সান নিউজ ডেস্কঃ
একটা প্রাচীন কথা আছে, ‘প্রকৃতির যখন যেটা দরকার সেটা প্রকৃতি নিজেই ব্যবস্থা করে নেয়।’
মনুষ্য দ্বারা সৃষ্ট দূষণ আর ধ্বংসে প্রকৃতি মাতা যেন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। আর তাই তো নিজের বিশ্রামের ব্যবস্থা নিজেই করে নিল। সারা বিশ্বে প্রকৃতি সৃষ্ট করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে পৃথিবীর মানুষ এখন ঘর বন্দি। আর মানুষের সকল অত্যাচার থেকে রেহাই পেয়ে প্রকৃতি যেন আবার পুনর্জন্ম নিয়েছে। বনাঞ্চলের দিকে তাকালেই বুঝা যায় প্রকৃতি যেন তার যৌবনের স্বমহিমায় ফিরেছে।
প্রকৃতি চাইলে কি করতে পারে সেটা আমাদেরকে যেন বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদেরকে যেন প্রকৃতির প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষা দিয়ে গেল এই মহামারী করোনাভাইরাস। তবে এ শিক্ষা করোনা পরবর্তী সময় পর্যন্ত আমরা ধরে রাখতে পারি কিনা সেটাই দেখার বিষয়। আর তাই এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই চলতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য টাইম ফর নেচার। অর্থাৎ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের এখনই সময়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,পৃথিবীব্যাপী মানুষের অতি প্রয়োজনীয়তা সব সময়ই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণে। কিন্তু প্রকৃতিবিদদের কথা মানুষ কানে না তুললেও করোনা মানুষের সেই অতি প্রয়োজনীতা কমিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করছে। আর এরই ফল হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঢাকার বাতাসে সিসার বিষ,এবং শব্দের দূষণ হ্রাস।
এবার পরিবেশ দিবসের আয়োজক দেশ কলম্বিয়া। জার্মানির সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে তারা। গত বছর ছিল চীন। সারা বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের ১০ শতাংশই রয়েছে কলম্বিয়াতে। অ্যামাজন এর একটি বড় অংশ রয়েছেই কলম্বিয়াতে। এই অ্যামাজনেই বছরের পর বছর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার বনভূমিতেও গত বছর বড় রকমের আগুনের সূত্রপাত হয়।
জাতিসংঘ বলছে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করাতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট হচ্ছে না আমরা এর মাধ্যমে আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছি। কোভিড আমাদের সেই শিক্ষা দিচ্ছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষা করলে শুধু খাদ্যেরই যোগান পাব না বরং ওষুধসহ নির্মল পানি এবং বাতাস পাব। যা মানুষের সুস্থতার বড় অনুষঙ্গ হতে পারে।
আয়োজক কলম্বিয়া বলছে, এখন তাদের দেশে প্রায় ১০ লাখ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় আর আসেনি। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করায় জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশও। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়াতে লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তর এলাকা। এতে মানুষ গৃহহীন হয়ে ভাসমান জীবন যাপন করছে। শুধু বাড়িই নয় মানুষ হারাচ্ছে ফসলের মাঠ এবং তার কাজের জায়গাও।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচকে (একিউআই) বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম স্থান থেকে সরে ৭৩ তমতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সূচকের মান জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে ছিল ৩০০ এর উপরে। যা শুধু অস্বাস্থ্যকর নয়, দুর্যোগের পর্যায়ে বলে মনে করতেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে এখন সেই সূচক নেমে এসেছে ৫০ এর নিচে। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫ এ।
এ বিষয়ে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, লকডাউনের কারণে যানবাহন কম, ইট ভাটা বন্ধ, কনস্ট্রাকশন কাজ বন্ধ থাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক কমে গেছে। আমরা এক সময় যেখানে মাত্রার দিক থেকে প্রথম স্থানে ছিলাম এখন তা বেশিরভাগ দিনই ১০০ এর নিচে থাকে। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে সেটি আরও কমে গেছে। এখন আমরা স্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছি।
অন্যদিকে করোনার প্রভাবে গত দু’মাস ধরে চিরায়ত শব্দ দূষণের যন্ত্রণার হাত থেকে অনেকটাই মুক্ত রাজধানীবাসী। তবে একটু একটু করে জীবনযাত্রা সচল হওয়াতে শব্দ দূষণ কিছুটা বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সাল থেকে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
সান নিউজ/ বি.এম.