সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক : করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ স্লোগানে প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১’।
চিলড্রেন’স্ ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় শিশুদের এ চলচ্চিত্র উৎসবের এটি ১৪তম আসর। আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে শুরু হবে এ শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। শেষ হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি।
এ উপলক্ষে শনিবার বিকেল ৪টায় শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বর ও শওকত ওসমান মিলনায়তনে হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এ আয়োজনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আয়োজক সংস্থার সভাপতি মোরশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ধানমন্ডির আলিয়ঁস্ ফ্রঁসেজে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উৎসব পরিচালক ফারিহা জান্নাত মিম।
সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হন চিলড্রেন’স্ ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও উপদেষ্টা ইয়াসমিন হক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন উৎসবটির সহ-পরিচালক রওনক জাহান রাফা, আয়োজক কমিটির নির্বাহী সদস্য আবীর ফেরদৌস মুখর, অনুষ্ঠান সম্পাদক রায়ীদ মোরশেদ মনন ও আলিয়ঁস্ ফ্রসেঁজের পরিচালক অলিভিয়া দঁতজে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, প্রতিষ্ঠার পর ভেবেছিলাম আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের চলচ্চিত্র দেখাবো; কিন্তু ধীরেধীরে এর দায়িত্ব শিশু-কিশোররা নিয়ে নেয়, এখন সেটা তারাই পরিচালনা করছে। এই চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ে বড় কোনো শিশু চলচ্চিত্র উৎসব আর আছে কিনা আমার জানা নেই। চলচ্চিত্র সুন্দর একটি মাধ্যম, শিশুদের যতোই দেখানো হবে ততোই ভালো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের উৎসবে ঢাকার ৩টি ভেন্যুতে ৩৭টি দেশের ১৭৯টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরদিন থেকে শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায়; মোট ৪ বার চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
প্রতিটি প্রদর্শনীতে একাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখানো হবে। উৎসবের সকল প্রদর্শনী অভিভাবক, শিশু-কিশোরসহ সবার জন্য উন্মুক্ত। সিনেমা দেখার জন্য কোনো ধরনের প্রবেশমূল্য না থাকলেও এ বছর মাস্ক পরিধানকে চলচ্চিত্র উৎসবের টিকেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পুরো উৎসবটি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিচালনা করা হবে।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় বিভাগ হিসেবে থাকছে বাংলাদেশি শিশুদের নির্মিত প্রতিযোগিতা বিভাগ। এই বিভাগে ৬১টি চলচ্চিত্রের মধ্যে নির্বাচিত ১৯টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এই ১৯টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ৫টি চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। পুরস্কারের জন্য গঠিত ৫ সদস্যের জুরি বোর্ডের সবাই শিশু-কিশোর। ‘ইয়ং বাংলাদেশি ট্যালেন্ট’ শীর্ষক বিভাগে ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ নির্মাতারা অংশ নিবেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে রয়েছে ‘মুক্তির চলচ্চিত্র’ শিরোনামে বিশেষ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বিভাগ। একইসঙ্গে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগ। এ বিভাগে জমা পড়েছিলো ৮১টি দেশের ১১১৬টি চলচ্চিত্র, যার মধ্যে উৎসব কমিটির দ্বারা প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য ৩৭টি দেশের মোট ১১৬টি চলচ্চিত্র।
প্রতিবছরের মতো এবারও এ উৎসবে বিভিন্ন দেশের শিশুদের বানানো চলচ্চিত্র নিয়ে থাকছে প্রতিযোগিতা বিভাগ। যেখান থেকে একটি চলচ্চিত্রকে পুরস্কার দেয়া হবে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নতুন একটি সামাজিক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগ রাখা হয়েছে ‘নিউনরমাল’ শিরোনামে।
এছাড়াও উৎসবে প্রতিনিধিদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
এবার মোট ৪টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে, পরিচালনা ও সিনেমাটোগ্রাফির উপর কর্মশালা নিবেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী ও তাহসিন রহমান, স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর উপর কর্মশালা নিবেন সাদিয়া খালিদ রীতি, প্রোডাকশন ডিজাইনের উপর কর্মশালা নিবেন রঞ্জন রাব্বানী, ফেস্টিভ্যাল সার্কিট সম্পর্কে কর্মশালা নিবেন আবু শাহেদ ইমন। এছাড়া শিশু-তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আড্ডায় উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট র্কনেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, মো. মাশরুকুল হক এবং মারুফা মাশরুক। সেলিব্রেটি আড্ডায় থাকছেন প্রথম বাংলাদেশি নারী এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার। এছাড়া থাকছেন সংগীত শিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্ণব ও সুনিধি নায়েক।
সান নিউজ/আরআই