বিনোদন ডেস্ক:
সরকারের সহায়তা না পেলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের অভিজাত মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্স! বুধবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ডেকে এমনটাই জানালেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মাহবুব রহমান রুহেল। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানালেন সাত দফা দাবি।
রাজধানীর মহাখালীর এস কে এস টাওয়ার শাখায় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, পর্যটনসহ দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাত যখন সচল হয়ে গেছে, তখন কেবল সিনেমা হল বন্ধ। এটা খুব হতাশাজনক। অথচ আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। কারণ, অন্যান্য জনবহুল স্থানের তুলনায় এখানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মানুষের বিনোদনের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি।’
মাল্টিপ্লেক্স খুলে দেওয়ার পক্ষে তিনি আরও অভিমত দেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে রুহেল বলেন, ‘লক্ষণীয় যে, চীন, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইতালি, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এরই মধ্যে সিনেমা হল চালু করা হয়েছে। ভারতেও এ মাসে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। শুধু তাই নয়, সংস্কৃতি ও বিনোদন সংশ্লিষ্ট শিল্পকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক সহায়তাও করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। মুভি থিয়েটারসহ ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর জন্য ২ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা বিল পাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ৫ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকার দিয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। চলচ্চিত্র শিল্পের মেরুদণ্ড বলা যায় সিনেমা হলকে। হল না বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন অনতিবিলম্বে দেশের সিনেমা হলগুলো খুলে দেওয়া হোক।’
মাহবুব রহমান রুহেলের দাবি, ‘দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর দেশি ও বিদেশি সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে হলবিমুখ দর্শকদের পুনরায় হলমুখী করতে সক্ষম হয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। হলিউডের নতুন নতুন সব ছবির পাশাপাশি সুস্থধারার দেশি ছবিও নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হয় এখানে। পরিবারের মানুষদের নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়ার ধারাটা ফিরে এসেছে এই প্রেক্ষাগৃহের মাধ্যমে। বর্তমানে স্টার সিনেপ্লেক্সে কাজ করছেন তিন শতাধিক কর্মী। যুক্ত রয়েছে ৬০ এর বেশি সাপ্লায়ার এবং বাণিজ্যিক সহযোগী।’
ইতিমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে ১৫টি স্ক্রিন রয়েছে মাল্টিপ্লেক্সটির। মিরপুরে চতুর্থ শাখা চালুর জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে হলগুলো গত প্রায় পাঁচমাস বন্ধ। যার ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে উচ্চসুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের তিনটি নতুন শাখা চালু করা হয়। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে কোনো আয় নেই। ঋণের সুদ এবং কর্মীদের বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।
মাহবুব রহমান রুহেল প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘এই দুঃসময়ে আমাদের শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই পারেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই চলচ্চিত্র শিল্প এবং এর সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ ও তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে, নগরবাসীর বিনোদনের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনতিবিলম্বে সিনেমা হলগুলো খুলে দেওয়া, জরুরি আর্থিক সহায়তা কিংবা প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা, সিনেমা হলের টিকিটের ওপর সব ধরনের মুসক ও কর মওকুফের সুযোগ দেওয়া, সুদবিহীন ঋণ প্রদানের অনুমোদন, উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র শর্তহীন ভাবে আমদানির অনুমতি দেওয়া।
অন্য দুই দাবি উল্লেখ করে মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, ‘শপিং মল কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুরোধ, স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রতিটি শাখা বিভিন্ন শপিং মলে ভাড়ায় পরিচালিত হয়। এই করোনাকালে শপিং মল কর্তৃপক্ষের কাছে ভাড়া মওকুফ করা ও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রযোজক সমিতির কাছে অনুরোধ, সেন্সর পাওয়া সিনেমাগুলো মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শুধুমাত্র সিনেমা হল খুললেই হবে না, নতুন ছবি মুক্তি না পেলে দর্শক হলে আসবে না।’
সান নিউজ/ এআর