নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদপুর: ফরিদপুরের সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের একটি খালে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন রিয়াদ নামের এক যুবক। হঠাৎ তার জালে হলুদ রঙের একটি কচ্ছপ ধরা পড়ে। রোববার (২২ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে কচ্ছপটি ধরা পড়ে। খবর পেয়ে কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে ফরিদপুর জেলা সামাজিক বন বিভাগ।
ফরিদপুর বিভাগীয় সামাজিক বন কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী সংবাদমাধ্যমকে জানান, হলুদ রঙের ওই কচ্ছপটির ওজন দেড় কেজি। এটি পুরোপুরি হলুদ রঙের। প্রাণিটি হয়তো নতুন কোনো প্রজাতির।
তিনি বলেন, কচ্ছপটিতে আপাতত ফরিদপুর বন বিভাগের একটি জলাধারে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে কচ্ছপটি নতুন কোনো প্রজাতির কিনা সেটি জানতে একটি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রাণিটির ছবি পাঠানো হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলার কাছে।
তিনি জানান, প্রাণিটি দেখে অ্যালবিনো সুন্দি কাছিম বা albino Indian flapshell turtle বলেই মনে হচ্ছে। অ্যালবিনিজম হলো প্রাণীর বংশগতিজনিত পরিবর্তন/ত্রুটি যা চোখ, ত্বক বা চামড়া, কাছিম বা কচ্ছপের খোলসের স্বাভাবিক রংকে বিবর্ণ বা অন্য রঙে বদলে দেয়। অ্যালবিনিজমে আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে টাইরোসিন নামে একটি এনজাইমের অনুপস্থিতির কারণে ত্বকে এ ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এ রকম হলুদ রঙের একটি কাছিম পাওয়া গিয়েছিল। যেটিকে প্রথমে নতুন প্রজাতি বলে মনে করা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, সেটি আসলে অ্যানবিনিজমে আক্রান্ত সুন্দি কাছিম। ফরিদপুরে প্রাপ্ত কাছিমটিকেও অ্যালবিনিজমে আক্রান্ত সুন্দি কাছিম বলে মনে হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করার আগে প্রাণীটির আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
জোহরা মিলা বলেন, তবে একটি বিষয় বলা প্রয়োজন যে, অ্যানবিনিজমে আক্রান্ত প্রাণীর দেখা পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। কেননা অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের প্রাণীরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মারা পড়ে। মূলত ভিন্ন রঙের হওয়ার কারণে অ্যানবিনিজমে আক্রান্ত প্রাণীরা শিকারি বা বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তাই স্বাভাবিক রঙের প্রাণীদের চেয়ে অ্যানবিনিজমে আক্রান্ত প্রাণীদের জীবনের ঝুঁকিও বেশি।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) রেড লিস্ট গ্রন্থে সুন্দি কাছিমকে কম উদ্বেগের (least concern) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাণীটি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-২ অনুযায়ী সংরক্ষিত।
সান নিউজ/এফএআর