়, তেমনি অপর দলের ছোঁয়া খেলোয়াড়টি খেলা থেকেই বাদ পড়ে। অন্যদিকে বিপক্ষ দলকে ছোঁয়ার জন্যে ঢুকে সে যদি ধরা পড়ে ধস্তাধস্তি করেও নিজের সীমানায় ফিরতে না পারে তবে সে মারা পড়ে এবং খেলা থেকে বাদ পড়ে। আর এভাবেই একপক্ষ আরেকপক্ষের কতজনকে ছুঁয়ে বা ধরে ফেলে বাদ দিতে পারে তার উপরেই নির্ভর করে খেলার জয়-পরাজয়।
বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা, জাতীয় যুব কাবাডি প্রতিযোগিতা, প্রিমিয়ার কাবাডি, প্রথম বিভাগ কাবাডি লীগ, দ্বিতীয় বিভাগ কাবাডি লীগ, স্বাধীনতা দিবস কাবাডি প্রতিযোগিতা, বৈশাখি কাবাডি মেলা, কিশোর কাবাডি প্রতিযোগিতা, স্কুল কাবাডি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সাল থেকে আন্ত:স্কুল প্রতিযোগিতায় কাবাডির অন্তর্ভূক্তি বাধ্যতামূলক করেছে।
ঘুড়ি উড়ানো
ঘুড়ি বা আঞ্চলিক ভাষায় গুড্ডি কেবল আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় খেলা। চীন, জাপানসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে বিচিত্র ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। আমোদ-প্রমোদের খেলা হিসেবে এটি এখনও শীর্ষ স্থানীয়। গ্রামাঞ্চলে একে গুড্ডি খেলা বলে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান-পাট লাগানোর পর কৃষকরা যখন অবসর থাকে, তখন ঘুড়ি উড়ানোর ধুম পড়ে যায়। লাল-নীল, সাদা-কালো, সবুজ-হলুদ, বেগুনি কাগজের ঘুড়িতে তখন ছেয়ে যায় আকাশ। বিস্তৃত আকাশের পটে সে দৃশ্য যে কত সুন্দর তা ভাষায় বর্ণনা করা যায়না। পুরুষ-মহিলা, ছেলে-বুড়ো সকলেই আনন্দের সাথে আকাশে তাকিয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করে।
কখনো রঙ মাখানো মাঞ্জা সুতো, কখনো বিনা রঙের সুতো দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। ডিমের কুসুম, সাবু সিদ্ধ, ভাতের ফ্যান, অ্যারারুট (কাপড়ের মাড় দিতে ব্যবহৃত হয়), গাবসিদ্ধ, তেঁতুল-বিচি সিদ্ধ, বালি ইত্যাদির সঙ্গে কাঁচের মিহি গুড়ো মিশিয়ে দেয়া হয় সরু, চিকন ও মোটা সুতায়।একজনের ঘুড়ির সুতো দিয়ে অন্যের ঘুড়ির সুতোয় প্যাঁচ লাগিয়ে কেটে দেয়া এই গুড্ডি খেলার একটি আকর্ষণীয় বিষয়। আর এই উদ্দেশ্যেই ঘুড়ির মালিকরা কাঁচ মিহি গুড়ো করে, আঠায় মিশিয়ে সুতোয় লাগায়। যার সুতার ধার বেশি সে সারাক্ষণ অন্যের গুড্ডির সাথে প্যাঁচ খেলে ঘুড়ির সুতা কেটে দেয়। এই সুতা-কাটা ঘুড়িগুলো বাতাসে ভাসতে ভাসতে চার-পাঁচ মাইল দুরেও চলে যায়। আর সেই সুতা-কাটা ঘুড়ি ধরারা জন্য বাচ্চা ছেলে থেকে বুড়োরা অব্দি মাইলের পর মাইল দৌঁড়ায়। বলার অপেক্ষা রাখেনা, এ ধরণের ঘুড়ি যে ধরতে পারে সেটা তারই হয়। সব সুতো কাটা ঘুড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়না। কোন ঘুড়ি বিলের পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে, কোনটি গাছ বা খুঁটির আগায় বেঁধে ছিঁড়ে যায়। কিন্তু এমন ঘুড়ি উদ্ধারের জন্য শিশু-কিশোরদের চেষ্টার অন্ত থাকে না।
