নিজস্ব প্রতিবেদক:
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘বিভিন্ন কারণে দেশ থেকে ৯৯ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৬০টি শকুন আছে। সরকার শকুনের বংশ ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।’ আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বন অধিদপ্তর আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন পরিবেশমন্ত্রী। গতকাল শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ অনলাইন সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী শকুনের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু দিন দিন এই উপকারী পাখিটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় এ শকুনকে বাঁচাতে গণসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার শকুন সংরক্ষণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এটি সফল করতে নিজ নিজ স্থান থেকে আমাদের সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
বক্তব্যের শুরুতে বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও শকুন সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘২০১০ সালে দেশব্যাপী শকুনের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশব্যাপী শকুনের খাদ্য প্রাণীর চিকিৎসায় কিটোটিফেন নিষিদ্ধকরণ বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।’
পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আরো জানান, ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশের দুটি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ১০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের শকুন রক্ষা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। এই কর্মপরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিয়েই শকুন সংরক্ষণে বর্তমানে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫ সালে শকুনের প্রজননকালীন বাড়তি খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ও সুন্দরবনে দুটি ফিডিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯৩টি হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যার পর পুনরায় প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছে।’
শাহাব উদ্দিন আরো বলেন, ‘শকুনের আবাসস্থলের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও শকুনের নিরাপদ এলাকার ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে শকুন সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দলগুলোর সহায়তায় মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের ফলে হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গায় ২০১৪ সালে শকুনের প্রজনন সফলতা ছিল ৪৪ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে আমি মনে করি।’
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনলাইন সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মো. বিল্লাল হোসেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, গ্লোবাল থ্রেটেন্ড স্পিসিজ অফিসার এবং রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব দ্য বার্ডসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ক্রিস বাউডেন, আন্তর্জাতিক পাখি গবেষক ড. এনাম উল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রকিবুল আমীন।