আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আম্পানের পর এবার ভারতের মহারাষ্ট্র ও গুজরাট উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘নিসর্গ’। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভুগতে থাকা মুম্বাই একশ বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে। খবর এনডিটিভির
আরব সাগরে সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার (৩ জুন) দুপুরে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের উপকূলে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
মুম্বাই পুলিশ গত মধ্যরাত থেকেই শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে লোকজনকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে। মুম্বাই ভারতের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহর, ২ কোটি মানুষ থাকে এই শহরে। এটি ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী। শুধু মুম্বাইয়েই শনাক্ত হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী। ১৪০০ মানুষ মারা গেছে এই শহরে।
অপর দিকে, আরব সাগরের ধারের বিচে বা সৈকতে, প্রমিনেড বা পার্কে যাওয়া কাল দুপুর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরাবিয়ান সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে ধেয়ে আসছে একটি ঝড়। ঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিসর্গ’। 'নিসর্গ' ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছে বাংলাদেশ।
নিসর্গ আজ সকালেই একটি ভয়াবহ সাইক্লোনিক স্টর্ম বা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে উপকূলে আছড়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আজ দুপুর ১টা থেকে ৩টের মধ্যে মুম্বাইয়ের ১০০ কিলোমিটার দূরে আলিবাগের উপকূলে নিসর্গ আছড়ে পড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বুধবার সকালের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, মহারাষ্ট্রের আলিবাগ থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মুম্বাই থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং গুজরাটের সুরাত থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। সেই অনুযায়ী ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত জুড়ে। দুই রাজ্যের উপকূল এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বহু মানুষকে।
ওই দুই রাজের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ। বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গোয়া এবং মুম্বাইয়ে ডপলার ওয়েদার রেডার (ডিআরডব্লিউ)-এ নিরন্তর মনিটরিং করা হচ্ছে এই ঝড়।
হাওয়া অফিস বলেছে, ‘‘রেডারের মাধ্যমে বোঝা গিয়েছে যে নিসর্গর আই বা চোখ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার বিস্তৃত। গত এক ঘণ্টায় তার ব্যাস কমেছে। যার অর্থ আরও শক্তিশালী হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ। সেই কারণেই হাওয়ার গতিবেগ ৮৫-৯০, ৯০-১০০ এবং শেষে ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত বেড়েছে।’’ সূত্র আরও জানায়, উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় হাওয়ার গতিবেগ হতে পারে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এ ছাড়া সাড়ে ছ’ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে মুম্বাই-সহ গুজরাট, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন দিউ-এ। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথে এই চার রাজ্যই পড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়াবিদরা। এই দুই রাজ্য ও দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়ায় জারি হয়েছে ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা।
প্রসঙ্গত, ঠিক দু'সপ্তাহ আগেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বা সুপার সাইক্লোন আম্পান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সাগরদ্বীপ ঘেঁষে উপকূলে আঘাত হেনেছিল। ওই ঝড়ে রাজ্যের কলকাতা-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।