ঘুড়ি খেলা প্রথম কোথায় আবিষ্কৃত হয় তাএখনো ঠিক জানা যায়নি। অনেকে মনে করেন চীনদেশে প্রথম ঘুড়ি খেলা চালু হয়। কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও হামামটসের শহরে ঘুড়ি খেলা উপলক্ষ্যে জাতীয় ছুটি উদযাপিত হয় খেলা আরম্ভের প্রথম দিনটিতে। আমাদের দেশে এখনও এই খেলার চল উঠে যায়নি, তবে আগের চেয়ে কম হারে ঘুড়ি উড়ানো হয়।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা ধরনের ঘুড়ির প্রচলন দেখা যায়। এগুলোর আকৃতি ও বানানোর কৌশল একটি আরেকটির থেকে সমপূর্ণ আলাদা। কোনটিতে লেজ থাকে, কোনটি লেজ ছাড়া। আমাদের দেশে সচরাচর যে সব ঘুড়ি দেখা যায় সেগুলো হলো – চং গুড্ডি, পতিনা গুড্ডি, নেংটা গুড্ডি, শকুনি গুড্ডি, ফেইচকা গুড্ডি, সাপ গুড্ডি, ডোল গুড্ডি, ডোল গুড্ডি, মানুষ গুড্ডি ইত্যাদি।
দাড়িয়াবান্ধা
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডুর মতোই সকল অঞ্চলের আরেকটি জনপ্রিয় খেলা দাড়িয়াবান্ধা। কেবল অল্প বয়েসি ছেলে-মেয়েরাই নয় এতে অংশ নিতে পারে বড়রাও। ছক বাধা ঘর দাড়িয়াবান্ধার আসল বৈশিষ্ট্য। খেলা হয় দুটি দলের মধ্যে। প্রত্যেক দলে ৫/৬ থেকে শুরু করে ৮/৯ জন পর্যন্ত খেলোয়াড় থাকে। খেলা শুরুর আগেই মাটির উপর দাগ কেটে ঘরের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। খেলায় ঘরের সীমানার বাধ্যবাধকতা থাকায়, দ্রুত দৌড়ের চেয়ে কৌশল ও প্যাঁচের কসরত জানতে হয় বেশি।
এবার চলো জেনে নিই কিভাবে খেলবে দাড়িয়াবান্ধা। ১ নম্বর ঘরকে কোন কোন অঞ্চলে বদন ঘর, ফুল ঘর বা গদি ঘর বলে। ২ নম্বর ঘরটি লবণ ঘর বা পাকা ঘর নামে বা নুন কোট পরিচিত। ঘরগুলোর মাঝ বরাবর যে লম্বা দাগটি থাকে তাকে কোথাও বলে দৌড়েছি, আবার কোথাও বলে শিড়দাড়া বা খাড়াকোট। আর প্রস্ত বরাবর রেখাগুলোকে বলে পাতাইল কোট। দাড়িয়াবান্ধা খেলার জন্য প্রয়োজন সমতল জমি যেখানে কোদাল দিয়ে কেটে কিম্বা চুন দিয়ে দাগ দিয়ে নিতে হয়।
সমান্তরাল রেখার মধ্যে অন্তত এক হাত জায়গা থাকতে হবে যাতে যে-কোন খেলোয়াড় এই জায়গা দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। যাতায়াত করার সময় দাগে যাতে পা না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। অন্য ঘরগুলোতেও খেলোয়াড়ের দাড়ানোর জন্য কমপক্ষে এক হাত পরিমাণ জায়গার লাইন থাকবে। দাগে কারোই পা পড়া চলবে না।খেলার শুরুতে গদি ঘরে একদলের খেলোয়াড়রা অবস্থান নেয়। অন্যেরা প্রতিঘরের সঙ্গে অঙ্কিত লম্বরেখা বরাবর দাঁড়ায়। যেহেতু এই খেলায় ছোঁয়াছুয়ির ব্যাপার আছে, সেজন্যে কোন খেলোয়াড় যদি ছোঁয়া বাঁচিয়ে সব ঘর ঘুরে এসে আবার গদি ঘরে ফিরতে পারে তবে সে এক পয়েন্ট পায়। একদল প্রথমে খেলার সুযোগ পায়, সেই সুযোগকে বলে ঘাই। পয়েন্ট পেলে ঘাই তাদের দখলে থাকে। তবে সব ঘর ঘুরে আসার সময় বিপক্ষের কোন খেলোয়াড় যদি ছুঁয়ে ফেলে তবে পুরো দলই ঘাই হারায়। এভাবে চলতে থাকে খেলা।
সবাই সব ঘর ঘুরে আসার উপর নির্ভর করে খেলার ফলাফল। একজনের অসতর্কতা বা অক্ষমতা পুরো দলকেই ঘাই হারিয়ে বিপক্ষ দলের ভূমিকায় নামায়।
ডাঙ্গুলি
