বিনোদন ডেস্ক: উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই সুরসম্রাজ্ঞী।
তার মৃত্যুতে স্তব্ধ উপমহাদেশের সংগীতাঙ্গন। শ্রোতারা যেমন বিমর্ষ, তার সান্নিধ্য যারা পেয়েছিলেন, তারা আরও বেশি শোকাহত। বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ লতা মঙ্গেশকরের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। এর মধ্যে উজ্জ্বলতম নামটি হলো রুনা লায়লা।
উপমহাদেশের সংগীতে রুনা লায়লার অবস্থানও উল্লেখযোগ্য। সেই সুবাদে দুই কিংবদন্তির মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্য। তারা হয়ে ওঠেন বন্ধু। তাই লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে ভেঙে পড়েছেন রুনা লায়লা। সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে প্রকাশ করেছেন তার অনুভূতি।
আরও পড়ুন: জায়েদ মামলা করুক, আমি লড়তে প্রস্তুত
লতার সঙ্গে তোলা অনেকগুলো ছবি শেয়ার দিয়ে রুনা লায়লা লিখেছেন, ‘যে কণ্ঠ আমার মতো লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, এখন তিনি স্বর্গে গাইছেন দেবদূতদের জন্য। বহু বছর পেরিয়ে আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্মানের একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমরা বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রতিদিনই আলাপ হতো।’
রুনা আরও লেখেন, ‘টেলিফোনে দীর্ঘ আলাপচারিতা হতো, সংগীত নিয়ে কথা বলতাম। তার অনুমতি সাপেক্ষে বিভিন্ন কৌতুক পাঠাতাম, তিনি সেগুলো পড়ে মজা পেতেন। দিদির খুব ভালো সেন্স অব হিউমার ছিল। তিনি নিজের কিছু মজার অভিজ্ঞতা আমাকে বলেছেন, আমরা একসঙ্গে হেসেছি।’
রুনার প্রত্যেক জন্মদিনে শাড়ি উপহার পাঠাতেন লতা। সেসব স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেছেন, “তাকে শুনতে খুব ভালোবাসতাম আমি। তার মধুঝরা কণ্ঠস্বরই আমার কাছে সংগীত ছিল। আমি যখন তাকে শুভ সকাল জানাতাম, সেটার বিপরীতে তিনি আমাকে তার প্রিয় ছবি, গান, ফুল, বাচ্চাদের ছবি-ভিডিও পাঠাতেন। আমার প্রত্যেক জন্মদিনে তিনি শাড়ি পাঠাতেন। এই বছর তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যেহেতু লন্ডন যাচ্ছো, সেখান থেকে ঢাকায় ফিরলে তোমার উপহার পাঠিয়ে দেব’। দিদি, আপনিই আমার কাছে সর্বোচ্চ উপহার।”
বর্তমানে রুনা লায়লা লন্ডনে অবস্থান করছেন। সে কথা উল্লেখ করে রুনা লিখেছেন, “লন্ডনে আসার আগেই তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। যখন কথা বলি, মনে হয় তুমি আমার পরিবারের খুব কাছের সদস্য’। তিনি আমাকে নিজের ছোট বোন বলতেন। সেজন্য আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং আমার প্রতিভার সম্মান করতেন।”
আরও পড়ুন: বিদায় ‘কোকিলকণ্ঠী’
রুনা লায়লা লিখেছেন, ‘তিনি আমাকে খুব মিস করছিলেন এবং বলেছিলেন তাকে দেখতে যেতে। যাতে আমরা সরাসরি অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতে পারি। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তার কাছে যাব। কিন্তু সেটা আর হয়নি।’
লতার মৃত্যুতে শোকে অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন রুনা লায়লা। লিখেছেন, “শূন্যতায় ভরে গেছে আমার মন এবং এটা চিরকাল থেকে যাবে। কারণ, সেই প্রিয় কণ্ঠ আমি কখনো আর শুনতে পাবো না, ‘রুনাজি আপ ক্যায়সে হ্যায়?’ দিদি, আপনি আমাকে ও সবাইকে অনেক কিছু দিয়েছেন এবং আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। সর্বশেষ ভয়েস মেসেজে আমাকে আশীর্বাদ পাঠানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আপনার ভালোবাসা ও আশীর্বাদ সারাজীবন লালন করব সরস্বতী মা। আমার দিদি...।”
সান নিউজ/এনকে