বিনোদন ডেস্ক: শোবিজের জনপ্রিয় মুখ শবনম ফারিয়া তার প্রাক্তন স্বামী হারুনুর রশীদ অপুর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। গত বছরের নভেম্বরে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া-বেসরকারি চাকরিজীবী অপু দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও বিচ্ছেদের নেপথ্যে কারণ জানা সম্ভব হয়নি।
তবে গত বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে ফারিয়া তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি নির্যাতনের অভিযোগ করেন। হঠাৎ করে শবনম ফারিয়ার তোলা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন স্বামী হারুনুর রশীদ অপু।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে হারুনুর রশীদ অপুর সঙ্গে আংটি বদল করেন শবনম ফারিয়া। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয় তাঁদের। বিয়ের ঠিক ১ বছর ৯ মাসের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয় তাদের। তখন ফারিয়া বিচ্ছেদের বিষয়ে স্পষ্ট করে কাউকে কিছুই বলেননি। সাবেক স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে কোনো তিক্ততা নেই বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সম্প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ করে ফেসবুক পেজে শবনম ফারিয়া দাবি করেন, স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়ে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন তিনি। শুধু নির্যাতনই নয়, নির্যাতন করে হাত ভেঙে দিয়েছিলেন তার স্বামী। হঠাৎ করে শবনম ফারিয়ার তোলা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন স্বামী হারুনুর রশীদ অপু।
ফেসবুকে বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) অপু লেখেন, ‘পারিবারিক নির্যাতনের বিষয়টি সত্য নয়। স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া এটা নিছক ঘটনা ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার পরিকল্পনা। আমি জানি না, কেন এতদিন পর কেউ এখন অতিরঞ্জিত গল্প ছড়াচ্ছে।’
অভিযোগ আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, 'অভিযোগ দুই দিকেই থাকে, কেউই সন্ন্যাসী লেভেলে থাকি না আমরা। দিনের পর দিন কারো আসমান সমান অভিযোগ থাকলে, আরেক দিকে পাহাড় সমান থাকারই কথা। অভিযোগকে পুঁজি করে নিজেকে সাধু সাজিয়ে ভিকটিম হিসেবে প্রকাশ করা অনেকের অভ্যাস হতে পারে- তবে এই পথে এখনো যেতে পারিনি।'
অপু বলেন, শ্রদ্ধাশীলতা - খুব বড় একটা পয়েন্ট আজকাল। একেকজনের পার্সপেক্টিভ থেকে যার যার কষ্ট বা দুঃখের আলাদা আলাদা ভার্সন থাকে। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই। কেন ঘর ভাঙল? কেন আলাদা হলেন- এই প্রশ্নগুলো একান্তই নিজস্ব। উত্তর জেনে আপনাদের চটকদার নিউজ ছাড়া কিংবা কমেন্টে লাভ/এংরি রিঅ্যাকশনের বাইরে কেউই আসবে না। এই পার্সপেক্টিভ আলাদা হয়ে গিয়েছে দেখেই হয়তো আমরা একভাবে আর চিন্তা করতে পারছিলাম না। তাই হয়তো আলাদা হওয়া। তবু ভাঙা আঙুলের গল্পটা রয়েই যায়, তাইতো? বরং ঘটনাটা শুরু কিভাবে, হলো কিভাবে, ভাঙল কিভাবে- এটা হয়তো জানার দরকার বিপরীত পাশ থেকেই। না হয় একদিক দোষী মনেই হয়! রাগের মাথায় উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গেলে হয়তো প্রতিটি কাপলেরই লিঙ্গ-নির্বিশেষে আজ 'মি-টু' স্ট্যাটাস দিতে হবে!
