বিনোদন ডেস্ক:
২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘কন্ট্যাজিওন’। হঠাৎ করেই গত মাসে আলোচনার শীর্ষে চলে আসে ছবিটি। কোনো সিনেমা হলে চলছে না বহুদিন হলো, নেটফ্লিক্সেও নেই, তবু মানুষ খুঁজে খুঁজে দেখছে। আই টিউনসে শীর্ষে চলে এসেছে ধার নেওয়া মুভির তালিকায়, আমাজন প্রাইম, গুগল প্লে বা ইউটিউবের মতো অন্য স্ট্রিমিং সার্ভিসেও একই অবস্থা। টরেন্ট থেকে নামানো হচ্ছে প্রতিদিন ২০-৩০ হাজারবার। আর অখ্যাত অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটে কতজন দেখছে, তার কোনো হিসাব নেই।
অথচ গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম ১০০ ছবির তালিকাতেও ছিল না কন্ট্যাজিওন। কী হলো আসলে? এর একটাই কারণ, তা হলো করোনাভাইরাস! এর সঙ্গে ছবিটির সম্পর্ক কি? রয়েছে সম্পর্ক।
তা হলে চলুন‘কন্ট্যাজিওন’এর গল্প শুনি। আর এর গল্পটা শুনাচ্ছেন পল পলাশ।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণেই বেড়ে গেছে এই ছবির চাহিদা। কারণ ৯ বছর আগে এই ছবিটি বানানো হয়েছিল করোনার মতোই এক বৈশ্বিক মহামারি নিয়ে।
ছবির শুরুতে দেখা যায়, একজন নারী হংকং থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় ফিরে আসার চতুর্থ দিনে মারা যান। মারা যাওয়ার লক্ষণ দেখে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) সক্রিয় হয়। কোত্থেকে এই রোগের উৎপত্তি, খুঁজতে শুরু করে সংস্থাটি। যারা রোগীর সংস্পর্শে এসেছিল, তাদের কোয়ারেন্টিন করে ফেলে। কিন্তু এই রোগ ছড়িয়ে যায়, ঠেকানো যায় না। অন্য দিকে চলতে থাকে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা। শেষে একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কারও হয়, আস্তে আস্তে মানুষ ফিরে যায় আগের জীবনে, সুখে–শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। এই হলো আসলে ছবিটির মূল গল্প।
সাধারণ গল্প, কিন্তু বলা হয়েছে অসাধারণ করে। এই ছবিতে পরিচালক স্টিফেন সডারবার্গ চেয়েছিলেন বাস্তবে কী হতে পারে, তার বিশ্বাসযোগ্য গল্প বলতে। স্কট বার্নস চিত্রনাট্যও লিখেছেন ঠিক সেভাবে। মহামারি নিয়ে গবেষণা করেন, এমন বিজ্ঞানীদের সঙ্গে লম্বা সময় কাটিয়েছেন; কীভাবে ভ্যাকসিন তৈরি হয়, বুঝতে চেয়েছেন। এভাবেই জন্ম এই গল্পের, তারপর ছবি নির্মাণে হাত দিলেন তিনি।
একটা সিনেমা ও বাস্তবে তার মিল:
এই ছবির নানা মুনশিয়ানা আছে। তবে এখন আলোচনার কারণ এই ছবির সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রক্রিয়া, প্রভাব একদম মিলে যাওয়া। ছবিতে সংক্রমণের শুরু চীনের হংকংয়ে, বাস্তবে চীনের উহানে। ছবিতে ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশিতে ড্রপলেটের মাধ্যমে, করোনাভাইরাসও ছড়াচ্ছে একইভাবে। ছবির মতো ছড়াচ্ছেও খুব সহজে, ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তাহলে এই ছবি কি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল করোনাভাইরাসের?
