বিনোদন প্রতিবেদক : ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িক পরীমনিসহ আরও দুই বাংলাদেশী মডেলের গ্রেফতারের ঘটনায় মুখ খুলেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। একাধিক ফেসবুক পোস্টে তিনি পুরুষশাসিত সমাজের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। দেশের 'সুশীল সমাজ' মূলত পুরুষ ও অর্থবান ধনী পুরুষদের ক্ষমতায়নকেই কায়েম করে চলেছে বলেও মন্তব্য করে এ লেখিকা।
তসলিমার যা লিখেছেন তার মূল আক্রমণ সরাসরি বাংলাদেশের পুরুষশাসিত সামাজিক পরিকাঠামোই। সমাজ পুরুষশাসিত, আর এর উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে যাবতীয় সামাজিক নিয়ম। একাধিক ধর্ম থাকলেও সর্বত্রই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে পুরুষদের। সেই পথে হেঁটে ক্রমশ অবক্ষয়ের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এমনই দাবি করলেন ওই দেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
বুধবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজের তার পোস্টে তসলিমা দাবি করেন, বাংলাদেশে প্রগতিশীল মেয়েদের ‘বেশ্যা’ বলে গণ্য করা হয়। এটাই নাকি বাংলাদেশের সংজ্ঞা। নিজের এই বক্তব্যের ভিত্তিতে যুক্তিও দিয়েছেন তিনি। তসলিমা লিখেন, ‘বাংলাদেশের সংজ্ঞা। পুরুষেরা লোভ করলে? –অ্যামবিশাস। মেয়েরা লোভ করলে?–বেশ্যা। পুরুষেরা মদ খেলে? –স্মার্ট। মেয়েরা মদ খেলে? –বেশ্যা। পুরুষেরা নাচলে?–কালচার্ড। মেয়েরা নাচলে? –বেশ্যা। পুরুষেরা ক্লাবে গেলে? —রিচ। মেয়েরা ক্লাবে গেলে? –বেশ্যা।’
এর আগে দুপুরের দিকে আরও একটি পোস্ট করেন তিনি। যেখানে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের সুশীল সমাজ প্রায়ই এক একটি মেয়ের বিরুদ্ধে উন্মাদ হয়ে ওঠে। মেয়েগুলো সাধারণত ধনী এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শিকার। চতুর ব্যবসায়ীরা এই মেয়েদের ব্যবহার করে তাদের অবৈধ ব্যবসার কাজে, এই মেয়েদের হোটেলের বারে গিয়ে মদ খেতে শেখায়, ক্লাবে গিয়ে নাচতে শেখায়। এই মেয়েদের তারা তাদের হাতের পুতুল বানায়। এদের এক্সপ্লয়েট করাটা তাদের জন্য সহজ। কারণ মেয়েগুলো নিতান্তই নিরীহ। হয়তো গরিব পরিবারের মেয়ে, শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব একটা নেই, হয়তো হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে, ডিভোর্সি, পায়ের তলায় মাটি চাইছে। শিকারী পুরুষগুলোর পাতা ফাঁদে পড়ে যায় এরা, অথবা পড়তে এদের বাধ্য করা হয়। সুশীল সমাজ ধনী পুরুষদের বড় সমীহ করে চলে। বদনাম করার জন্য বেছে নেয় ওই নিরীহ মেয়েদের।’
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে পরীমনি প্রসঙ্গে আরও একটি লেখা পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘র্যাবের ব্রিফিং দেখলাম পরীমনিকে নিয়ে। আমি শুধু শুনতে চাইছিলাম কত ভয়ংকর অপরাধ করেছে পরীমনি। তার অপরাধের মধ্যে রয়েছে- পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে স্মৃতিমণি ওরফে পরীমনি সিনেমায় রাতারাতি চান্স পেয়ে গেছে, তার বাড়িতে বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে, তার বাড়িতে একখানা মিনি বার আছে, পরীমনি মদ্যপান করে ও মাদকাসক্ত, নজরুল ইসলাম নামের এক প্রযোজক তাকে সাহায্য করেছিলো সিনেমায় নামতে ও মাঝে মধ্যে পরীমনির বাড়িতে আসে, আইসসহ মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে (এগুলোর চেহারা অবশ্য দেখানো হয়নি)এবং মদ খাওয়ার বা সংগ্রহ করার মেয়াদোর্ত্তীর্ণ লাইসেন্স আছে কিন্তু সে রিনিউ করেনি। তারপর আরও কিছু খবর দেখলাম, পরীমনি পর্নো ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিলো। না এটিরও প্রমাণ কিছু দেখানো হয়নি।’
তিনি আরও লিখেন, ‘মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনওটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধু বান্ধব আসা, এক সঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। কারও সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারো সাহায্যে মডেলিং এ চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। কোনো উত্তেজক বড়ি যদি সে নিজে খায় অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউ-এ দেরি হওয়া কোনো অপরাধ নয়। ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। অপরাধ তবে কোথায়? যে অপরাধের জন্য দামি গ্লেন ফিডিশ মল্ট হুইস্কিগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলো, মেয়েটাকে গ্রেফতার করা হলো!’
তসলিমা বলেন, ‘যে কয়টা মদ ভর্তি বোতল দেখা গেল পরীমনির বাড়িতে, মদের লাইসেন্স যাদের আছে, তাদের বেসমেন্টের সেলারে এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। একটা দুটো পার্টিতেই সব সাবাড় হয়ে যায়। পরীমনি আবার মদ শেষ হয়ে গেলে খালি বোতল জমিয়ে রাখে। বোতলগুলো দেখতে ভালো বলেই হয়তো। কী জানি, এও আবার অপরাধের তালিকার মধ্যে পড়ে কিনা।’
সত্যিকার অপরাধ খুঁজছি উল্লেখ করে তিনি সেখানে বলেন, ‘কাউকে কি জোর করে মাদক, মদ গিলিয়েছে, প্রতারণা করেছে মেয়েটি? অনেকে বলছিল খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসে ধনী হয়েছে পরীমনি। গরিব থেকে ধনী হওয়া পুরুষগুলোকে মানুষ সাধারণত খুব প্রশংসা করে। কিন্তু মেয়ে যদি গরিব থেকে ধনী হয়, তাহলেই চোখ কপালে ওঠে মানুষের। কী করে হলো, নিশ্চয়ই শুয়েছে। যদি শুয়েই থাকে, তাহলে কি জোর করে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুয়েছে? ধর্ষণ করেছে কাউকে, পুরুষেরা যেমন দিন-রাত ধর্ষণ করে মেয়েদের, সেরকম কোনো ধর্ষণ?’
অপরাধ খুঁজছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে আন্দোলনের মুখে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হন বহুল আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি সুইডেনের পাসপোর্টধারী হিসেবে ভারতে বসবাস করছেন। নিজেকে নারীবাদী বলে দাবি করে লিখেছেন বিভিন্ন বই। সেই সঙ্গে নিজের মতো করে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সাননিউজ/এমএইচ