বিনোদন ডেস্ক:
আত্মহত্যা নাকি খুন! খুন হলে দোষী কে! অভিযোগের প্রধান তীর বলিউড অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর দিকে। অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রধান সন্দেহভাজন তিনিই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে ২৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর ওপর কালিমা লেগে গেছে। সব মিলিয়ে দিনে দিনে খলনায়িকায় পরিণত হয়েছেন তিনি।
বিহারের পাটনায় সুশান্তের বাবা কেকে সিংয়ের করা একটি মামলায় অভিযোগ রয়েছে, রিয়াই তার ছেলেকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন এবং টাকা লোপাট করেছেন। সুশান্তের হত্যাকারী রিয়াই।
অবশেষে নীরবতা ভেঙে মুখ খুলেছেন রিয়া। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে, সিএনএন নিউজ এইটিন ও আজতক চ্যানেলকে দেওয়া পৃথক সাক্ষাৎকারে নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
রিয়ার দাবি, মানসিকভাবে হেনস্তার সঙ্গে প্রতিদিনই হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছেন। এসবের কারণে আত্মহত্যার চিন্তাও করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ। আত্মসম্মানই আমাদের কাছে সব। কিন্তু এখন কিছুই অবশিষ্ট নেই। আজ আমি মাদক সরবরাহকারী, কাল হয়তো অন্য দোষ দেওয়া হবে। সবাই আমার পরিবারের পেছনে লেগে আছে।’
রিয়ার দাবি, তার স্বপ্নে এসেছিলেন সুশান্ত। তিনিই সব সত্যি জানিয়ে দিতে বলেছেন স্বপ্নে। এজন্য তিনি অনেকদিন চুপ থাকার পর মুখ খুললেন।
রিয়ার দেওয়া তথ্য
* মিটু হ্যাশট্যাগ অভিযোগ তাড়িয়ে বেড়াতো সুশান্তকে। ‘দিল বেচারা’র সহশিল্পী সানজানা সঙ্গী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন। দেড় মাস পর সানজানা বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলে রেহাই পান সুশান্ত। ততদিনে তার মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সুশান্ত ধারণা করতেন, বলিউড ও রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সানজানা সঙ্গীর যোগসূত্র আছে। এ কারণে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।
* ‘সঞ্চিরিয়া’ ও ‘ছিচ্চোরে’ ছবির জন্য মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন সুশান্ত। তার সবসময়ই মনে হতো, আরও ভালো কাজ করলেও কখনও পুরস্কার পাবেন না। বলিউডে স্বজনপোষণের প্রবণতা তার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল ভীষণ।
* রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে পাঁচ বছর বাবা কেকে সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেননি সুশান্ত। কারণ সুশান্তের মাকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে অবসাদে ভুগেছিলেন মা।
* সুশান্ত ২০১৩ সালে মানসিক অবসাদে ভুগেছেন বলে জানান রিয়াকে। তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। গত বছর ইউরোপ ভ্রমণের সময় তার এই অবস্থার অবনতি হয়। তখনই প্রেমিকের হতাশাগ্রস্ততার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন রিয়া।
* ২০১৯ সালে সুশান্ত ও রিয়া ইউরোপ ভ্রমণে যান। এর সম্পূর্ণ খরচ দিয়েছেন সুশান্ত। আলিশান মেজাজে থাকতে ভালো লাগতো তার। দু’হাতে টাকা ওড়াতেন তিনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন রিয়া।
* গাঁজায় আসক্ত ছিলেন সুশান্ত। ‘কেদারনাথ’ ছবির শুটিং চলাকালীন থেকে তার এই আসক্তি শুরু হয়। শুধু এ দিকটিতেই তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন রিয়া। তবে নিজে কখনও মাদক নেননি। প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। তার কথায়, ‘সুশান্ত নিজের খেয়ালখুশি মতো চলতেন। কেউই তাকে আটকাতে পারতো না।’
