নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার মারাত্মক দূষিত মাটিতে বসবাসকারী শিশুদের রক্ত থেকে সিসার পরিমাণ কমাতে সাধারণ ‘সয়েল রিমেডিয়েশন’ বা মাটি বিশুদ্ধকরণের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা এলসিভিয়ারের বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রকাশনার গ্রন্থপঞ্জি ডেটা বেইসের ওয়েবসাইট সায়েন্স ডিরেক্টে প্রকাশিত আর্টিকেলে বলা হয়েছে, মাটি থেকে সিসা দূর করতে পারলে অনেক শিশু মারাত্মক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবির করা এই গবেষণায় বলা হয়েছে, রক্তে সিসার উপস্থিতি মানব শরীরের প্রতিটি সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি মস্তিষ্কের উন্নতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কমিয়ে দেয় বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা। সিসা দূষণে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতি এবং কম উৎপাদনশীলতায় প্রতি বছর পৃথিবীর ক্ষতি হয় ১ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ১৬ মিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠান দুটি জানিয়েছে, গবেষণাটি মার্চে পিয়ার-রিভিউড জার্নাল এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চে প্রকাশ করা হবে।
ঢাকার অদূরে সাভারসহ কয়েকটি অঞ্চলে করা এই গবেষণায় দেখা গেছে, দূষিত এলাকা থেকে ব্যাটারি অপসারণ করে মাটির দূষণ দূর করার পর মাটিতে সিসার ঘনত্ব ৯৬ শতাংশ কমে যাচ্ছে। এতে শিশুদের রক্তে সিসার পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের মাটিতে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং সিসার মতো ভারী ধাতু অতিরিক্ত মাত্রায় পাওয়া যায়। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে সেসব ক্ষতিকর উপাদান মানবদেহে প্রবেশের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।
ক্যাডমিয়াম আসছে রাসায়নিক সার থেকে এবং ক্রোমিয়াম ও সিসা আসছে মূলত শিল্পকারখানা, ইলেকট্রনিক এবং মেডিকেল বর্জ্য থেকে। যদি মাটি দূষিত হয় তাহলে সেই দূষণ খাদ্যচক্রের মাধ্যমে চলে আসে।
ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু ভারী ধাতু মাটির ওপরের স্তরে চলে আসছে। এ ছাড়া রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও দূষিত পানির মাধ্যমে মাটি দূষিত হচ্ছে। এই গবেষণায় ৬৯ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসা ছিল।
আর্টিকেলের সহলেখক এবং স্ট্যানফোর্ড উডস ইনস্টিটিউট ফর দ্য এনভায়রনমেন্টের প্রফেসর স্টিফেন লবি বলছেন, ‘বিশুদ্ধকরণের ১৪ মাস আমরা সাফল্য পাই।’আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ‘মাটি বিশুদ্ধকরণের পর গবেষণায় অংশ নেয়া কমিউনিটির মানুষেরা খুশি হয়েছেন। কারণ এতে তাদের এলাকার বাতাস এবং পরিবেশ পাল্টে যায়। নারীরা তৎক্ষণাৎ বিশুদ্ধ মাটিতে শাকসবজির চাষ শুরু করেন।’
সান নিউজ/এসএ