চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: সারি সারি করে রাখা হয়েছে পুরাতন ব্যাটারি। প্রায় অর্ধেক দামে কিনে নেয়া হয় অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানের পুরাতন ব্যাটারি। এরপর ব্যাটারিতে থাকা এ্যাসিড বের করে খুলে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পার্টস। আলাদা করা হচ্ছে প্লাস্টিক ও সীসা।
আরও পড়ুন: সাবেক এমপি মঞ্জুর বিশ্বাস মারা গেছেন
দিনে ব্যাটারি ভাঙ্গার কাজ করা হলেও রাতের অন্ধকারে তৈরি হয় সীসা। চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফসলী জমিতেই ভাঙ্গা হচ্ছে পুরাতন ব্যাটারি। সদর উপজেলার বেতবাড়িয়া এলাকায় অবৈধভাবে ফসলী জমিতে গড়ে উঠেছে সীসা তৈরির কারখানা। রাঁতের আঁধারে পুড়িয়ে তৈরী করা সীসায় থাকা বিভিন্ন পদার্থ বাতাসে মিশে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান, আমসহ বিভিন্ন ফসলের। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের নজর এড়াতে কাপড় ও ইট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে কারখানার আশপাশ। ব্যাটারি পুড়ানোর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত এ্যাসিড ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কোন অনুমোদন ছাড়াই ফসলী জমির মাঠে এমন স্পর্শকাতর পদার্থের কারখানা গড়ে তোলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তা বন্ধের দাবি স্থানীয় কৃষকদের।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে বাসচাপায় নিহত ২
স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা বলছেন, জনবসতিহীন এলাকা হওয়ায় নির্জনতার সুযোগে এই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, রাত গভীর হলেই পোড়ানো হয় হয় সীসা। এসব পোড়া ব্যাটারির নির্গত সীসা ও অন্যান্য পদার্থ পুনরায় ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে যখন ব্যাটারি জ্বালানো হয়, তখন আশপাশের ৩ কিলোমিটার জুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এমনকি ইতোমধ্যে আশেপাশের ফসলী জমিতে এ্যাসিড ছড়িয়ে পড়ছে।
কারখানার পাশেই ৮ বিঘা ফসলী জমি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারঘরিয় বাজারের ফয়সাল আহমেদের। তিনি বলেন, এটা স্থাপনের ফলে আমার আম পুড়ে গেছে। এমনকি আশেপাশের সকল জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ফসল নষ্ট হচ্ছে। তাদেরকে বলতে গেলে তারা বলছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করা আছে। তোমাদের যা ইচ্ছে করার করো।
আরও পড়ুন: বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামানের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠিত
শিবগঞ্জের নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের মর্দনা গ্রামের তরিকুল ইসলাম জানান, রাতের বেলা পুরানো ব্যাটারিতে আগুন দেয়া হয়। সেসময় বিশাল কুন্ডলী তৈরি হয়। ব্যাপক গন্ধযুক্ত ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠে বাতাস।
শুনলাম তারা এক বছরের জন্য চুক্তি করে এই ফসলী জমি নিয়েছে। এসব কাজ করতে থাকলে এই এলাকার সকল ফসলী জমি নষ্ট হয়ে যাবে। দ্রæত এই কারখানা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কৃষি জমিতে কোনধরনের কলকারখানা করা যাবে না। অথচ এখানে ব্যাটারির এ্যাসিড বের করা, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খোলা ও ব্যাটারি পোড়ানোর মতো কাজ করা হচ্ছে। নিজের ব্যবসায়ের স্বার্থে কৃষি জমি ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬
জানা যায়, পুরাতন ব্যাটারির এই কারখানায় এখানে দৈনিক ১০০-১৫০টি ব্যাটারির যন্ত্রাংশ খোলা ও আগুনে পোড়ানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, পুরাতন ব্যাটারিগুলো খুলে যন্ত্রাংশগুলো আলাদা আলাদা করা হয়। রাতে ব্যাটারি পুড়িয়ে তা থেকে বিশেষ পদার্থ তৈরি করা হয়। এ্যাসিডের বিষয়ে তিনি বলেন, আশেপাশেই গর্ত করে এ্যাসিডগুলো রাখা হয়। কিন্তু এর তেমন কোন ক্ষতি হয়না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, জেলায় এমন কোন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাছাড়া কৃষি জমির ক্ষতি করে এভাবে ব্যাটারির এ্যাসিডের কারখানা করতে দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। তা পরিবেশের জন্য যেমন মারাত্বক ক্ষতিকর, তেমনি ফসলের জন্যেও ভয়ংকর ক্ষতির কারন।
আরও পড়ুন: কোটি টাকার স্বর্ণ লুট, পুলিশ পেল পাউডার
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রওশন আলী বলেন, এখনও আমাদের কাছে কোন কৃষক বা স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করেননি। এরপরেও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গতবছরেও সদর উপজেলার বাবু ডাইং এলাকায় একই কারখানা স্থাপন করার পর স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা বন্ধ করে প্রশাসন।
সান নিউজ/এইচএন