নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ৩০ লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তাদের জীবিকার প্রয়োজনে এ বন থেকে মাছ, মধু, মোম, টিম্বার, ওষুধিগাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, মধু সংগ্রহ করে থাকেন।
অতিমাত্রায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে এবং বন্যপ্রাণী শিকার করার কারণে সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্যে নষ্ট হচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যানে এ সম্পদ সংগ্রহকারীর সংখ্যা ৩০ হাজার। সুন্দরবন সুরক্ষায় ৩০ হাজার সম্পদ সংগ্রহকারী ও সুবিধাভোগীদের জন্য প্রচলিত পারমিট সিস্টেম এবং তাদের পরিচয়পত্র অটোমেশন করা হবে।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। যাতে সুন্দরবন রক্ষায় প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহকারীদের সবসময় মনিটরিং করা যায়। খুলনা ভিত্তিক ভৌগলিক তথ্য সিস্টেম (জিআইএস) ল্যাবরেটরি, ভেজিটেশন ম্যাপিং, কম্পিউটার সফটওয়্যার ও এর লাইসেন্স এবং জিপিএস ট্যাকিং সুবিধার উন্নয়ন হবে।
রিমোট সেন্সিং এবং জিআইএস প্রয়োগের মাধ্যমে স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের তথ্য ভাণ্ডার তৈরি ও স্মার্ট পেট্রোলিয়ের পরিসর বাড়বে সুন্দরবনে। সুন্দরবন সুরক্ষা নামে ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। বন অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বন ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়ানো হবে।
বিদ্যমান অবকাঠামো ও যোগাযোগ সুবিধার উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার উপযুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, টহল জোরদার করার মাধ্যমে বন ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ, বনের প্রাণীর সংখ্যা ও এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ করা হবে। গণভবন থেকে সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
বন অধিদফতরের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক (উন্নয়ন পরিকল্পনা ইউনিট) ড. মরিয়ম আক্তার বলেন, ‘সুন্দরবনের সম্পদ সংগ্রহকারীদের কার্ড পারমিট করা আছে। এরা কখন কি সম্পদ সংগ্রহ করেন তা মনিটরিং করা কঠিন। এজন্য আমরা একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে যাচ্ছি। ফলে আমরা ২৪ ঘণ্টায় সব কাজ মনিটরিং করতে পারবো।
পারমিট সিস্টেম ও পরিচয় অটোমেশনের মাধ্যমে সেবা সহজীকরণ করা। বনায়নের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জ্বালানি কাঠের চাহিদা পূরণ, ল্যান্ডস্কেপ উন্নয়ন ও সবুজবেষ্টনী তৈরির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা হবে। প্রকল্পটি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনাসহ মোট ৩৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বন অধিদফতর।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবন রক্ষায় অফিস ভবন, আবাসিক ভবন, ব্যারাক, কাঠের জেটি, পল্টুন, গ্যাংওয়েসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। সুন্দরবনে ইতোপূর্বে প্রতিষ্ঠিত ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা হবে। পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজম ও বিকল্প জীবিকা পরিকল্পনা করা হবে।
বাঘসহ বনের সব প্রাণী, ইলিশ, ভেটকি, কাঁকড়া, শামুক নিরুপণ করা হবে। বন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদী ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান হালনাগাদকরণ, নদী-খাল ও পুকুর ইত্যাদি খনন-পুনখনন কাজ করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া সুন্দরবনের জন্য ইকোট্যুরিজম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ট্যুর গাইডদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
সান নিউজ/এসএ/এস