এই ছবিকে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা দিতে নারাজ খোদ এর লেখক স্কট বার্নসই। তিনি সাক্ষাৎকার দিয়ে জানিয়েছেন, এমন ভাইরাস যেকোনো সময়ই যে আক্রমণ করতে পারে, তা বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই বলেছেন। তাঁরা শুধু সেগুলোকেই তুলে এনেছেন।
ছবিতে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। প্রাণীর দেহে ভ্যাকসিন সফল হলেই মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হয়। এই ছবির সাফল্য শুধু বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া দেখানোতেই না। এমন মহামারির সামাজিক প্রভাব একদম ঠিকঠাক তুলে এনেছেন পরিচালক। এখন আমরা যে দেখছি, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর বাজারে ধুম লেগে গেছে কেনাকাটার, মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দোকান খালি করে ফেলছে নানান দেশে; ছবিতেও ঠিক তা-ই দেখানো হয়েছিল।
ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর মৃতদেহের গণকবর দেওয়া হচ্ছে, ছবিতে দেখানো এমন দৃশ্যের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে করোনায় মারা যাওয়া মানুষকে ইরানে কবর দেওয়ার ভিডিওর সঙ্গে।
শিল্পী ও চিত্রনাট্যকারকে সাধুবাদ:
তবে চিত্রনাট্যকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে বিশেষভাবে। তিনি তখনই কল্পনা করেছিলেন, মহামারির সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কী প্রভাব হতে পারে। আজ ফেসবুকে যত না ঠিক তথ্য ছড়াচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ঘুরছে ভুয়া খবর। কন্ট্যাজিওনেও ঠিক তাই দেখানো হয়েছে।
একজন ব্লগার ভুল তথ্য ছড়ান এবং ভুয়া চিকিৎসার কথা বলে কিছু ব্যবসাও করে নেন।
এই ছবির অভিনেতাদের কথা না বলাটা অন্যায় হবে। এক ছবিতে এত তারকা কমই দেখা যায়। ম্যাট ডেমন, কেট উইন্সলেট, জুড ল’, লরেন্স ফিশবার্ন, মারিও কোতিয়া, ব্রায়ান ক্রান্সটনসহ আরও অনেকে। পরিচালক একটা কাজ করেছেন, কোনো চরিত্রকেই এককভাবে বড় করে তোলেননি। বড় করে দেখিয়েছেন পরিস্থিতিকে।
এই ছবির নানা কিছুই এখন ঘটছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ছবিতে অভিনয় করা টিভি উপস্থাপক সঞ্জয় গুপ্তর কথা। সিএনএনের তখনকার জ্যেষ্ঠ মেডিকেল প্রতিবেদক ছিলেন সঞ্জয়। ছবিতে নিজ চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সিনেমায় সিডিসির কর্মকর্তা আর ভুয়া খবর ছড়ানো ব্লগারের। আর এখন তিনি সিএনএনের প্রধান মেডিকেল প্রতিবেদক।
বাস্তবে তিনি একজন নিউরোসার্জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক। এখন সঞ্জয় করোনাভাইরাস নিয়ে সিএনএনের হয়ে মানুষকে তথ্য জানাচ্ছেন, দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মতামতও।
ছবিটা দেখে ফেলতে পারেন। সবাই দেখছে, শুধু এ জন্যই নয়, ছবিটা দেখলে আপনি বুঝবেন কীভাবে এমন মহামারি ছড়ায়, মানুষ কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, আপনার করণীয় কী। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখিয়ে দিয়েছে এই ছবি, বিজ্ঞানের ওপর আস্থা রাখা যায়।
ছবির শেষে ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়, কিন্তু সবাইকে তো একই দিনে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব নয়, দিতে হয় ধাপে ধাপে। এসব দেখে আপনিও মানসিকভাবে প্রস্তুত হবেন, কীভাবে লড়তে হবে সামনের দিনগুলোতে।
Vidio...
এমন আরও কয়েকটি ছবি রয়েছে যা আপনি দেখতে পারেন। নিচে এগুলোর নাম দেয়া হলো:
● আউটব্রেক (১৯৯৫)
● প্যাসিফিক লাইনার (১৯৩৯)
● দ্য ওমেগা ম্যান (১৯৭১)
● চিলড্রেন অব ম্যান (২০০৬)
● দ্য অ্যান্ড্রোমিডা স্ট্রেইন (১৯৭১)
● প্যানিক ইন দ্য স্ট্রিটস (১৯৫০)
● টোয়েন্টি এইট ডেস লেটার (২০০২)
● দ্য মাদার্স মাইট লিভ (১৯৩৮)
সান নিউজ/সালি