বিনোদন ডেস্ক : ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখে সামাজিক মাধ্যমে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন : ববির প্রেম-প্রতারণা’র গল্প সেন্সরে
মঙ্গলবার (৯ মে) সিনেমাটি দেখার পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজের মতামত তুলে ধরেন তিনি।
লেখিকার মতে, কেরালা স্টোরির চেয়ে জরুরি ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো।
আরও পড়ুন : মাদক মামলা স্থগিত চেয়ে আবেদন
তসলিমা লেখেন, দ্য কেরালা স্টোরি' দেখা হলো। 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' দেখার সময় যে অনুভূতি, এই সিনেমা দেখার সময় প্রায় একই রকম অনুভূতি আমার। যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী।
সুদীপ্ত সেন পরিচালিত সিনেমাটি দেখে তিনি জানান, পৃথিবীর প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত। মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না জানা, ধর্মের যাবতীয় রুলস এবং রিচুয়ালস না পালন করা লোকের সংখ্যাই বেশি বলে আমার বিশ্বাস। মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা, শিক্ষিত সভ্য লোকও এই সম্প্রদায়ে প্রচুর।
আরও পড়ুন : যা পরেছেন, তা-ই খাচ্ছেন!
লেখিকার বলেন, এগনোস্টিক আর এথিস্টের সংখ্যাও তো বাড়ছে। এরা ধর্ম ঠিকঠাক না মানলেও এদের মুসলমান বলেই ডাকা হয়। যেমন- ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম না মানা লোকদেরও ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ বলে ডাকা হয়। এসব তাদের ধার্মিক পরিচয় নয়। এসব সাংস্কৃতিক পরিচয়।
তিনি আরও বলেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনোভাবেই উন্নতমানের ফিচার ফিল্ম নয়। এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, আছে অতিরঞ্জন। কোরআন হাদিসের মানবতাবিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে এত বেশি গুঁজে দেওয়া হয়েছে যে, কারো সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়নি।
আরও পড়ুন : শাকিবের বিরুদ্ধে সমন জারি
লেখিকার মন্তব্য, আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা বানানো হয়েছে। সিনেমাগুলো ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র চেয়ে কিন্তু বেটার।
এছাড়া ছবির দেওয়া তথ্যের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তসলিমা নাসরিন।
আরও পড়ুন : বুবলীর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে চাই না
তিনি লেখেন, কেরালার ৩২০০০ মেয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে। এই তথ্য সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে বরং মুসলমানেরা বেশি যোগ দিয়েছে আইসিসে। এই ২ দেশে আইসিসের আক্রমণও নেহাত কম হয়নি। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র চেয়ে বানানো জরুরি ‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’।
স্ট্যাটাসের শেষ দিকে লেখিকা জানান, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ আমার পছন্দের সিনেমা নয়। তাই বলে আমি চাই না এই সিনেমা কোথাও নিষিদ্ধ হোক, কোথাও এর প্রদর্শনী কোনো কারণে বন্ধ থাকুক।
আরও পড়ুন : বিয়ের পিঁড়িতে পরিণীতি
এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদবুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প সাহিত্যেই কোনো দর্শনের বিপক্ষে, কোনো জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা থাকে। তাই বলে সেই সব শিল্প সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন!’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ মে ভারতজুড়ে মুক্তি পায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমাটি। ইতোমধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগে ছবিটি তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু রাজ্যে ছবিটিকে করমুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : শাকিবকে নিয়ে বুবলীর বিস্ফোরক মন্তব্য!
শত বিতর্ক ও নিষিদ্ধের মুখে পড়েও ছবিটির আয় ঊর্ধ্বমুখী। গত ৫ দিনে ছবিটির আয় ৫৬.৮৬ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে।
সান নিউজ/এনজে