মো. মাজহারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে গত দুই দিন ধরে সাতক্ষীরায় প্রায় ৭ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা
রোববার (২৬ মে) সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়টি। দুর্ঘটনা এড়াতে ওই দিন দুপুর থেকে উপকূলজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরে রেমালের আঘাতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে তার ছিঁড়ে এবং সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় জেলার প্রায় ৭ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। জেলার সবকটি পল্লী বিদ্যুতের (সাতক্ষীরা শহরে ওয়েস্ট জোন এলাকা বাদে) আওয়াভূক্ত এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
আরও পড়ুন: ৩৬ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু
শুধুমাত্র জেলা সদরের পৌর শহরে রোববার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছিল। কিন্তু ঝড়ে সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় রাত ১১টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
উপকূলের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, আমার ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গেছে। ফোন বন্ধ হয়ে যাবে। অনলাইনে সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে না।
উপকূলের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যা ও মোবাইলে চার্জ না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। মোবাইলে ইন্টারনেটও চলছে না।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে জেলার প্রায় ৭ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ভালুকায় পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু
ঝড়ে কলারোয়া উপজেলার জয়নগর গ্রামে ৩টি খুঁটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। তালার প্রধান সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্নস্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এতে কম-বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করেছি।
ইতোমধ্যে অনেক লাইনে পুনরায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়েছে। জেলার বিপদ এড়াতে বেশির ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কর্মীরা বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে।
তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানানো যাচ্ছে না। ২/১ দিন পর বলতে পারবো, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে নিহত ১
সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সহকারী প্রকৌশলী মতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের ৫৬ হাজার গ্রাহক। ঘূর্ণিঝড় রেমালে মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্নস্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় এবং কয়েকটি খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় রোববার রাত ১১টার পর থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। ঝড় থামার পরপরই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ শুরু করছি।
১১টি ফিডারের মধ্যে ৮টি চালু করতে পেরেছি। ৫৬ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৪০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকিদের বিদ্যুৎ সরবরাহে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই বলা হচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণেও আমরা কাজ করছি।
সান নিউজ/এনজে