* রিয়াকে এ বছরের জানুয়ারি ও জুনে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন সুশান্ত। কারণ মুম্বাই ছেড়ে অন্যত্র বসতি গড়তে চেয়েছেন তিনি। রিয়ার কথায়, ‘আমাদের সম্পর্কটা ছিল সিনেমার মতো, রূপকথার মতো। তবে হ্যাঁ, আমাদের মনোমালিন্য হতো।’
* গত ২ ও ৩ জুন থেকেই রিয়াকে বারবার অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে চলে যেতে বলছিলেন সুশান্ত। বড় বোন মিতু সিং ৮ জুন আসবেন জানিয়ে ওইদিনই প্রেমিকাকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। কারণ সুশান্তের পরিবার কখনও রিয়াকে ভালো চোখে দেখেনি।
* গত ৮ জুন বিকালে সুশান্তের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসেন রিয়া। এর পরদিন তাকে মেসেজ পাঠান সুশান্ত, ‘কেমন আছো আমার বাবু?’ সুশান্ত ফোন না করায় খুব কষ্ট পেয়ে এরপরই তাকে ব্লক করেন রিয়া।
* মহেশ ভাট বাবার মতো বলেই সুশান্তকে ছেড়ে চলে আসার পর ৮ জুন তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠান রিয়া।
* গত ১৪ জুন হাসপাতালের মর্গে তিন সেকেন্ডের জন্য সুশান্তের পা ছুঁয়ে ক্ষমা চেয়েছেন রিয়া। কয়েকজন বন্ধু তাকে এই সুযোগ করে দেন। তখন লাশ দেখে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘আমি দুঃখিত বাবু।’
* সুশান্তের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ১৭ কোটি টাকা থেকে ২০১৯ সালে ১৫ কোটি টাকা সরানো হয় অন্যত্র। কেকে সিংয়ের অভিযোগ, রিয়াই ওই টাকা লোপাট করেছেন। রিয়ার প্রশ্ন, ‘দেখাই যখন হতো না তখন কেকে সিং কীভাবে জানতেন ছেলের অ্যাকাউন্টে ১৭ কোটি টাকা আছে?’
* সাবেক প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তার একটি ফ্ল্যাটের কিস্তির ৩-৪ কোটি টাকা দিয়েছেন সুশান্ত। তবে চার বছর অঙ্কিতার সঙ্গে কোনও কথা বলেননি তিনি।
* মুম্বাইয়ের খারে রিয়া একটি ছোট আকারের ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি নিজেই এর কিস্তি এখনও দিচ্ছেন। মাঝে চুল ও রূপসজ্জার পেছনে ব্যয় হওয়া ৩৫ হাজার রুপি সুশান্তের কাছ থেকে ধার নিয়ে পরে ফেরত দিয়েছেন রিয়া।
এদিকে মুখ খোলার পর নেটিজেনরা রিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। টুইটারে ‘জাস্টিস ফর রিয়া’ হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা ভেবে মুম্বাই পুলিশ এখন তাকে ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।
সুশান্তের বোন শ্বেতা সিং কীর্তির অভিযোগ, সাধারণ মানুষের সহমর্মিতা পেতে সাক্ষাৎকারে বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন রিয়া। তার দাবি, সুশান্তের পাশে পরিবার সবসময়ই ছিল। তিনি মনে করেন, সুশান্তকে মাদকাসক্ত করে তার টাকা লোপাট করেছেন রিয়া। এ কারণে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই) শুক্রবার (২৮ আগস্ট) মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজে ডিআরডিও গেস্টহাউসে ডেকে এনে টানা ১০ ঘণ্টা রিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। রাত ৯টায় তিনি সেখান থেকে বের হন।
অন্যদিকে সুশান্তকে মাদক সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ২০ জনকে জেরা করবে ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো। রিয়া, তার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী, রিয়ার ট্যালেন্ট ম্যানেজার জয়া সাহা, সুশান্তের সহ-ব্যবস্থাপক শ্রুতি মোদি ও গৌরব আর্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে এই সংস্থা।