কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার মিরপুরে আহত অবস্থায় বিলুপ্ত প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। পরে এ বন্য প্রাণীটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে প্রাণীটি উপজেলা বন কর্মকর্তার হেফাজতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় বোরো ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক
স্থানীয় সিংপুর গ্রামের কৃষক উসমান গণি বলেন, আমার লিচু বাগানে বিরল প্রজাতির একটা প্রাণী দেখতে পাই। পরে সেটিকে নিয়ে আসা হলে স্থানীয়রা জানায় এটি বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল। পরে প্রাণীটিকে স্থানীয় এক শিক্ষকের হাতে তুলে দেয়া হয়।
মিরপুর ইংলিশ ভার্সন স্কুলের (মেভস) অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মজিবুল হক বলেন, রোববার রাতে আমরা মোটরসাইকেল যোগে পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা থেকে ফেরার পথে মিরপুর উপজেলার সিংপুর গ্রামের মধ্যে মানুষের একটি জটলা দেখতে পাই। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল একটি বাঁশের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।
পরে আহত গন্ধগোকুলটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এটি উপজেলা বন কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বন্য এ প্রাণীটি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তার পা দুটি বেঁধে রাখার কারণে পেছনের দুই পা দিয়ে চলাফেরা করতে পারছে না।
আরও পড়ুন: শুকনো মরিচ চরের মানুষের লাল সোনা
মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এস এম মাহমুদুল হক বলেন, সোমবার সকালে আহত অবস্থায় বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল নিয়ে আসা হয়। পরে প্রাণীটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার পেছনের দুটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা সহকারী বন কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, মিরপুরে বিলুপ্ত প্রজাতির ছোট একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকালে বিলুপ্ত প্রজাতির এ বন্য প্রাণীটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এর আগে রোববার রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে ধুবইল ইউনিয়নের সিংপুর নামক স্থান থেকে উৎসুক জনতার হাত থেকে গন্ধগোকুলটি আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে বোরোর ন্যায্য দাম নিয়ে সংশয়
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে এ বন কর্মকর্তা বলেন, গন্ধগোকুলটি ফল খাওয়ার জন্য লিচু বাগানে গেলে লিচু বাগানের জালে আটকে যায়। পরে সোমবার সকালে গন্ধগোকুলটি উপজেলা বন অধিদফতরের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
প্রাণীটিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রাণীটি সুস্থ হলে এটি উপজেলা চত্বরে লিচু বাগানে অবমুক্ত করা হবে।
মিরপুর উপজেলা সহকারী বন কর্মকর্তা জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন তফসীল-১ ভুক্ত সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী আইউসিএন’র তথ্য অনুযায়ী বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে গন্ধগোকুল অন্যতম।
জানা গেছে, স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল বর্তমানে সংরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরোনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুঁই-সুতোয় তাসলিমার রঙিন দিন
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এ প্রাণীটি। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
গন্ধগোকুল নিশাচর। খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে। দিনের বেলা বড় কোনো গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, লেজটি ঝুলে থাকে নিচের দিকে। মূলত ফ লখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম, বাচ্চা, পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়।
অন্য খাদ্যের অভাবে মুরগি, কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। ধূসর রঙের এ প্রাণীটির অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
পোলাও চালের মতো তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। একসময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে কৃত্রিম বিকল্প সুগন্ধি তৈরি হয়।
সান নিউজ/এনজে