বিনোদন ডেস্ক : দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে হার মানলেন সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা। মৃত্যুর কাছে পরাজিত হলেন কিংবদন্তি অভিনেতা, নাট্যকার, বাচিকশিল্পী, কবি, চিত্রকর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রের একটা যুগ যেন শেষ হয়ে গেলো।
বাঙালি অনুরাগীকূলের প্রার্থনা আর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরাতে পারল না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ হাসপাতালেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রবীণ অভিনেতার প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া বিনোদন জগতে।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জন্ম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। পিতামহের আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন।
সৌমিত্রর ফুপু তারা দেবীর সঙ্গে ‘স্যার’ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়। সৌমিত্রর পিতৃদেব কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন এবং প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন।
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন সৌমিত্র। পরে সৌমিত্রর স্কুলও বদল হয় এবং উনি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন হাওড়া জেলা স্কুল থেকে। তারপর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করার পর দু’বছর এমএ পড়েন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সর্বপ্রথম কাজ সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার ছবিতে। ১৯৫৯ সালে ছবিটি নির্মিত হয়। তার আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় রেডিওর ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সবচেয়ে পছন্দের অভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি সত্যজিৎ রায়ের সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করার জন্য তাকে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবি দুটিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
সত্যজিৎ রায় ছাড়াও মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় কর, তরুণ মজুমদার, ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষসহ বহু বিখ্যাত পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী চক্রবর্তী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, সুমিত্রা মুখার্জি ওয়াহিদা রহমান তনুজাসহ বিশিষ্ট অভিনেত্রীরা। বেশ কয়েকটি ছবিতে তিনি উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। সেইসব ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝিন্দের বন্দী, স্ত্রী, অপরিচিত, যদি জানতেম।
তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সাত পাকে বাঁধা, চারুলতা, আকাশকুসুম, কোনি, গণদেবতা, সংসার সীমান্তে, অরণ্যের দিনরাত্রি অশনি সংকেত তিন ভুবনের পারে প্রভৃতি।
সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক যাত্রা এবং টিভি ধারাবাহিক অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। তাঁর অভিনীত নির্দেশিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছেন-ফেরা, নাম জীবন, নীলকণ্ঠ, রাজকুমার। তিনি একজন খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকারও।
তিনি ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ,২০১২ সালে দাদাসাহেব ফালকে পান। ২০১৭ সালে তাকে ফ্রান্স সরকার লিজিয়ন অব অনার দিয়েছে। সূত্র: কলকাতা২৪
সান নিউজ/এম/এস