বিনোদন ডেস্ক: অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন নাটক-চলচ্চিত্রে নিজের অভিনয়ে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন। কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও রয়েছে সুখ্যাতি। লেখক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন ১২ অক্টোবর, ৪০তম জন্মদিন পালন করলেন। এ বিষয়ে ১৩ অক্টোবর তিনি নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট লেখেন।
লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ১২ অক্টোবর, আমার জন্মদিন। বয়স ৪০ হলো এবার। আয়নায় তাকালে চুলের রূপালী আভা দেখতে পাই- বেশ লাগে আমার! বাংলাদেশের নারীদের গড় আয়ু ৭৫ হিসেবে আমি অর্ধেকের বেশি সময় পার করে ফেলেছি! অথচ আমার মনে হয় ‘এইতো সেদিন!’
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে কেজি ওয়ানে ভর্তি হয়েছিলাম। নাচের মেয়ে বলে অন্য বাচ্চাদের না থাকলেও আমার শাড়ি গয়না ছিলো। ক্লাসে শাড়ি গয়নার বাহারি গল্প করতে গিয়ে কানে ধরে ক্লাসের বাইরে করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি পেলাম। ঠিক সেসময়ই ২ ক্লাস উপরে পড়া বড় ভাই তার বন্ধুকে নিয়ে এলো ছোটবোনের ক্লাসে। কান ধরা আমি তখন দরজার পাশে দাঁড়ানো! আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে ভাইয়া তার বন্ধুকে বললো- “আমার ছোটবোন তো ক্লাসে নেই। মনে হয় বাথরুমে গেছে!” বাসায় ফেরার পর ভাইয়ার হাতে দুমাদুম মার খেয়েছিলাম।
ক্লাস ওয়ান থেকে ভিকারুননিসা নূন এর পাঠ শুরু হলো। দুর্দান্ত সব শিক্ষক, জুনিয়র সেকশন আর সিনিয়র সেকশনের মাঝে বিশাল মাঠ, শিউলিতলায় কুড়ানো ফুলের মালা গেঁথে প্রিয় শিক্ষকের টেবিলে রাখা, ফকরুদ্দিন বাবুর্চির টিফিন (বিশেষ করে কাবাব পরোটা), জলি আচার, টিফিন পিরিয়ডে স্কুল গেইটের ফাঁক দিয়ে ১ টাকা দিয়ে কেনা আমড়া কিংবা ঝালমুড়ি, বছরের শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রিহার্সেল আর আমাদের প্রিয় হামিদা আলী আপা- আহা কি সুন্দর সব দিন…
কলেজে উঠে মনে হলো পাখা গজিয়ে গেছে! এখন যা ইচ্ছা তাই করার দিন! ততদিনে আমার নক্ষত্রের রাত শেষ, আজ রবিবার চলছে… রাস্তায় বের হলে সবাই মাথা ঘুরিয়ে একবার দেখে- কেউ কেউ আবার অটোগ্রাফও চায়!! আমার কেমন যেন ভালোই লাগে!
থাক। ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে কাজ নেই। যা বলার জন্য বসেছি তা বলি।
৪০ বছরে না পাওয়া অনেক। কিন্তু পাওয়ার ঝুলিটা অনেক বেশি বড়! সবচেয়ে বড় পাওয়া মানুষের নি:স্বার্থ ভালোবাসা। এই ভালোবাসার ঋণ নিয়ে বাকি জীবনটুকু কাটিয়ে দিতে চাই। আমার ৪০তম জন্মদিনে পরিচিত/অপরিচিত যারা আমাকে শুভকামনা জানিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা।
“অধিক করি না আশা, কিসের বিষাদ,
জনমেছি দু দিনের তরে--
যাহা মনে আসে তাই আপনার মনে
গান গাই আনন্দের ভরে।
এ আমার গানগুলি দু দণ্ডের গান
রবে না রবে না চিরদিন--
পুরব-আকাশ হতে উঠিবে উচ্ছ্বাস,
পশ্চিমেতে হইবে বিলীন।
তাই বলি, প্রাণ ওরে, গান গা পাখির মতো,
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ শোক ভুলি--
তুই যাবি, গান যাবে, একসাথে ভেসে যাবে
তুই আর তোর গানগুলি।
মিশিবি সে সিন্ধুজলে অনন্তসাগরতলে,
একসাথে শুয়ে রবি প্রাণ,
তুই আর তোর এই গান।”
সান নিউজ/এফএআর