বিনোদন ডেস্ক : কী অদ্ভূত রোমাঞ্চকর এক জীবন! অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করে শূন্য হাতে পা রেখেছিলেন বিশ্বের অন্যতম শহর মুম্বাইয়ে। কীভাবে হবে রুটি রুজির ব্যবস্থা, সেটাও জানা নেই। দু চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন। কে জানতো সেই ছটফটে যুবক বুকের গভীরে লুকিয়ে জিদকে হাতিয়ার বানিয়ে একদিন এতোটা সফল হয়ে উঠবেন। বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে তার নাম। লোকে তাকে ডাকবে বলিউড বাদশাহ বলে, কিং খান বলে। কিংবা প্রেমপাগল দর্শকের মনে তিনিই হয়ে উঠবেন রোমান্সের রাজা। তিনি শাহরুখ খান!
জিরো থেকে হিরো হয়ে উঠা শক্তিমান বলিউড অভিনেতার নাম শাহরুখ। যে জীবনের উত্থানের পরতে পরতে আছে সংগ্রাম, অবর্ণনীয় যাতনার গল্প। সেসব বিভিন্ন সময় নিজেই বলেছেন শাহরুখ। সঙ্গত কারণেই বলিউডে প্রেরণা যোগানো নায়কদের মধ্যে অন্যতম হিন্দি সিনেমার রঙিন ‘দেবদাস’। আজ আর ৫৫তম জন্মদিন। ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর ভারতের নয়া দিল্লিতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ। তার বাবা তাজ মোহাম্মদ খান। মা লতিফ ফাতিমা। হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে শাহরুখ ভর্তি হন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় গণযোগাযোগ বিষয়ে। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরুর লক্ষ্যে ছেড়ে দেন প্রতিষ্ঠানটি। অভিনয় পাঠগ্রহণ করেন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে।
কিং খানের জন্মদিন মানেই কোটি কোটি ভক্তদের উৎসব। মাস খানেক আগে থেকেই তার ভক্তরা প্রিয় নায়কের জন্মদিন উদযাপনের ডাক দেন, হাজির হন শাহরুখের বাড়ির সামনে। দেশে দেশে এ অভিনেতার ভক্তরা দলবেঁধে কেক কাটেন, প্রিয় তারকার ছবি দেখেন। যেন ২ নভেম্বর মানেই শাহরুখ খান দিবস!এবারেও জন্মদিনের উৎসব চলছে। তবে করোনার কারণে তা হচ্ছে ভার্চুয়ালি। ১ নভেম্বর দিন শেষে রাতের ঘড়ির কাটায় ১২টা বাজতেই শুরু হয়ে গেছে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাওয়া। গতরাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে গেছে এসআরকে-কে পাঠানো জন্মদিনের শুভেচ্ছায়। তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বলিউডের সহকর্মীরাও। সে তালিকায় রয়েছে তার পরিচালক, প্রযোজক, নায়িকারাও।
অভিনেতা হিসেবে কিং খানের পথচলার শুরু ১৯৮৯ সাল থেকে। ‘ফৌজি’ টিভি সিরিজ দিয়ে শুরু হওয়া এই যাত্রায় আরও কয়েকটি টিভি ধারাবাহিকে কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। বলিউডে তার অভিষেক হয় ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির হাত ধরে। আর তাতেই কেল্লা ফতেহ! এ ছবিতে তার দুর্দান্ত কাজের জন্য অর্জন করেন সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ‘চমৎকার, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান’এর মতো ছবিতে অভিনয় করে সকলের নজর কাড়েন তিনি।
ঠিক তার পরের বছরই ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ ছবিতে নিজের অভিনয়ের জাদু দিয়ে সবাই মুগ্ধ করে ঘর করে নেন দর্শকের মনে, পৌঁছে যান সাফল্যের চুড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরও বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের ছবিতে ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট ছবি দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। ‘করন অর্জুন’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘ইয়েস বস’, ‘পারদেশ’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘ডুপ্লিকেট’, ‘দিল সে’, ‘মোহাব্বাতে’, ‘অশোকা’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘দেবদাস’, ‘ডন’, ‘ডন-২’, ‘রাব নে বানাদি জোরি’, ‘জাব তাক হে জান’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস, ‘রইস’ প্রভৃতি ছবির মধ্য দিয়ে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছেন শাহরুখ।
আর ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’, 'দিল তো পাগল হ্যায়', 'কয়লা', 'বাজিগর', 'বাদশাহ', ‘ডর’, ‘দেবদাস’, ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘মাই নেইম ইজ খান’র মতো মুভিতে তার অনন্যসাধারণ অভিনয় বিশ্বব্যাপী তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা দিয়েছে। প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ারে মোট ১৪ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। তার মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতার। ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন মোট পাঁচবার।
ব্যক্তি জীবনে তিন সন্তানের জনক শাহরুখ খান। স্ত্রী গৌরি খানের সঙ্গে মাত্র ১৮ বছরের বয়সে দেখা হয় শাহরুখের। তারপর চার বছরের সম্পর্কে থাকার পর ১৯৯১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এদিকে গেল কয়েকটা বছর তিনি নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তার ফ্যান, জিরো ছবিগুলো আশানুরূপ সাড়া পায়নি। যার ফলে প্রায় দুই বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে নিলেন তিনি৷ নিয়মিত ছিলেন শুধু প্রযোজনা ও ক্রিকেটের দল নিয়ে। নানারকম সামাজিক কর্মকান্ডেও নিজেকে নিবেদিত করে রেখেছেন বাদশাহ।
তবে ভক্তদের জন্য আশার খবর হলো বিরতি ভেঙে প্রায় চারটি সিনেমা নিয়ে ফিরছেন কিং খান। সবার প্রত্যাশা বিগ বাজেটের এসব ছবি দিয়ে আবারও হারানো রাজত্ব ফিরে পাবেন শাহরুখ খান।
সান নিউজ/পিডিকে