নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট : অপরিকল্পিত ভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দির পরিবেশ। এরই মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য মণ্ডিত জাফলংকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
শুধুমাত্র পরিবেশের ক্ষতি নয়, এসব এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর তুলতে গিয়ে নিয়মিতই ঘটছে প্রাণহানি। তিন বছরে মারা গেছেন ৭৬ শ্রমিক। পরিবেশের বিপর্যয় ও জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া—এ ৫ এলাকাতে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
তবে এ ৫ এলাকার মধ্যে জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পৃথক ২টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ২৫ জানুয়ারি জাফলং, বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা ৬ মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদেশে কোনও যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে ও জাফলংয়ের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) বাইরে থেকে পাথর উত্তোলন করতে বলা হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোয় যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত।
তবে এমন নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীরা বোমা মেশিন নামে পরিচিত এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করতেন। প্রশাসনের অভিযানে প্রায় প্রতিদিন এ রকম যন্ত্র জব্দ করা হতো। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, এর আগেও আদালত পাথর উত্তোলনে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিলেন।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা সে নিষেধাজ্ঞা মানেনি। বোমা মেশিন ব্যবহার করে সব এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন আবার আদালত যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন। এ অনুমোদন পেয়েই ব্যবসায়ীরা আগের মতো যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করবেন।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের পাথর অধ্যাষিত এলাকাগুলোর পাথর এরই মধ্যে ফুরিয়ে এসেছে। এখন চাহিদার ৭০ শতাংশ পাথরই আমদানি করা হয়। তবে এ পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অনেক গুণ বেশি।
কেবল পরিবেশ ধ্বংস নয়, অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে সিলেটে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসাবে সিলেটের পাথর উত্তলন ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৬ জন পাথর শ্রমিক নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে পাথর উত্তোলন চালুর দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটসহ বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি সিলেট বিভাগীয় শাখা। আদালতের অনুমতির পর ম্যানুয়েল পদ্ধতিতেই পাথর উত্তোলন করা হবে জানিয়েছেন এ সংগঠনের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল।
তিনি বলেন, পাথর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন ম্যানুয়েল পদ্ধতিতেই তারা পাথর তুলবেন। আর কোনও যন্ত্রের ব্যবহার করবেন না। পরিবেশও ধ্বংস করবেন না। আমরাও বিষয়টি তদারকি করব।
সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল বলেন, পাথর খনিজ সম্পদ। আমাদের দাদারা খেয়েছেন, বাবারা খেয়েছেন, আমরা খাচ্ছি, আমাদের সন্তানরাও খাবেন। এভাবেই চলবে। এটি প্রকৃতির দান। কোনও দিনও এটি শেষ হবে না।
সান নিউজ/এসএ