বিনোদন ডেস্ক:
ছবির তুলনায় বিতর্ক তার নামের পাশে বরাবরই বেশি। প্রথম ছবিতেই চুম্বনদৃশ্যে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে মল্লিকা শেরাওয়াত এবং ‘বোল্ড’ এই দু’টি শব্দ কার্যত সমার্থক।
হরিয়ানার হিসারে এক সমৃদ্ধ জাঠ পরিবারে মল্লিকার জন্ম। রক্ষণশীল পরিবারে অনেক বিধিনিষেধের মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন তিনি। ছোট থেকেই পরিবারে প্রচলিত নিয়মনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি।
মল্লিকার জন্ম ১৯৭৬ সালের ২৪ অক্টোবর। জন্মগত নাম ছিল রীমা লাম্বা। কিন্তু পরে নিজের নাম পাল্টে ফেলেন। গ্রহণ করেন মামাবাড়ির পদবি, ‘শেরাওয়াত’। পরে জানিয়েছিলেন, জীবনে চলার পথে মায়ের কাছ থেকে যে সাহায্য পেয়েছেন, তারই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই সিদ্ধান্ত।
দিল্লি পাবলিক স্কুলের পরে মল্লিকার পড়াশোনা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরান্ডা হাউস কলেজে। দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক হন তিনি। স্নাতক হওয়ার পরে তিনি বিমানবালা হিসেবে এক এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। সেখানেই আলাপ হয় পাইলট কর্ণ সিংহ গিলের সঙ্গে।
২০০০ সালে বিয়ে করেন মল্লিকা এবং কর্ণ সিংহ গিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বিবাহিত জীবন দমবন্ধ মনে হতে থাকে মল্লিকার। ২০০১-এ বিবাহবিচ্ছেদের পরে মডেলিংয়ে নতুন কেরিয়ার শুরু করেন মল্লিকা।
বিজ্ঞাপনে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানের সঙ্গে অভিনয় করে দ্রুত জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে চলে আসেন মল্লিকা। এবার তিনি ঠিক করেন বলিউডে অভিনয় করবেন।
কিন্তু প্রথমেই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এলো না। পরিবর্তে তিনি মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করলেন। ২০০২ সালে তাকে ছোট ভূমিকায় দেখা গেল ‘জিনা সির্ফ মেরে লিয়ে’ ছবিতে। পরের বছর সুযোগ পেলেন বি গ্রেডের ছবি ‘খোয়াইশ’-এ।
‘খোয়াইশ’-এ মল্লিকার নায়ক ছিলেন হিমাংশু মালিক। এই ছবিতে মল্লিকার মোট সতেরোটি চুম্বনদৃশ্য ছিল। এক ফিল্মে এতগুলি চুম্বন দৃশ্যের রেকর্ড অন্য কোনও বলিউড নায়িকার নেই।
২০০৪-এ মুক্তি পেল ‘মার্ডার’। মহেশ ভাটের প্রযোজনায় অনুরাগ বসুর পরিচালনায় এই ছবির সুবাদে সেই জনপ্রিয়তা ও পরিচয় পেলেন মল্লিকা, যার জন্য তিনি বিয়ে ভেঙে বলিউডমুখী হয়েছিলেন।
প্রথম ছবির পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে মল্লিকার নামের পাশে বসে যায় ‘দুঃসাহসী’ পরিচয়। তিনি অফার পেতে থাকেন হলিউড থেকেও। জ্যাকি চানের ছবি ‘দ্য মিথ’-এ তিনি রাজকুমারির ভূমিকায় অভিনয় করেন।
শোনা যায়, এই ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অফার করা হয়েছিল ঐশ্বরিয়া, বিপাশা, করিনা, লারা দত্তসহ অন্য নায়িকাদেরও। কিন্তু নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে কেউ রাজি হননি। ফলে শেষ অবধি ছবিতে দেখা গিয়েছিল মল্লিকাকে।
‘মার্ডার’ ছাড়াও মল্লিকার কেরিয়ারের উল্লেখযোগ্য হিন্দি ছবি হল ‘প্যায়ার কে সাইড এফেক্টস’, ‘ওয়েলকাম’ এবং ‘ডরনা জরুরি হ্যায়’। তার বেলি ডান্স দর্শকদের মন জয় করেছিল ‘গুরু’ ছবিতে।
কিন্তু অভিনেত্রীর বদলে তার পরিচয় হয়ে গিয়েছিল সাহসী আইটেম ডান্সার হিসেবেই। বড় পর্দায় সুযোগ না পেয়ে তিনি ক্রমশ আগ্রহী হলেন টেলিভিশনের জন্য। সেখানেও একটি রিয়েলিটি শো-এ বিতর্কিত লিপ লক দৃশ্যে তাকে দেখা যায়।
হলিউডেও নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছিলেন মল্লিকা। প্রায় প্রতি বছরই কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাকে দেখা যেত। কিন্তু কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই মজবুত জায়গা করতে পারেননি তিনি।
তবে একটা সময় পর তিনি বিদেশেই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন। এই সময় ফ্রান্সের ধনকুবের শিল্পপতি সিরিল অক্সেফান্সের সঙ্গে তিনি ডেট করছেন বলেও শোনা যেতে থাকে।
প্যারিসের অভিজাত এলাকায় মহার্ঘ্য অ্যাপার্টমেন্টও ভাড়া নেন মল্লিকা। ১৯ শতকে তৈরি এই বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট অত্যন্ত বিলাসবহুল। যার মাসিক ভাড়া ছিল ভারতীয় মুদ্রায় কয়েক লক্ষ রুপী।
কিন্তু এই ফ্ল্যাট থেকে সিরিল ও মল্লিকাকে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয় আদালত। কারণ বাড়ির মালিকের অভিযোগ ছিল তারা বাড়ি ভাড়া দেননি ঠিকমতো। ভাড়া না মেটালে তাদের সমস্ত আসবাব বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। পরে এই প্রসঙ্গে মল্লিকাকে সংবাদমাধ্যমে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি পুরো ঘটনাই অস্বীকার করেন।
বিদেশে ‘হাই প্রোফাইল’ সময় কাটানো মল্লিকা অবশ্য এখন বছরের বেশির ভাগ সময় কাটান ভারতেই। ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে চেষ্টা করছেন বিনোদন জগতে কামব্যাক করারও।
ফিল্ম সমালোচকদের মতে, মল্লিকা জীবনভর দুঃসাহসী না হয়ে যদি অভিনয়ে মন দিতেন, তা হলে হয়তো তার কেরিয়গ্রাফ অন্যরকম হতো।