বাংলাদেশের সব জায়গাতেই অল্প বয়সি ছেলেদের জনপ্রিয় এই খেলাটি অঞ্চলভেদে ‘ডাংবাড়ি’, ‘গুটবাড়ি’, ‘ট্যামডাং’, ‘ভ্যাটাডান্ডা’ ইত্যাদি নামে পরিচিত। তবে ডাঙ্গুলি নামেই এটি বেশি পরিচিত। আদতে ডাঙ্গুলি এখনকার জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের গ্রাম্য সংষ্করণ। ক্রিকেটের ব্যাট ও বলের মতো ডাঙ্গুলিতে আছে ডান্ডা ও গুলি। আরও মজার ব্যাপার যেটি তা হল, এখানেও ক্যাচ ধরা বা ডান্ডায় আঘাত করে আউট করার নিয়ম আছে। দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে ভাগ হয়ে খেলতে পারে। খেলার উপকরণ প্রায় দেড় হাত লম্বা একটি লাঠি, একে বলে ডান্ডা। আরও লাগে তিন-চার ইঞ্চি সমান একটি শক্ত কাঠি যা ‘গুলি’, ‘ফুলুক’ বা ‘ফুত্তি’ নামে পরিচিত।খোলা মাঠে একটি ছোট্ট গর্ত করা হয় শুরুতেই। প্রথম দান পায় যে দল তাদের একজন গর্তের উপর ছোট কাঠিটি রেখে বড় লাঠির আগা দিয়ে সেটিকে যতদুর সম্ভব দুরে ছুঁড়ে মারে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা চারদিকে দাঁড়িয়ে সেটিকে লুফে নেওয়ার চেষ্টা করে। ধরতে পারলেই খেলোয়াড় আউট। অন্যথায়, খেলোয়াড় বড় লাঠিটিকে আড়াআড়ি ভাবে রাখে। অপরপক্ষ, ছোটকাঠিটি যে জায়গায় পড়েছে সেখান থেকে ছুঁড়ে মারে গর্তের দিকে। কাঠিটি যদি বড় লাঠিটিকে আঘাত করে তবে প্রথম খেলোয়াড় আউট হয়ে যায়। তা না হলে প্রথম খেলোয়াড় পড়ে থাকা কাঠির কাছে গিয়ে বড় লাঠি দিয়ে বিশেষ কায়দায় আঘাত করে সেটিকে শূন্যে তোলে। শূন্যে থাকা অবস্থায় বড় লাঠি দিয়ে আঘাত করে দুরে পাঠিয়ে দেয়। আগের মতোই অন্যেরা সেটা ক্যাচ ধরে আউট করার চেষ্টা করে ওই ক্রিকেটের নিয়মে। কেউ আউট না হলে প্রথম খেলোয়াড় বড় লাঠিটি গর্তের উপর রাখে আড়াআড়ি ভাবে। দুর থেকে অপরপক্ষ কাঠিটি ছুঁড়ে যদি বড় লাঠিকে আঘাত করতে পারে, তাহলেও মূল খেলোয়াড় আউট।
দ্বিতীয় দফায় যেখানে পড়লো ছোট কাঠিটি সেখান থেকে গর্তের দুরত্ব মাপা হয় লম্বা লাঠিটি দিয়ে – মুনা, ধুনা, তিনা, চারা, পাঁচা, ছৈ, গৈ। এভাবে কয়-লাঠি গোনা হলো এবং প্রতিপক্ষের খেলার সময় ও দুজনের গোনাগুনতির পরিমাণের ওপরই নির্ভর করে খেলার জয় পরাজয়।
গাইগোদানি/কডদু : রাখাল ছেলেরা মাঠে গরু-ছাগল চড়ায় আর অবসরে খেলে গাইগোদানি।মেঘনা উপজেলায় অঞ্চলে খেলাটি কডদু নামে পরিচিত। ঘাস কাটার পাচুন এই খেলার উপকরণ। ভেজা এটেল মাটিতে এ খেলা জমে ভালো।
চার-পাঁচজন মিলে খেলা যায় গাইগোদানি। টসে যে হারে সে তার লাঠি মাটির উপর ছুড়ে শক্ত করে পুঁতে দেয়। আরেকজন তার লাঠি সেখানে এমনভাবে পোঁতার চেষ্টা করে যাতে আগেরটি আঘাত খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় অথব পরষ্পর গা ছুঁয়ে দাঁড়ায়। এতে সফল হলে লাঠিটি তার দখলে আসে। আর ব্যর্থ হলে প্রথম ছেলেটি আগের মতো খেলে দ্বিতীয়জনের লাঠিকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে। যে জয়ী হয় লাঠি দুটো নিয়ে তৃতীয় ছেলের সঙ্গে খেলে তারটিও দখলে আনার চেষ্টা করে।
এভাবে সবগুলো লাঠি একজনের আয়ত্তে এলে জয়ী খেলোয়াড় একে একে সবগুলো লাঠি দুরে ছুঁড়ে দেয়, শেষ লাঠি ছোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেরা নিজ নিজ লাঠির খোঁজে ছুটে যায়। এই ফাঁকে বিজয়ী তার লাঠিটি সুবিধামতো জায়গায় লুকিয়ে রাখে। অন্য ছেলেরা ফিরে এসে তা খুঁজে বের করে এবং নিজের লাঠি দিয়ে ষ্পর্শ করে। যে সবার শেষে লাঠিটাকে ষ্পর্শ করবে তাকেই লাঠিটা মালিকের কাছে বয়ে আনতে হবে। পরে সে ‘গাই’ বা পরাজিত প্রতিযোগী হিসেবে নিজের লাঠি পুঁতে আগের মতো খেলা শুরু করে।
