বিনোদন ডেস্ক:
কলকাতার বর্ষীয়ান অভিনেতা তাপস পাল। ১৯৮০ সালে প্রথম ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমাতে অভিনয় করেই বাঙালির মন জয় করে নেন ২২ বছরের তরুণ অভিনেতা তাপস পাল। এই ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন মহুয়া রায় চৌধুরী।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ের বান্দ্রার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। স্নায়ু এবং রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এ অভিনেতার মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর তার স্ত্রী নন্দিনী অভিযোগ করলেন, অসুস্থতায় নয় হত্যা করা হয়েছে জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তাই ন্যায়বিচার দাবিতে বর্তমানে তিনি মুম্বাইয়ে অবস্থান করছেন।
পশ্চিমবঙ্গের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নন্দিনী এ দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে ওই হাসপাতাল মেরে ফেলেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাইতে মুম্বাইয়ে এসেছি।
তাপসের স্ত্রী জানান, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বান্দ্রার একটি হাসপাতালে তাপসকে ভর্তি করা হলে চিকিৎসা শুরু করার আগেই ৫০ হাজার রুপি জমা দিতে বলা হয়। টাকা না পেলে চিকিৎসা শুরু হবে না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দাবি নন্দিনীর। মধ্য রাতে এত টাকা না থাকায় মেয়ের বাড়িওয়ালার সাহায্যে তা ব্যবস্থা করে তাপসের ভেন্টিলেশনে দিতে হয় বলেও জানান তিনি।
নন্দিনী আরও অভিযোগ করেন, ভর্তি থাকা অবস্থায় তাপস পালকে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ঠিকমতো খেতে দেওয়া হত না। বিষয়টি নিয়ে তার মেয়ের সঙ্গে নার্সদের কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ফের অসুস্থ হয়ে যান তাপস।
হঠাৎ একদিন হাসপাতালে তাপস পালকে বেঁধে রাখতে দেখেন নন্দিনী। কারণ জানতে চাইলে, শিফটিংয়ের কারণে তাকে নজরে রাখার লোক নেই বলেন হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয় বলে দাবি তার।
এসব ঘটনার কারণে তাপসকে ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন নন্দিনী। কিন্তু এর আগেই ‘দাদার কীর্তি’খ্যাত এই অভিনেতা পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের এমন অবহেলার কারণে তাপসের মৃত্যু হয়েছে বলেই নন্দিনীর দাবি। তাই কোনো ছাড় না দিয়ে, এর ন্যায়বিচার আদায় করবেন বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম নেন তাপস পাল। সিনেমা জগতে পা রাখার সময় তাপস পালের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। ‘দাদার কীর্তি’ চলচ্চিত্রের পর ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসাসহ’ বেশ কিছু হিট ছবি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। অভিনেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ‘সাহেব’ ছবির জন্য তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান। তাপস পাল বলিউড তারকা মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে ‘অবোধ’ নামের একটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন।
অভিনেতা তাপস পাল পরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনয়ন পেয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হন। তবে রাজনীতি যুক্ত হয়ে তিনি দুর্নীতি ও বেফাঁস মন্তব্য করে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রোজভ্যালি দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। চিটফান্ড দুর্নীতিতেও তার নাম ছিল।