শবনম ফারিয়া অশান্তিতে আছে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বলছিলাম শ্রদ্ধার কথা। পাশে থেকেও শ্রদ্ধা রাখা যায়, দূরে থেকেও। নিজেকে ভিকটিমের মতো উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিমূলক মতবাদ- আসলেই দুঃখজনক। যখন একটা মানুষকে জনসাধারণ অনুসরণ করে- তার দিক থেকে একটাই কথা মাথায় রাখা উচিত, With great power comes great responsibility. কেউ যদি সহজেই হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে, তারও উচিত সাবলীল এবং সৃষ্টিশীল ও গঠনমূলক কথায় নিজের ইমেজ বিকাশ করা। ইনফ্লুয়েন্সার আসলে যে কী- এটা হয়তো অনেকেই বুঝতে চান না ! যা-ই হোক, গুজবের মতো এক শ্রেণির মানুষ উহাই অনুসরণ করে যাবেন আর ইনবক্সে গালি দিয়ে যাবেন। কিন্তু যাচ্ছেতাই কমেন্ট/স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেও রসিকতার পাত্র হয়ে লাভ নেই, আর অন্যকেও হাসির মাঝে ফেলে লাভ নেই। তবুও নিজেকে প্রায়ই এটা বলে সান্ত্বনা দিই যে- হয়তো বিপরীতের মানুষটি শান্তিতে আছে দেখেই এমন মনোভাব পোষণ করছে। নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে নিজেই অশান্তিতে থাকলে তখন অনেকেই চেষ্টা করেন বাকি মানুষটাকেও ছোট প্রমাণ করতে। প্রায় সময়ই আমরা অশান্তিতে থাকলে নিজেদের বেসামাল করে কথা বলেই ফেলি। অন্য কেউ ভালো থাকলে আবার টেনে নামানোর চেষ্টাও হয়তো করেন কেউ।
শান্তিতে আছেন উল্লেখ করে অপু বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত! আলহামদুলিল্লাহ অনেক শান্তিতে আছি, আল্লাহ এখন পরিবার নিয়ে সুস্থ এবং ভালো রেখেছেন, এখন শান্তির ঘুমও হয় রাতে! আল্লাহ সবাইকে বিভিন্ন রকম বিপদ, কষ্ট, প্যারা, কেইস, অশান্তি এবং অসংলগ্ন কথা থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন, আমীন।
এর আগে শবনম ফারিয়া লিখেছেন, ‘মৃত মেয়েটার ছবি দেখার পর বার বার আমি দেড়/দুই বছর পেছনে ফিরে যাচ্ছিলাম। মনে পড়ছে কীভাবে আমি দেবী সিনেমার পুরো প্রমোশন ভাঙা হাত নিয়ে করেছি, যখন কেউ জানতে চেয়েছি কী হয়েছে, বলেছিলাম সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছি! আমার সাহস ছিল না সবাইকে বলার যে কীভাবে ব্যথা পেয়েছি! কারণ আমি জানতাম এই মানুষটার সঙ্গেই থাকতে হবে, নাহলে মানুষ কী বলবে! আমার মা সমাজে মুখ দেখাবে কীভাবে! আমার দুই বোন যে স্বপ্ন নিয়ে এতো আয়োজনের প্ল্যান করছে তাদের কী জবাব দিবো!’
এরও আগে আরও একটি স্ট্যাটাসে ফারিয়ার প্রাক্তন স্বামী জানান, ‘প্রেম, বিয়ে কিংবা একটা সম্পর্ক- এর মাঝে হাজারটা চড়াই-উৎরাই থাকে। আবেগ, রাগ, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ মিলিয়েই একেকটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার বিয়ের সম্পর্কটি টেকেনি, এটা নিয়ে আমার বিপরীতের মানুষ অনেক বয়ান, স্ট্যাটাস, মতবাদ দিলেও এতদিন পর্যন্ত আমি কিছুই বলিনি, হয়তো আর বলবও না। ভেবেছি বোবার শত্রু নাই! কিন্তু যা দেখছি অনেকদিন ধরেই, চুপ থেকে সম্মান দিয়ে যাওয়াও আজকাল অনেকে সুযোগ নিয়ে নেয়।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ফেসবুকে ফারিয়া-অপুর পরিচয়। সেখান থেকে বন্ধুত্ব ও প্রেম। তিন বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা আংটিবদল করেন। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ধুমধাম করে বিয়ে হয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ও বেসরকারি চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপুর।
সান নিউজ/এমকেএইচ