বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়ক জায়েদ খান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনায় আছেন। নির্বাচনে ১৩ ভোটে পাস করার পরও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে তাকে হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়েছে।
বর্তমানে এ নিয়ে নায়িকা নিপুণের সঙ্গে চলছে তার আইনি লড়াই। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুজনকেই আপাতত এই চেয়ারের বাইরে থাকতে হবে। তারপরই বিষয়টি সুরাহা করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জায়েদ খানের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে তাকে রিমেম্বারিং দেখাচ্ছে। সাধারণত কেউ মারা গেলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার অ্যাকাউন্টটি রিমেম্বারিং করে দেয়। কিন্তু জায়েদ খানের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঘটেছে উল্টো। বেঁচে থাকতেই এই নায়ককে ‘মৃত’ বলছে ফেসবুক!
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জায়েদ খানের প্রোফাইলে লিখেছে, ‘আমরা আশা করি যারা জায়েদ খানকে ভালোবাসেন, তারা তাকে স্মরণ ও সম্মানিত করার জন্য তার প্রোফাইল পরিদর্শন করে সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন।’ধারণা করা হচ্ছে, কেউ জায়েদ খানের আইডি হ্যাক করে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারেন।
আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ পদে জায়েদ খান ও নিপুণ আক্তার কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ওই দিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। বুধবার চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: জায়েদ-নিপুণের কেউ চেয়ারে বসবে না
প্রসঙ্গত, শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এফডিসিতে নিপুণকে আপিল বোর্ড বিজয়ী ঘোষণা করলে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি। শিল্পী সমিতির ৩৮ বছরে প্রথম নারী সাধারণ সম্পাদক হলেন নিপুণ।
এর আগে নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিপুণকে জয়ী ঘোষণা করেন। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। একই সাথে শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের এই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। যিনি প্রাথমিক ফলাফলে বিজয়ী হয়েছিলেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অফিসে আপিল বোর্ডের জরুরি বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংএ জায়েদ খানের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান ছাড়াও মোহাম্মদ হোসেন ও নিপুণ। তবে চলচ্চিত্রের সবগুলো সংগঠন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহিদুল হারুনকে অবাঞ্চিত করায় বৈঠকে তাকে ডাকা হয়নি।
কিন্তু বৈঠকে হাজির হননি অভিযুক্ত জায়েদ খান ও চুন্নু। এই বৈঠকে উপস্থিত না থাকার কথা তিনি আগেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানসহ চারজনকে আইনি নোটিশও দিয়েছেন জায়েদ খান। বাকিরা হলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আপিল বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ব্যারিস্টার মুজিবুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এই আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী জায়েদ খানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ আক্তার। তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি না মানার অভিযোগ এনেছেন ইসি পদে নির্বাচিত চুন্নুর বিরুদ্ধেও। অভিযোগ আমলে নিয়ে শিল্পী সমিতির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও সচিব বরাবর দিক নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতর আপিল বোর্ডকে নির্দেশ দেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী আপিল বোর্ড সংশ্লিষ্টরা শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিসে জরুরি এক বৈঠক ডাকা হয়। এতে উপস্থিত থাকতে বলে আপিল বোর্ড চিঠি দেয় অভিযোগকারী সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ, অভিযুক্ত জায়েদ খান ও চুন্নুসহ দুই নির্বাচন কমিশনার জাহিদ হোসেন, বি এইচ নিশান, শিল্পী সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনকে। কিন্তু ৪টায় শিল্পি সমিতির অফিসে তালা ঝুলতে দেখা যায়। পরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অফিসে আপিল বোর্ডের সভা হয়।
আরও পড়ুন: অভিনন্দন জোয়ারে ভাসছেন মারিয়া
এর আগে এ প্রসঙ্গে জায়েদ খান বলেন, ‘২৯ জানুয়ারির পর আপিল বোর্ডের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টার পর থেকে আপিল বোর্ড মেয়াদ উত্তীর্ণ। তারা কি করে নির্বাচনের বৈঠক ডাকতে পারে, আমার তা প্রশ্ন। আপিল বোর্ড ২৯ তারিখ বিকেল ৫টার পর আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে এবং নিপুণ পরাজয় মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে চলে গেছেন। এখানেই আপিল বোর্ডের কাজ শেষ। তারা এখন যা করছেন সব অবৈধ।’
এর আগে ২৮ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিএফডিসিতে শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক (২০২২-২৪) মেয়াদের নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন ভোট পেয়েছেন ১৯১টি। অপরদিকে তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পেয়েছেন ১৪৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান পেয়েছেন ১৭৬ ভোট। তার বিপরীতে নিপুণ পেয়েছেন ১৬৩ ভোট। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হন জায়েদ খান। একই পদে চিত্রনায়িকা নিপুণ হেরে যান ১৩ ভোটে।
সান নিউজ/এনকে