নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিকৃতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, নাটকের অংশ বিশেষের পরিবেশন, জীবন ও কর্মের উপর ভিডিওচিত্রের প্রদর্শন ও গানে-কথায়-কবিতায় সদ্যপ্রয়াত নাট্যজন মান্নান হীরাকে স্মরণ করেছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই নাট্যশালার বহিরাঙ্গণে মান্নান হীরার বিভিন্ন নাটকের অংশ বিশেষ মঞ্চায়ন করে আরণ্যক নাট্যদল। এরপর নাট্যশালার লবিতে স্থাপিত(সাময়িকভাবে) প্রয়াত এই নাট্যকার ও নির্দেশকের প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায় নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা।
পরে মিলনায়তনের স্মরণানুষ্ঠানে গুনী এই নাট্যজনের স্মৃতিচারণ করেন- নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ, আতাউর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, লাকী ইনাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা, ঝুনা চৌধুরী, পথনাটক পরিষদের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ গিয়াস, নাট্যকার রতন সিদ্দিকী, শাহ আলম দুলাল প্রমুখ।
এ পর্বের শুরুতেই মান্নান হীরার জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রর্দশন করা হয়।
মামুনুর রশীদ বলেন, “মান্নান হীরার কাজের মধ্যেই মানুষের জন্য ভালোবাসা ছিল। তার নাটকে মানুষের জন্য কত সংলাপ ছিল, অথচ তিনি এখন আর সেই সংলাপগুলো লিখবেন না। বড় বেশি ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা দুই বাংলাতেই যারা থিয়েটার করি তাদের সকলের কণ্ঠ ম্রিয়মান। এই ম্রিয়মান কণ্ঠের ভেতর মান্নান হীরা যে আলো ফেলেছিল তা নিভে গেল। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে তার পথনাটকের হাল এখন কে ধরবে? তাও অনিশ্চিত। আশা করি তরুণরা এগিয়ে আসবে। তাকে না বলা অনেক কথা রয়ে গেছে, থেকে যাবে।”
আতাউর রহমান বলেন, “প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন মান্নান হীরা। আমার একটা প্রত্যয় জন্মেছে। নাটকের মানুষগুলোর মধ্যে সম্ভবত আমিই এখন সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ। আমি অনুভব করেছি মান্নান হীরা আমাদের জন্য নিত্য হয়ে থাকবেন। বাঙালি চিরদিন তাকে মনে রাখবে।”
লিয়াকত আলী লাকী বলেন, “এই শিল্পী যেসব সৃষ্টি দিয়ে আমাদের ও আমাদের দেশকে উপকৃত করেছেন, তা অনন্য। তিনি যেসব সৃষ্টি রেখে গেছেন। সেসব নিয়ে আমরা আরও উপকৃত হতে পারি। সাদাসিধে এই মানুষটার সাথে প্রত্যেকের ছিল ভালো সম্পর্ক। তাকে বাইরে থেকে বোঝা যেত না তিনি এমন শিল্পবোধসম্পন্ন একজন মানুষ।”
লাকী ইনাম বলেন, “সবাই চলে যাবে, তবে কিছু কিছু মানুষের চলে যাওয়া সমাজের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। মান্নান হীরাও তাই। আমরা মেধাহীন হয়েও মেধার প্রচারের জন্য উন্মাদ হয়ে যাই। মান্নান হীরা সত্যিকারের মেধাবী হয়েও ছিলেন নিভৃতচারি। মৌলিক নাটকের জায়গায় তার মত আর কেউ নেই। অনেকেই লিখছেন, তবে তার মত মৌলিকত্ব আর কেউ দেখাতে পারেনি। সে সব সময় নিজের থেকেও আমাদের এবং আমাদের সংস্কৃতিকে বেশি ভালোবেসে গেছেন।”
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “আমাদের চেতনার বাতিঘর ও অন্যতম কাণ্ডারি ছিল মান্নান হীরা। সমাজের প্রতি তিনি একজন দায়বদ্ধ মানুষ ছিলেন। জীবনের এমন কোন প্রেক্ষিত নেই যেখানে তিনি শিল্পের আলো ফেলে কাজ করেন নি। তিনি লড়াই করেছে তার চেতনা ও বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে।”
ঝুনা চৌধুরী বলেন, “তাকে নিয়ে আরও বেশি আলোচনা করতে হবে। যারা মনের ভেতর শক্তি যোগায় তাদের মধ্যে মান্নান হীরা অন্যতম। সে একদিকে যেমন বন্ধু, ঠিক তেমনি শিক্ষক ও অনুপ্রেরণার জায়গা।”
অন্য বক্তারা বলেন, মান্নান হীরাকে নিত্য করে রাখতে হলে তাকে চর্চা আবশ্যক। এখন সত্যিকারের নাট্যকার বিরল। সেখানে মান্নান হীরাকে হারানো আমাদের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তার প্রত্যেকটি নাটকে একটি সংগ্রামী চেতনা ও দ্রোহ আছে, যাকে ঘিরে থাকে অসংখ্য নীরব মানুষ। এই বিষয়টি যেন আমাদের সমাজ ও জীবনধারাকেই সামনে তুলে এনেছে।
কথামালার ফাঁকে ফাঁকে আবৃত্তি পরিবেশন করেন-, রফিকুল ইসলাম,শাহাদাৎ হোসেন নিপু, মাহফুজা আক্তার মিরা।এছাড়াও অনুষ্ঠানে শোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন- চেতনা রহমান ভাষা ও কাজী মানাফ।
সান নিউজ/এস