নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমার থেকে প্রত্যাগত রোহিঙ্গাদের পাহাড়ে আশ্রয় প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ করতে কৌশলে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা স্থানান্তর বিষয়ে এমন অভিযোগ সবচেয়ে বেশী উঠেছে বিভিন্ন এনজিও এবং আইএনজিওর বিরুদ্ধে। এসব প্রক্রিয়ায় টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের পাহাড় কেটে নতুন করে উজাড় করা হচ্ছে বনভুমি।
একদিকে, সরকার ভাসানচরে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সেখানে স্থানান্তরের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা কৌশলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও পাল্লা দিয়ে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর তৎপরতায় মেতেছে। এতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়াসহ অন্যত্র স্থানান্তর প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশি বিদেশি নানা সংস্থার পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে সরকারের বিভিন্ন দফতর ও ক্যাম্প প্রশাসনের দায়িত্বপালনকারীরা পর্যন্ত। তারা এসব কাজে বাঁধা দেওয়ার চেয়ে বরং উল্টো সহযোগিতা দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন করে আর কোন ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হবে না এবং ক্যাম্প এলাকায় নতুন করে আর কোনও অবকাঠামো তৈরি করাও যাবে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা পর্যন্ত অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।
এমনকি কক্সবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য নতুন করে বন ভুমি ব্যবহার করা হবে না। কক্সবাজার বিভাগীয় বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ৮ হাজার একর বনভুমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরেজমিনে টেকনাফ ২৬ নম্বর শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য পানি সংরক্ষণের নামে পাহাড় কেটে ও হাতির চলাচলের পথ বন্ধ করে স্থাপন করা হচ্ছে স্লুইচ ও ড্যাম। সেখানে এক্সকেভেটর দিয়ে দিবা-রাত্রি পাহাড়ের মাটি কেটে সমান করা হচ্ছে। ডাম্পারে করে মাটিগুলো ড্যামে (বাঁধে) ফেলা হচ্ছে।
পরিবেশবাদিরা জানান, টেকনাফ বনভুমির বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে হাতির অভয়ারণ্য। সেখানে বেশ কিছু হাতি রয়েছে। এসব হাতির পাল চলাচল করে থাকে যেখানে পাহাড় কেটে ড্যামটি স্থাপন করা হচ্ছে সেখানেই। একদিকে কক্সবাজার এলাকায় হাতি হত্যার মহোৎসব চলছে অপরদিকে টেকনাফে হাতি চলাচলে জায়গাটিও জবর দখল করে হাতির প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে।
যদিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে টিউবওয়েল ও পানির ট্যাংক স্থাপন করা রয়েছে। সেখানে বনভূমি ও হাতি চলাচলের পথে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সহায়তাপুষ্ট ইএপি প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের জন্য ড্যাম স্থাপনা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, কক্সবাজার।
জাতীয় বননীতি ১৯৯৪ এর ১৯ নম্বর ঘোষণায় দেশের বনভূমির অপ্রতুলতার প্রেক্ষিতে সরকারি মালিকানাধীন সংরক্ষিত বনভূমি সরকার প্রধানের অনুমোদন ব্যতিত বনায়ন বহির্ভূত কাজে ব্যবহার করা যাবে না মর্মে উল্লেখ থাকলেও জনস্বাস্থ্যের কর্মকাণ্ডে তা মানা হচ্ছে না।
সান নিউজ/এসএ/এস