জাহিদ রাকিব
মুক্তিযোদ্ধা ও গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের জীবনের আক্ষেপ ছিলো তার জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় পদক না পাওয়া। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর এ কথা জানান।
সুরাইয়া আলমগীর বলেন, ফকির আলমগীরের হাজারও গান যেনো সংরক্ষণ করা হয়। জীবদ্দশায় তার খুব আক্ষেপ ছিলো একটি রাষ্ট্রীয় পদক না পাওয়াতে। আমি প্রধামন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাবো, মরণোত্তর হলেও ফকির আলমগীরকে একটি রাষ্ট্রীয় পদক দিলে তার অতৃপ্ত আত্মা শান্তি পাবে।
এর আগে বৃষ্টি আর লকডাউন উপেক্ষা করে ফকির আলমগীরের নিথর দেহ বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি এসে থামে শহীদ মিনারের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। তারও আগে থেকেই অনেকে সেখানে উপস্থিত। কারও হাতে ফুলের তোড়া, কারও মাথায় ছাতা। শহীদ মিনারের বেদিতে ফকির আলমগীরের জন্য সব গুছিয়ে রেখেছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ প্রমুখ।
শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
তা ছাড়া আরও শ্রদ্ধা জানায়, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে মৃত্যু হয় ফকির আলমগীরের। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
১৮ জুলাই থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন ফকির আলমগীর। এর আগে করোনা পজিটিভ হওয়ায় ১৫ জুলাই রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
ফকির আলমগীরের জন্ম ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে।
১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে পাস করে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন।
১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন ফকির আলমগীর। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংগীত বলয়ে প্রবেশ করেন তিনি।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ফকির আলমগীর একজন শব্দসৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।
সান নিউজ/এফএআর