পানিঝুপ্পা
গ্রাম বাংলায় পানি ঝুপ্পা বা ব্যাঙ লাফানো খেলা সাধারনত ছেলেরাই খেলে। পানিতে না নেমেই খেলা যায় এই খেলাটি। এটি খেলতে দরকার শান- পুকুর বা মরা নদী বা খাল-বিল। পাতলা চ্যাপ্টা মাটির টুকরা, ভাঙা হাড়ির চাড়া বা খোলামকুচি ডাঙা থেকে থেকে হাতের কৌশলে পানির ওপর ছুঁড়ে মারা হয়। চাড়াটি ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে গিয়ে ডুবে যায়। কয়েকজন মিলে প্রতিযোগিতা না করে খেললে খেলাটি জমে না। পানির ওপর দিয়ে চাড়াটি ছুটে যাবার সময় কতোবার লাফ দিল এবং কতো দূরে গেল, তার ওপরই নির্ধারিত হয় হারজিৎ।
পানি ঝুপ্পা বা ব্যাঙ লাফানোর খেলাতেও ছড়ার ব্যবহার দেখা যায়। ছড়াটি বলা হয় ব্যাঙ লাফানোর মেয়াদ পর্যন্ত।
কানামাছি
কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছো। ছড়াটি নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে একেবারে অপরিচিত নয়! হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ, এখন বলছি, কানামাছি খেলার কথা। এ খেলায় কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে দেয়া হয়, সে অন্য বন্ধুদের ধরতে চেষ্টা করে। যার চোখ বাঁধা হয় সে হয় ‘কানা’, অন্যরা ‘মাছি’র মতো তার চারদিক ঘিরে কানামাছি ছড়া বলতে বলতে তার গায়ে টোকা দেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় সে অন্যদের ধরার চেষ্টা করে। সে যদি কাউকে ধরতে পারে এবং বলতে পারে তার নাম তবে ধৃত ব্যাক্তিকে কানামাছি সাজতে হয়।
গোলাপ-টগর
গোলাপ-টগর কোথাও ফুলটোক্কা, বউরাণী আবার কোথাও টুকাটুকি নামে পরিচিত। অল্পবয়েসি ছেলেমেয়েরা সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে দুই দলে ভাগ হয়। দলের প্রধান দুইজনকে বলে রাজা। খেলার শুরুতে রাজা ফুল-ফলের নামে নিজ দলের সদস্যদের নাম ঠিক করে দেয়। তারপর সে বিপক্ষ দলের যেকোন একজনের চোখ হাত দিয়ে বন্ধ করে, ‘আয়রে আমার গোলাপ ফুল, বা আয়রে আমার টগর ফুল’ ইত্যাদি নামে ডাক দেয়। সে তখন চুপিসারে এসে চোখবন্ধ যার তার কপালে মৃদু টোকা দিয়ে নিজ অবস্থানে ফিরে যায়। এরপর চোখ খুলে দিলে ওই খেলোয়াড় যে টোকা দিয়ে গেল তাকে সনাক্ত করার চেষ্টা করে।সফল হলে সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এবার বিপক্ষের রাজা একই নিয়েম অনুসরণ করে। এভাবে লাফ দিয়ে মধ্যবর্তী সীমা অতিক্রম করে প্রতিপক্ষের জমি দখল না করা পর্যন্ত খেলা চলতে থাকে।
রুমাল চুরি
সব বন্ধুরা মিলে গোল হয়ে বসে খেলতে হয় এই খেলাটি। প্রথমে একজন ‘চোর’ হয়, অন্যেরা কেন্দ্রের দিকে মুখ করে গোল হয়ে বসে। চোর হাতে রুমাল নিয়ে চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে সুবিধামতো একজনের পেছনে অলক্ষ্যে সেটা রেখে দেয়। সে টের না পেলে চোর ঠিক পিছনে এক পাক ঘুরে এসে তার পিঠে কিল-চাপড় দেয়। আগে টের পেয়ে গেলে কিম্বা পরে মার খেয়ে রুমাল নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এবার সে হয় চোর আর তার শুন্য জায়গায় বসে পড়ে আগের খেলোয়াড়।
সান নিউজ/এসএম