বিনোদন ডেস্ক : খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ। তাকে আদর্শ মেনে কত যে নাম না জানা তরুণরা চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখে বড় হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে তা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে আরও এক গুণীজন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশফাক মিশুক মুনীর।
আজ এই দুইজন গুণী মানুষের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারা নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় আরও তিনজন নিহত হন। তারা হলেন- চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল।
তারেক মাসুদের জন্ম ৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬, ফরিদপুরের ভাঙায়। তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায়। অনেক বিধিনিষেধের মধ্যে তাকে থাকতে হয়েছিল সেখানে। মাদ্রাসার উল্টোদিকে পার্ক ছিল সেখানে ছেলেরা খেলত আর তিনি তাকিয়ে শুধু দেখতেন। সাহস করে খেলতে গেলে শাস্তি পেতে হত।
১৯৭১ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা শেষ করেন। ম্যাট্রিক পাশ করেন ফরিদপুর থেকেই আর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক করেন, স্নাতকোত্তর শেষ করেননি। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। বাংলাদেশে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে তিনি পথিকৃৎ।
তার নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ- সোনার বেড়ি (১৯৮৫), আদম সুরত (১৯৮৯), সে (১৯৯৩), ইউনিসন (১৯৯৪), মুক্তির গান (১৯৯৬, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ফিল্ম সাউথ এশিয়া), ভয়েসেস অফ চিলড্রেন (১৯৯৭), শিশুকণ্ঠ (১৯৯৭), ইন দ্য নেম অফ সেফটি (১৯৯৮), নিরাপত্তার নামে (১৯৯৯), মুক্তির কথা (১৯৯৯, থ্রি কন্টিনেন্টস ফেস্টিভাল), নারীর কথা (২০০০), অ্যা কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড (২০০২), মাটির ময়না (২০০২, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, কেরালা চলচ্চিত্র উৎসব ও কান ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট), অন্তর্যাত্রা (২০০৬, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল), কানসাটের পথে (২০০৮), নরসুন্দর (২০০৯) ও রানওয়ে (২০১০, মেরিল প্রথম আলো)।
'কাগজের ফুল' নামে আরেকটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন তিনি কিন্তু শেষ করতে পারেননি।
তারেক মাসুদ বিয়ে করেন ক্যাথরিন মাসুদ-কে। ক্যাথরিন মার্কিন নাগরিক। দুজনে মিলে নির্মাণে যুক্ত ছিলেন। যাকে বলা হয় তারকা নির্মাতা দম্পতি। দুজনে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও খোলেন 'অডিও ভিশন' নামে। তারেক মাসুদ 'বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরাম'-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট 'কাগজের ফুল' ছবির লোকেশন দেখতে গিয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তারেক মাসুদের। তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরও তার সঙ্গেই মারা যান। বিপরীত দিক থেকে আসা বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু ঘটে।
মৃত্যুর পর তার কাজ নিয়ে 'চলচ্চিত্রযাত্রা' নামে একটি বই প্রকাশিত হয় যার ভূমিকা লেখেন ক্যাথরিন মাসুদ। প্রসূন রহমানের পরিচালনায় 'ফেরা' নামে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে তারেক মাসুদ দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু ভবিষ্যৎ বাণী করেন যার অনেককিছুই আজকে সত্য হয়েছে।
চলচ্চিত্র নির্মাণের যে স্কুলিং তা যদি না থাকে তাহলে অনেকেই এটিকে সহজভাবে গ্রহণ করবে বলেছেন তিনি এবং আজকে অনেকের কাছেই চলচ্চিত্র নির্মাণ সহজ কাজে পরিণত হয়েছে। সাধারণ সিনেমাহলের ভবিষ্যত নেই এবং মাল্টিপ্লেক্সেই এগিয়ে যাবার যে সম্ভাবনা তিনি বলেছিলেন আজকে সেটিও ফলেছে।
সাননিউজ/এমএইচ