বিনোদন ডেস্ক:
ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে।
আর সে ধারাবাহিকতায় ঐতিহাসিক ব্যাক্তির জন্মদিনও স্থান পায় ইতিহাসের খেরুখাতায়। যা বছর ঘুরেই দিনতারিখের পৃষ্টা উল্টালেই ফিরে আসে বার বার।
আজ ১৬ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার। ০৩ বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের আজ জন্মদিন। ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল ইংল্যান্ডের দক্ষিণ লন্ডনের ওয়েলওর্থের বার্লো স্ট্রিটে তার জন্ম। সেই সূত্রে আজ তার জন্মদিন। চ্যাপলিনের বাবার নাম চার্লস চ্যাপলিন আর মা হানা চ্যাপলিন। বাবা-মা দুজনই বিনোদন জগতে কাজ করতেন এ জন্য স্বাভাবিকভাবেই চার্লির ভেতরেও শৈল্পিক দিকগুলো কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।
পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র। ছিলেন একজন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও সুরকার। হলিউড সিনেমার শুরুর সময় থেকে মধ্যকাল পর্যন্ত তিনি তার অভিনয় ও পরিচালনা দিয়ে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেন।
চ্যাপলিনকে চলচ্চিত্রের পর্দায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের একজন বলেও বিবেচনা করা হয়।
নাকের নিচে নকল ছোট গোঁফ, মাথায় টুপি, হাতে ছড়ি, ঢিলেঢালা প্যান্ট, আঁটসাঁট কোট, ঢাউস আকারের জুতো তাও আবার উল্টো করে হেঁটে বেড়াচ্ছেন আর তাই দেখে দর্শকরা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। লোকটি যখন হাসছে, দর্শকদের চোখে তখন জল। আর লোকটি যখন কাঁদছে, তখন দর্শকদের হাসতে হাসতে দম বন্ধ হবার জোগাড়।
অত্যন্ত দারিদ্র্য ও কষ্টের মাঝে শৈশব পার করেছেন বলেই হয়তো তিনি খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতেন, আনন্দ মানুষের জীবনে কতটা প্রয়োজন।
বাবার অনুপস্থিতিতে পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে তাকে নয় বছর বয়সের আগেই রোজগারে নামতে হয়। আর ১৪ বছর বয়সে মাকে পাগলাগারদে পাঠানো হয়। চ্যাপলিন তার শৈশব থেকেই শিশুশিল্পী হিসেবে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রঙ্গশালায় সফর করেন এবং পরে একজন মঞ্চাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি স্বনামধন্য ফ্রেড কার্নো কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন, যারা তাকে যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিয়ে যায়। চ্যাপলিন সেখানে হলিউড চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯১৪ সালে কিস্টোন স্টুডিওজের হয়ে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন। অচিরেই তিনি তার নিজের সৃষ্ট ভবঘুরে ‘দ্য ট্রাম্প’ চরিত্রের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন এবং তার অনেক ভক্তকূল গড়ে ওঠে।
চ্যাপলিন শুরুর দিক থেকেই তার চলচ্চিত্রগুলো পরিচালনা করতেন এবং পরবর্তীতে এসানে, মিউচুয়াল ও ফার্স্ট ন্যাশনাল করপোরেশনের হয়েও চলচ্চিত্র পরিচালনা চালিয়ে যান। ১৯১৮ সালের মধ্যে তিনি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করেন।
নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের অন্যতম মৌলিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব চ্যাপলিন নিজের সিনেমাতে নিজেই অভিনয় করতেন, এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা, পরিচালনা, প্রযোজনা এমনকি সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন। তার চলচ্চিত্রগুলোতে বৈরীতার সাথে দ্য ট্রাম্পের সংগ্রামের করুণ রসের স্ল্যাপস্টিক হাস্যরস বিদ্যমান ছিল। কয়েকটি চলচ্চিত্রে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তু ছিল এবং কয়েকটিতে আত্মজীবনীমূলক উপাদান ছিল।
চার্লি চ্যাপলিনের ৭৫ বছরের দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনটি বাদে বাকি সব চলচ্চিত্রই ছিল নির্বাক। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কথা বলেন ১৯৪০ সালে, দ্য গ্রেট ডিকটেটর চলচ্চিত্রে।
চার্লি চ্যাপলিন একাধারে অভিনেতা, গায়ক, চিত্রনাট্যকার, গল্প লেখক, পরিচালক, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালকসহ আরো বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত। এই মানুষটি একটি দুর্বিষহ শৈশব পার করে এলেও জীবনের কাছে কখনো হার মানেননি।
১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর চার্লি চ্যাপলিন প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় সুইজারল্যান্ডে মারা যান। ১৯৭৮ সালের ৩ মার্চ সুইজারল্যান্ডের করসিয়ার-সার-ভেভে গোরস্তান থেকে চুরি হয়ে যায় চার্লি চ্যাপলিনের মৃতদেহ।
অবশেষে ১৮ মার্চ পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে এবং পুনরায় সমাহিত করা হয় চার্লি চ্যাপলিনকে।
সান নিউজ/সালি