গাইবান্ধা প্রতিনিধি: কৃষকের সোনালি ধান তুলে আনা হচ্ছে আঙিনায়। খুশিতে আনন্দের হিল্লোল কৃষকের মনে। ধানের ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার উৎসবের কথায় বলছি। গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন: আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
প্রায় সব চাষির বাড়ির আঙিনাতেই ধানের স্তূপ। গ্রাম কিংবা শহরের বেশির ভাগ এলাকা পাকা ধানের মহু-মহু সুগন্ধে মেতে উঠেছে। চাষি পরিবারের সদস্যরা মহাব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ ধান কাটছে, কেউ বা মাড়াইয়ে কাজে ব্যস্ত।
পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে ধান সেদ্ধ ও শুকাতে দিন-রাত কাজ করছে। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নেই নতুন ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষক।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেন, গাইবান্ধায় মৌসুমের শুরু থেকে এবার আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ, জাত নির্বাচন ও সময়মতো প্রয়োজনীয় সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগে প্রতি হেক্টর জমিতে বেড়েছে ধানের উৎপাদন।
আরও পড়ুন: ভারতে ৪র্থ দফার ভোটগ্রহণ শুরু
ফলে যেকোনো বছরের তুলনায় এবারের ভালো ফলন কৃষকের মনে বাড়তি আনন্দ জুগিয়েছে। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও নিবিড় পরিচর্যায় চলতি বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৮১, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ ও ব্রি-৯৮ জাতের ধান চাষ বেশি হয়েছে।
ইতিমধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেতের ধান কাটা শেষ হয়েছে। এ বছর জেলায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: এমভি আবদুল্লাহ বিকেল কুতুবদিয়ায় পৌঁছাবে
এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩০০, পলাশবাড়ীতে ১১ হাজার ৮০৫, সাদুল্লাপুরে ১৪ হাজার ৪০০, গোবিন্দগঞ্জে ৩১ হাজার ১০৫, ফুলছড়িতে ৮৩০০ এবং সাঘাটা উপজেলায় ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ হয়েছে।
গাইবান্ধায় এ বছর প্রায় ৮ লক্ষ ৬২ হাজার টন ধান ও ৬ লক্ষ টন চাল উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
চাষিরা বলেন, আল্লাহর রহমতে এ পর্যন্ত বড় ধরণের প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়নি। তারা সার, কীটনাশক সময়মতো পেয়েছেন। ধানে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছিল না বললেই চলে। এবার ফলন খুবই ভালো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিক্ষিপ্তভাবে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিঘা প্রতি ২০-২৩ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে গড়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। জাত ভেদে শুকনো ধান ৮৭৫-১১০০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান বিক্রয় করা হচ্ছে।
তবে হাইব্রিড জাতের ধান নিয়ে চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা। এসব ধান এখন সোনালি রং ধারণ করেছে। ধান কাটতে এখনো ২-৩ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
কালবৈশাখীর তাণ্ডব আর উজানের ঢলের পানিতে এসব ধানক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সরকার প্রতি মণ বোরো ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ১২৪০ টাকা। বর্তমান বাজারে আধা শুকনো প্রতি মণ চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা দরে। এ দামে কৃষকের লোকসানের শিকার হতে হয়।
আরও পড়ুন: বিক্ষিপ্তভাবে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা
এছাড়া কৃষক সরকার নির্ধারিত দাম কোনো দিনই পায় না বলে দাবি চাষিদের। ফলে ফলন ভালো হলেও বর্তমান বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ ধান কাটা হয়েছে।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রাকৃতিক তেমন কোনো দুর্বিপাক হয়নি। এজন্য এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই কৃষকদের ধান ঘরে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
সান নিউজ/এনজে