নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি অর্থবছরে জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ কাতারে উঠে আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে। এভাবে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে উদীয়মান শক্তি হিসেবে নিজেদের জানান দিতে সক্ষম হলেও পর্যটনে সবার পেছনে বাংলাদেশ।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশ পর্যটন খাতে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় দেশ। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৯ বছরের বাস্তবতায় পর্যটনশিল্প এখনও নবজাতক পর্যায়েই রয়ে গেছে। দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান মাত্র ২.২ শতাংশ। আর পর্যটন খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান ১.৮ শতাংশ।
অথচ বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল অবকাঠামো নিয়েও পর্যটনে অনেকটা এগিয়ে নেপাল। দেশটির জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৯ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বাংলাদেশে পাহাড়, সাগর, নদী, বন, পুরাকীর্তি, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিসহ পর্যটক আকর্ষণের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষির মতো সরকার অগ্রাধিকার না দেওয়ায় বিপুল সম্ভাবনার খাতটি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে।
প্রধান পর্যটন অঞ্চলগুলোয় দুর্বল অবকাঠামো, প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীরা পর্যটনমনস্ক না হওয়া, পর্যটনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আমলান্ত্রিক জটিলতা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে দেশের পর্যটন শিল্প এগোতে পারছে না।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, বন্দর ও বিমান পরিবহন অবকাঠামো, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, বাসস্থান, আর্থিক মান, স্থিতিশীল ভ্রমণের সুযোগসহ ৯০টি মানদণ্ড বিবেচনা করে ১৪০ দেশের র্যাংকিংয়ে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ততায় বাংলাদেশ এগোনোর পরিবর্তে আরও পিছিয়ে গেছে।
১০৪তম থেকে নেমে গিয়ে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১১৪তম। এটি ভিসার আবশ্যিক শর্ত বাড়ানোর কারণে হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটক সেবা অবকাঠামোতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এই তালিকায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম ও নেপাল ১০২তম।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ও পর্যটন বিশ্লেষক জামিউল আহমেদ বলেন, ‘পর্যটন খাত সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। স্বাধীনতার পর থেকে এই খাতটিকে এগিয়ে নিতে খুব তৎপরতা দেখা যায়নি।
আমরা এত দিনেও একক পর্যটন আইন, ন্যাশনাল ট্যুরিজম ডাটাবেইস, টিএসএ (ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্ট), কিউটিএস (কোয়ালিটি ট্যুরিজম সার্ভিস), প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ও গবেষণা সেল করতে পারিনি।
সারা পৃথিবীতে পর্যটন চলে পর্যটনের নিয়মে আর আমাদের পর্যটন চলে আমলাদের ইচ্ছায়। ফলে এতে না আছে ব্যবস্থাপনা, না আছে কোনও শৃঙ্খলা।বিশ্বজুড়েই পর্যটনের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ মৌসুম হলো চলতি ২০২০ সাল। করোনায় এই খাতে ৪০ লাখ জনবল বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের ওপর নির্ভরশীল কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষ আছে কঠিন সংকটের মধ্যে। করোনার ধাক্কায় দেশে খাতটি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত পর্যটন। শুধু আমাদের ট্যুর অপারেশন খাতেই ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর পরও এই খাতের উদ্যোক্তারা কোনও প্রণোদনা পায়নি।
মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েও কোনও সদুত্তর মেলেনি। বাংলাদেশ ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশনের (বিডি ইনবাউন্ড) সভাপতি রেজাউল একরাম বলেন, ‘বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করার মতো বড় কোনও পদক্ষেপ আমরা নিতে পারিনি। সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশি পর্যটন মেলায় অংশ নিচ্ছেন।
তা থেকে কী ফল আসছে, আমরা জানি না। পর্যটকদের কাছে দেশকে তুলে ধরতে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে না। এ ছাড়া রোড শো, ফ্যাম ট্যুরসহ কার্যকর উদ্যোগ নেই। অনেক দেশ ই ভিসা চালু করলেও আমরা পারিনি।
সান নিউজ/এসএ