বিনোদন ডেস্ক: বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
কবরী ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন । এরপর খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই পা রাখেন সিনেমায়। একের পর এক নন্দিত সব সিনেমা উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হয়ে ওঠেন এই অঙ্গনের কিংবদন্তি। কবরীর ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমার কথা তুলে ধরা হলো।
সুতরাং
১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার মাধ্যমেই রূপালী পর্দায় কবরীর অভিষেক। পরিচালক সুভাষ দত্ত। এতে নির্মাতা-নায়কের সঙ্গে জুটি বাঁধেন কবরী। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্মাননা পায় এটি। সিনেমাটি ১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুট চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার পায়। তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই সিনেমার মাধ্যমে ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাতি পান কবরী।
নীল আকাশের নীচে
সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালে। পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা। তৎকালীন বাঙালি পরিবারের গল্পই সিনেমাটির প্রাণ। এতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক ও কবরী। ‘হেসে খেলে জীবনটা’, ‘নীল আকাশের নিচে আমি’, ‘গান হয়ে এলে’ ও ‘প্রেমের নাম বেদনা’-এই সিনেমার সবগুলো গানই পায় তুমুল জনপ্রিয়তা।
রংবাজ
রাজ্জাক-কবরী জুটির আরেক কালজয়ী সিনেমা। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেন জহিরুল হক। এর ‘হৈ হৈ হৈ রঙিলা’, ‘সে যে কেন এলো না’ গান দুটি এখনও মানুষের মুখে মুখে। বাংলা সিনেমার পালাবদলে এ সিনেমা বিরাট ভূমিকা রাখে।
তিতাস একটি নদীর নাম
ঋত্বিক ঘটকের কালজয়ী সিনেমা। সাহিত্যনির্ভর এই সিনেমাটি অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭৩ সালে তৈরি হয়। এ সিনেমায় রাজার ঝি চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন কবরী। অনেকের মতে কবরী মূলত ‘কবরী’ হয়ে উঠেছেন এই সিনেমার কল্যাণে।
বেঈমান
কবরী অভিনীত আরেক আলোচিত ও সফল সিনেমা। এ সিনেমায়ও তার নায়ক ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। গানগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি পরিচালনা করেন রুহুল আমিন।
মাসুদ রানা
গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানাকে নিয়ে এই সিনেমা। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা চরিত্রটি পর্দায় উঠে আসে। এর প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন নায়ক সোহেল রানা। চলচ্চিত্রে মাসুদ রানা হয়ে অভিনয় করেন সোহেল রানা নিজেই। তার বিপরীতে ছিলেন অলিভিয়া ও কবরী। এর মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র নতুনত্বের স্বাদ পায় দর্শকরা। মুক্তিকাল ১৯৭৪ সাল।
সুজন সখী
কবরী-ফারুক অভিনীত এ সিনেমাকে বাংলা ভাষার অন্যতম রোমান্টিক সিনেমা বলা হয়। প্রমোদ কর ছদ্মনামে সিনেমাটি পরিচালনা করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে দুই ভাইয়ের আলাদা হয়ে যাওয়া ও তাদের মিলনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। জনপ্রিয়তার কারণে ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি ১৯৯৪ সালে রিমেক হয়েছিল। এতে অভিনয় করেন সালমান শাহ ও শাবনূর।
সারেং বউ
সিনেমাটিকে বলা যায় নারীর জীবনযুদ্ধের অন্যতম দলিল। ‘সারেং বউ’ উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের একটি গ্রামের সহজ সরল মেয়ে নবিতুন এর গল্প। এই সিনেমার মাধ্যমেই প্রথম এবং একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের স্বাদ পান কবরী। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে কবরীর নায়ক ছিলেন ফারুক। পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন।
আরাধনা
মুক্তি পায় ১৯৭৯ সালে। রাজু সিরাজ পরিচালিত এই সিনেমায় মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে রুপার ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেন কবরী। এতে তার নায়ক ছিলেন বুলবুল আহমেদ।
দেবদাস
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সিনেমা ‘দেবদাস’। এর পার্বতী হিসেবে হাজির হয়েছিলেন কবরী। বলাই বাহুল্য, এতে তুমুল প্রশংসিত হন তিনি ও নায়ক বুলবুল আহমেদ। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে।
স্মৃতিটুকু থাক
মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে। আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘স্মৃতিটুকু থাক’ সেলুলয়েড পর্দার বাইরেও অন্যভাবে আলোচিত। কারণ এই নাম ব্যবহার করেই কবরী প্রকাশিত করেন তার আত্মজীবনী। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘স্মৃতিটুকু থাক’ নামের বইটি।
অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন কবরী।
সাননিউজ/এএসএম