বিনোদন প্রতিবেদক: ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’- এমন অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। কখনোও তিনি থাকেন সাভারে আবার কখনোও কুষ্টিয়ায়। এবারের ঈদ করেছেন কুষ্টিয়ার জেলখানা মোড়ের সরকারের দেয়া বাড়িতে। কিন্তু এই মুহুর্তে তার আর্জি একটাই টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। কিছুদিন আগে গিয়েছিলেন সাভার এনাম মেডিকল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু টাকা না থাকায় ভর্তি করেনি মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।
ৃ
করোনা মহামারি সংক্রমণ রোধে লকডাউনের কারণে কোথাও কোন গান-বাজনার অনুষ্ঠান না থাকার পাশাপাশি শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঘরেই পড়ে আছেন এই শিল্পী। কোন রকমে খেয়ে-পরে দিনাতিপাত করছেন। টাকার অভাবে চিকিৎস্যা করাতেও পারছেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা করানো পুরোনো প্রেসক্রিপশন অনুসারে ওষুধ খাচ্ছেন তিনি। কিন্তু সেই ওষুধ কেনার টাকাও তার কাছে এখন নেই।
সান নিউজ তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে বাংলার লোকগান ও বাউল গানের এই কিংবদন্তী এমন বাস্তবতার কথাই জানালেন। সেই সঙ্গে ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত এই শিল্পী জানালেন-এবারের ঈদ তার কেমন কাটলো, কেমন আছেন নানা বিষয়। কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত লোকগানের শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়ার সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন সাননিউজের বিনোদন প্রতিবেদক।
সান নিউজ : কেমন আছেন-আপনি? কোথায় আছেন, সাভারে না কুষ্টিয়ায়?
কাঙালিনী সুফিয়া : আল্লায় রাখছে কোন রকম। বেঁচে আছি। কুষ্টিয়ার জেলখানার মোড়ে সরকারের দেয়া ঘরে আছি। কদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। গতকাল থেকে তো শরীর খুব খারাপ। বিছানা থেকে শরীর তুলতেই পারছি না। প্রচন্ড ব্যথা। কমর থেকে শুরু করে সারা শরীর ব্যথা। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে।
সান নিউজ : ওষুধ খাচ্ছেন না? চিকিৎসা করাচ্ছেন না, ডাক্তার দেখিয়েছেন ?
কাঙালিনী সুফিয়া : না। কুষ্টিয়াতে আসার আগে সাভারের এনাম মেডিকেলে গিয়েছিলাম; কিন্তু তারা এবার টাকা নেই বলে আমাকে ভর্তি করেনি। কি করবো! একবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ছিলাম, তখন তারা যে ওষুধ লিখে দিয়েছিল সেই পুরনো ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে ওষুধ খাচ্ছি। তাও আবার ঠিক মতো কিনতে পারছি না। কি করে কিনবো, টাকা-পয়সাই তো নেই।
সান নিউজ : সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছেন না ?
কাঙালিনী সুফিয়া : হ্যা। প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে পাই। সেটাই পাচ্ছি। করোনার কারণে কোথাও কোন গান-বাজনা নাই, লালন সাঁইজির মাজারে যাবো তাও যেতে পারছি না! গান গাইতেও পারছি না। কি করে চলবো-ভাই। দিন যায় না!
সান নিউজ : ঈদ কাটালেন কিভাবে?
কাঙালিনী সুফিয়া : একজন কিছু টাকা দিয়েছিলো। তার নাম টিপু না কি যেন। তার স্ত্রী আমার ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে... গানটা গাইবে বলে অনুমতি নিয়ে এই টাকা দেয়। তা দিয়েই কোনরকম ঈদ কাটালাম।
সান নিউজ : ঈদের কেনাকাটা করেছিলেন কিছু?
কাঙালিনী সুফিয়া : ঈদের কেনাকাটা করব কি দিয়ে, পয়সা কড়ি নেই। কিছু কেনাকাটা করতে পারিনি। খাবার, ওষুধ কেনার টাকা নেই; ঈদের জন্য কি কিনবো? তাছাড়া, আমরা বাউল-শিল্পী। ঈদের জন্য কেনাকাটা করার তেমন চাহিদাও নেই। মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা আছে তাদের জন্য কিছু কিনে দিতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু তা তো পারিনি আমি। আসলে কি জানো-ভাই, শিল্পীদের কোনো মূল্য নেই। আমি শাড়ি পড়ে থাকি, সেই শাড়ি কেনার টাকা নেই! এই জন্য সালোয়ার কামিজ পরি বলে; তা দেখে অনেকে হাসে!
সাননিউজ/টিএস/