বিনোদন ডেস্ক : বর্ষীয়ান গায়ক ও অভিনেতা শক্তি ঠাকুর মারা গেছেন। রোববার (৪ অক্টোবর) রাতে নিজের বাসভবনেই মৃত্যু হয় তাঁর। বড় মেয়ে মেহুলি গোস্বামী ঠাকুর সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই শক্তি ঠাকুর বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার (৫ অক্টোবর) ভোরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮।
একাধিক বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপশি প্লেব্যাকও করেছিলেন শক্তি ঠাকুর। উৎপল দত্ত, বিকাশ রায়ের মতো স্বনামধন্য অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। তাঁর ছোট মেয়ে মোনালি ঠাকুরও বাংলা ও হিন্দি গানের জগতে উজ্জ্বল নাম। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন সুইজারল্যান্ডে।
বাবার মৃত্যুর পর কষ্ট চেপে রাখতে পারেননি মেহুলি ঠাকুর। সেই কারণে বাবার মৃত্যুর খবর জানানোর পর আরও একটি পোস্ট করেন মেহুলি, ‘আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে বাবা মায়েরা একদিন চলে যায়। জীবনে কোনোদিনও শ্মশানে আসিনি। আজ সবই জীবনে প্রথমবার। বাবা ছাড়া আজ থেকে নতুন জীবন। তুমি কি কোনোদিনও কোনো পাপ করোনি বাবা? নইলে এভাবে দু’ঘণ্টার মধ্যে কে চলে যায়? ‘ধুর আর ভাল্লাগছেনা’ বলে চলে গেলে। সব কিছুতেই তাড়াহুড়োর জন্য কত বকাবকি করতাম। আজ চলে যাওয়ার সময়ও এমন অদ্ভুত তাড়াহুড়ো কে করে বাবা? আমি তো তোমার কার্বন কপি। আমিও তোমারই মতন তাড়াহুড়ো করে চলে যাবো দেখো। কষ্টটা লিখে ফেলতে পারলে বোধহয় নিঃশ্বাস নিতে পারতাম!’
শক্তি ঠাকুরের মৃত্যুর খবর জানার পর থেকেই সকলেই সমবেদনা প্রকাশ করছেন। পাশাপাশি একজন বর্ষীয়ান শিল্পীর চলে যাওয়ায় শোক প্রকাশ করতে শুরু করেন সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং গুণগ্রাহীরা।
গায়ক, অভিনেতা হিসাবে পরিচয় পেলেও প্রথম জীবনে শক্তি ঠাকুর ছিলেন স্কুল শিক্ষক। অঙ্ক ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। ১৯৭৬-এ তপন সিংহের 'হারমোনিয়াম' ছবিতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে গানের দুনিয়ায় প্রথম পা রাখেন তিনি। তারপর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় শক্তি ঠাকুরকে দিয়ে তাঁর সুর করা বেশ কিছু বাংলা ছবিতে গান গাইয়েছেন। পাশপাশি, তিনি অভিনয় করেছেন তরুণ মজুমদারের 'দাদার কীর্তি', 'ভালবাসা ভালবাসা' ছবিতে। এই ছবিতে অভিনয়ের সঙ্গে কোরাসে গলাও মেলান। এ ছাড়াও শক্তি ঠাকুর গান গেয়েছেন, অজয় দাস, আর ডি বর্মনের সুরে।
বন্ধুস্থানীয় কোলকাতার সংগীত শিল্পী শিবাজি চট্টোপাধ্যায় গণমাধ্যমকে জানান, "শেষের দিকে নিজেকে সকলের থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তবে সংসার জীবনে দুই মেয়ের সাফল্য, বিশেষ করে মোনালির খ্যাতিতে তৃপ্ত ছিলেন শক্তি ঠাকুর।" এর আগেও তাঁর একবার স্ট্রোক হয়েছিল। তখন সামলে নিতে পারলেও এ বারে লড়াই ছেড়ে বিদায় নিলেন তিনি।