বিনোদন ডেস্ক:
২০০৫ সালে ‘রোগ’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন ইরফান খান। এ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা পায় বলিউড ও হলিউডের এই অভিনেতা। এর পরে আর পিছে তাকাতে হয়নি অভিনেতা ইরফান খানকে।
তবে আজ মন ভাল নেই বলিউডের। দেশ জুড়ে চরম দুঃসময়ের মধ্যেই আরও এক দুঃসংবাদ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা গেলেন অভিনেতা ইরফান খান। কাঁদছে বলিউড। বলছে, ‘তোমার তো এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার কথা ছিল না ইরফান!’
বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালবেলায় ইরফানের দীর্ঘদিনের বন্ধু, পরিচালক সুজিত সরকার টুইটারে প্রথম জানিয়েছিলেন খবরটি। “প্রিয় বন্ধু। তুমি যুদ্ধ করেছ, করেই গিয়েছ…করেই গিয়েছ…তোমার জন্য আমি গর্বিত। সুতপার (ইরফানের স্ত্রী) জন্য সমবেদনা। তোমাকেও স্যালুট। লড়াইটা তো শুধু ইরফানের একার ছিল না”, সুজিতের ওই টুইটেই চমকে উঠেছিল সেলিব্রেটি মহল। সকলেই প্রার্থনা করেছিলেন, খবরটা যেন মিথ্যে হয়।
কিন্তু মৃত্যু যে পরম সত্য। মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফেরা হল না ইরফানের। অমিতাভ বচ্চন হতবাক। “অসামান্য অভিনয়শৈলী। সিনেমা জগতে তার এই শূন্যতা পূর্ণ করবে কে? ’’প্রশ্ন অমিতাভের। ‘পিকু’-তে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন তাঁরা। আজ কি হঠাৎ করেই তার সঙ্গে কাটানো সেই শুটিং ফ্লোরের না বলা গল্পগুলো বেশি করে মনে পড়ছে অমিতাভের?
বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অজয় দেবগণ শোকে মুহ্যমান। পরিণীতির মনে পড়ে যাচ্ছে ইরফানের সঙ্গে হওয়া প্রতিটি আলাপচারিতার কথা। “সবচেয়ে ভাল, কুলেস্ট মানুষ ছিলে। তুমিই আসল যোদ্ধা। ভালবাসি তোমাকে’’, লিখেছেন তিনি। অক্ষয় কুমার, রিচা চাড্ডা, আলি ফয়জল, রাধিকা আপ্তে— কারও যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ইরফান আর নেই। এই তো সুস্থ হয়ে ফিরলেন, কামব্যাক করলেন ‘আংরেজি মিডিয়াম’ দিয়ে...কোথা থেকে কী হয়ে গেল, বুঝে উঠতেই পারছে না বলি-মহল। তাপসী পান্নুর টুইটে বিষাদ চুঁইয়ে পড়ছে। তিনি বিশ্বাস করতে চান না খবরটা।
নিজেই লিখছেন, “যে মুহূর্তে আমরা ভেবে নিয়েছিলাম করোনা পরিস্থিতির থেকে খারাপ আর কিছুই হতে পারে না, ঠিক সেই মুহূর্তেই এ রকম একটা খবর। বিশ্বাস করতে চাই না তুমি নেই। তোমার সৃষ্টি, তোমার কাজ দেখতে থাকব আর ভাবব এই তো, তুমি আছ, ঠিক পাশেই।’’
‘সাত খুন মাফ’-এ একসঙ্গে কাজ করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা-ইরফান। বিদেশে বসে প্রিয়ঙ্কাও আজ শোকস্তব্ধ। তার ক্যারিশ্মায় বুঁদ ছিলেন প্রিয়ঙ্কা, অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন একদা ‘মিস ওয়ার্ল্ড’। মন খারাপ কাজলেরও। অনুষ্কাও সামলাতে পারছেন না নিজেকে। তিনি লিখছেন, “যুদ্ধ করেছিলেন। জেতা হল না। আমার অনুপ্রেরণা আপনি।’’
সোনম কপূর, রবিনা টন্ডন, অনুপম খের— সবারই আজ মনে পড়ছে প্রিয় অভিনেতাকে। স্মৃতিচারণায় দ্রব হতে হতে কেউ টুইটে, আবার কেউ বা ইনস্টাগ্রামে মনে করছেন একসঙ্গে কাটানো দিনের কথা।
জয়পুরের এক অখ্যাত কলোনিতে বেড়ে ওঠা ছেলেটির কিন্তু অভিনয়ে আসার কোনও কথাই ছিল না। হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। সিকে নাইডু ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেয়েও খেলেননিইরফান। ভাগ্য বোধহয় অন্য গল্প লিখেছিল তার জন্য। দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-য় পড়তে এলেন। থিয়েটার, সিরিয়াল, সিনেমা...তৈরি করলেন মাইলস্টোন।
তার কাজের গুণমুগ্ধ ছিলেন কমল হাসানও। “আরও একটু বেশি দিন না হয় থাকতে পারতে”, আক্ষেপ করছেন তিনিও। ‘সালাম বম্বে’ থেকে ‘আংরেজি মিডিয়াম’,তার প্রতিটি ছবি একে অন্যের থেকে আলাদা। টাইপকাস্ট করেননি নিজেকে। তার অভিনয়ক্ষমতা করতে দেয়নি তাকে। ডার্ক চরিত্র থেকে ‘পাই’-এর বড়বেলা, কিংবা আবার ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এ ‘গরিব’ হতে চাওয়া এক ‘অসহায়’ বাবার আর্তি...সবেতেই নিজের ছাপ রেখেছেন তিনি।
আর সে জন্যই পরিচালক কর্ণ জোহর লিখেছেন, “এক জন শিল্পীর সীমাবদ্ধতাকে প্রতি দিন, প্রতিটি ছবির মাধ্যমে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ। সিনেমাকে সমৃদ্ধ করার জন্য তোমায় ধন্যবাদ।’’
সান নিউজ/আরএইচ