বিনোদন ডেস্ক : শৈশব থেকেই অর্থ উপার্জনের কথা ভাবতে হয়েছিল রাখিকে। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, অনিল আম্বানী ও টিনা মুনিমের বিয়েতে তিনি ক্যাটারিং কর্মী হিসেবে খাবার পরিবেশন করেছিলেন। পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ৫০ টাকা।
১০ বছর বয়সে আম্বানী পরিবারে খাবার পরিবেশন করেছিলেন ৫০ টাকায়। তারপর প্রকাশ্যে এসেছে গায়কের চুম্বন থেকে নায়িকার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ।
এখন খ্যাতির আলোয় থাকা রাখি একসময় লড়াই করেছেন অনটনের সঙ্গে। তার জন্ম ১৯৭৮ সালের ২৫ নভেম্বর। রাখি ছিলেন তার মায়ের আগের পক্ষের সন্তান। তবে রাখি আজন্ম তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকেই বাবা হিসেবে পেয়েছেন।
তার মা জয়া দারোয়ান হিসেবে কাজ করতেন হাসপাতালে। বাবা ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল। রক্ষণশীল সেই পরিবারে মেয়েদের অধিকার ছিল না ছেলেদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার। অভাবী সংসারে রাখির আনন্দ ছিল হিন্দি ছবির নাচগান। নাচের প্রতি আগ্রহ ছিল তার নিজেরও। খুব সহজেই পারতেন যে কোনও নাচ তুলে নিতে।
কিন্তু রাখির নাচ করা নিয়ে ঘোর আপত্তি ছিল তার পরিবারে। ডান্ডিয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বলে তার লম্বা চুল কেটে দিয়েছিলেন কাকা। তার ইচ্ছে হতো বাড়ির দমবন্ধ পরিবেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে।
১৯৯৭ সালে ‘অগ্নিচক্র’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করে রাখি। এরপর বলিউডের বেশ কিছু ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয়ের পাশাপাশি আইটেম নম্বরের সঙ্গে নাচতে দেখা গিয়েছে তাকে। হিন্দির পাশাপাশি দক্ষিণী ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
২০০৬ সালে নিজের জন্মদিনের পার্টিতে গায়ক মিকা সিং প্রকাশ্যে রাখিকে চুম্বন করেছিলেন। সেই ঘটনায় যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল সে সময়। মিকার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেন রাখি।
রাখির জীবনে বিতর্ক এসেছে অবিরাম। ২০০৮ সালে তিনি প্রকাশ্যে চড় মেরেছিলেন তার তৎকালীন প্রেমিক অভিষেককে। অভিযোগ, অভিষেক অশ্লীল নামে সম্বোধন করেছিলেন রাখিকে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে রাখির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ‘রাখী কা ইনসাফ’ শো-এ তিনি অপমানজনক মন্তব্য করেছিলেন দলিত যুবক লক্ষ্মণ প্রসাদের উদ্দেশ্যে। পরে ঝাঁসির বাসিন্দা ওই যুবক আত্মঘাতী হলে তার পরিবারের সদস্যরা রাখির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদীর ছবি লাগানো পোশাক পরে বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন রাখি। নৃত্যশিল্পী অভিষেক অবস্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। দু’জনে একসঙ্গে ‘নাচ বালিয়ে’ শোতেও অংশ নিয়েছিলেন। পরে ‘রাখি কা স্বয়ম্বর’ শো-এ তিনি এনগেজড হন কানাডার ব্যবসায়ী এলেশ পারুজানওয়ালার সঙ্গে।
কিছু দিনের মধ্যেই তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। রাখি জানান, তিনি অর্থের জন্যই এলেশের সঙ্গে এনগেজমেন্ট করেছিলেন। এরপর রাখি ফের খবরে আসেন। জানান, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব দীপক কালালকে বিয়ে করছেন তিনি। কিছু দিনের মধ্যেই জানা যায়, দীপককে বিয়ে করছেন না রাখি। কারণ দীপক অন্য কারও সঙ্গে এনগেজড।
এর পর সাময়িক বিরতি। ২০১৯-এ রাখি ঘোষণা করেন তিনি বিবাহিত। তার স্বামী রিতেশ প্রবাসী ব্যবসায়ী। কাজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও। তবে স্বামীর ছবি এখনও প্রকাশ করেননি তিনি। জানিয়েছেন, তার স্বামী প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে ভালবাসেন।
একবার তনুশ্রী দত্তের সঙ্গেও বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন রাখি। তিনি অভিযোগ করেছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে সমকামী তনুশ্রী তাকে ১২ বার ধর্ষণ করেছিলেন। এর উত্তরে তনুশ্রীও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন রাখিকে। বড় অঙ্কের মানহানির মামলাও দায়ের করেন।
রাজনীতির ময়দানেও এক সময় ছিলেন রাখি। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন উত্তর পশ্চিম মুম্বাই কেন্দ্র থেকে। কিন্তু বড় ব্যবধানে পরাজিত হন।পরে তিনি রাষ্ট্রীয় আম পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। দলীয় প্রতীক ছিল কাঁচালঙ্কা। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ১৫টি। সেই দল ছেড়ে রাখি এখন ‘রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়া’ বা ‘আরপিআই’র সদস্য।
শুধুই বিতর্ক নয়, বিনোদন দুনিয়ায় কাজ করতে গিয়ে রাখি বিপদের মুখোমুখিও হয়েছেন। ২০১৬ সালে কলম্বোয় স্টেজ শো করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের জন্য তাকে মাথার চুল সব কেটে ফেলতে হয়েছিল।
সান নিউজ/পিডিকে/এস