নিজস্ব প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল : যত্রতত্র গড়ে উঠা কলকারখানার দূষিত বর্জ্য শোধনাগারের নেই কোন ব্যবস্থা। পরিবেশ ও মানুষের ম্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা না করেই নদীর পানিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কলকারখানার দুষিত বর্জ্য। আর এসব বর্জ্য পানিতে মিশে মারা যাচ্ছে মাছ এবং ভয়াবহ দুষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার সীমান্তবর্তী আজগানা, সূত্রাপুর ও বোর্ডঘর এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বংশাই তুরাগ ও ঘাটাখালী নদী এই দুষণের কবলে পড়ে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। এলাকার শত শত লোকজন মরা মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে।
৩টি নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাওয়ায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ৪০-৫০ গ্রামের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন সরকারসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, কারখানার দুষিত বর্জ্য ফেলার কারণে মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশাই, তুরাগ ও ঘাটাখালী নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ব্যাপক হারে মারা যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে দুই উপজেলার শত শত লোকজন মরা মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, গোড়াই, সোহাগপাড়া, সৈয়দপুর, ক্যাডেট কলেজ, হাটুভাঙ্গা, বোর্ডঘর, সূত্রাপুর ও কালিয়াকৈর এলাকায় ছোট-বড় মিলে ৮০-৯০ মিলকারখানা গড়ে উঠেছে। সরকারি ও পরিবেশ অধিদফতরের নিয়ম রয়েছে প্রতিটি কারখানায় বর্জ্য শোধনাগারের জন্য (ইটিপি প্লান্ট) বাধ্যতামূলক।
কিন্তু গোড়াই ও কালিয়াকৈর এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা অধিকাংশ কলকারখানায় (ইটিপি প্লান্ট) চালু না করেই দুষিত বর্জ্য আশপাশের খাল, ডোবা পুকুর, খোলা পরিবেশ এবং বংশাই, তুরাগ ও ঘাটাখালী নদীর পানিতে ফেলছে। কারখানার দুষিত বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক হারে মাছ মারা যাচ্ছে।
মাছের মধ্যে রয়েছে, রুই, কাতল, চিতল, বোয়াল, পাবদা, সরপুটি, কই, শিং, মাগুর, খলসে, মেনি, শোল, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। কারখানার দূষিত বর্জ্যে শুধু মাছই মরে যাচ্ছেনা। আশপাশের বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও বৃক্ষ মারা যাচ্ছে। নদীর পানিতে দূষিত বর্জ্যের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাওয়ায় মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার সীমান্তবর্তী ৪০-৫০ গ্রামের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
নদী ও নদীর পানি রক্ষাসহ বিষয়টির দিকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকাবাসী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদফতরের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। পরিবেশ অধিদফতর টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য মির্জাপুরে অবৈধ ইটভাটাসহ বিভিন্ন কারখানায় অভিযান শুরু হয়েছে।
কোন কারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষিত করা হলে ঐ সব কারখানার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দূষিত বর্জ্যের কারণে নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়নি। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সান নিউজ/এসএ