বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রসার, প্রচার এবং সমৃদ্ধ করতে অনন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে ঢাকাকেন্দ্রীক সংস্কৃতিক চর্চার বাইরে চলচ্চিত্র উন্নয়নে এবার চট্টগ্রামে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশেষায়িত অঞ্চল। চলচ্চিত্র উন্নয়নের এই বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেরশ চলচ্চিত্র শিল্প অনন্য উচ্চতায় পোঁছিবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন : মুক্তি পেল শাকিবের ‘দরদ’
দেশের কয়েকজন উদ্যোমী তরুণ চলচ্চিত্র প্রেমিমানুষ এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ মেয়াদী ও ব্যয়বহুল প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগতভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাও যুক্ত হবেন। বিশেষ করে সরকারি সহযোগিতা এবং অনুদানে এর ব্যাপ্তি বাড়বে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আন্তর্জাতিক মান এবং মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে এই উদ্যোগ যাথেষ্ঠ ভূমিকা বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
জানা গেছে, রাজধানীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র শিল্প নানা কারণে বাঁধাগ্রস্থ হয়। সেই সংকট থেকে উত্তরণ এবং ঐতিহ্যবাহী চলচ্চিত্রশিল্পকে রক্ষায় এর উৎকর্ষ সাধনে রাজধানীর বাইরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেই লক্ষে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র খাগড়াছড়িতে প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ফিল্ম ইন্ডষ্ট্রি চালিউড। এখানে আগামী ১০ বছরে অন্তত শতাধিক সিনেমা নির্মাণ করা হবে। সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য এবং মেধাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ব্যক্তিগত উগ্যোগে প্রতিষ্ঠিতব্য প্রকল্পের ফলে এলাকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক জোন গড়ে তোলা হবে। যেখানে থাকবে চলচ্চিত্র ইনিষ্টিটিউট, থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক মানের থিয়েটার, একাধিক হল, থাকবে বক্স অফিস, আন্তর্জাতিক উতসব আয়োজনসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা। দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ের মানুষদের সাথে সমন্বয় এবং তাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা নিয়ে এখানে নতুন একটি চলচ্চিত্র শিল্প অঞ্চল তথা নতুন জোন তৈরি করা হবে। বলিউডের পাশাপাশি তামিল তেলেগুর মত এখানে এলাকাভিত্তিক চলচ্চিত্র শিল্প অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ফলে, নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং তা বছরব্যাপী প্রদর্শীর ফলে সংশ্লিষ্ট মানুষদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
আরও পড়ুন : রুক্মিণীর নতুন অধ্যায়
এই অঞ্চলকে ঘিরে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসব, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার সিম্পোজিয়াম, চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। প্রকল্প বাস্তাবায়নে সুদৃশ্য সু্উচ্চ ভবন নির্মাণ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। দেশ-বিদেশের শীর্ষ পরিচালক, শিল্পী-কলা কুশলীদের সমন্বয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে প্রকল্প ব্যায়ের সংস্থানের জন্য ব্যক্তি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা বা অনুদানও যুক্ত করা হবে।
সারাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রকৃত মেধাবী এবং উদ্যোমীদের পাশাপাশি আগ্রহী সাধারণ মানুষদের কর্মক্ষেত্রে তৈরিতে এই উদ্যোগ অনন্য ভূমিকার রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি এলাকার সিন্দুক ছড়ি জিরো পয়েন্ট এলাকাকে চালিউড প্রতিষ্ঠার স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। উদ্যোগের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে এই স্থানে পাঁচ বিঘা জমি কেনা হয়ে গেছে। এই মেগা প্রজেক্টের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে অন্তত ৫টি সিনেমা তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : চুপ থাকাই ভালো
যুগান্তকারি এই উদ্যোগের সুচনাকারি এবং প্রতিষ্ঠাতা তরুণ তুর্কী সংস্কৃতিকর্মী ও উদ্যোক্তা হেদায়েত উল্লাহ দিহান। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন সমমনা কৃতিমান মানুষ। এই চালিউডকে ঘিরে হেদায়েত উল্লাহ দিহান ও অন্যান্যদের হাত ধরে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। হেদায়েত উল্লাহ দিহান জানান, চালিউডকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্যিক একটা পরিবেশ তো তৈরি হবেই। বিশেষ করে এলাকাভিত্তিক চলচ্চিত্র উন্নয়ন প্রসার ও প্রকাশে বিভিন্ন সহযোগি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সংস্কৃতি, ভাষা, জীবনমান উন্নয়নে এই ইন্ডাষ্ট্রি কাজ করবে। বিশেষ করে এই এলাকার মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি জাতী সত্তার ধারবাহিকতা রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। এই চালিউডকে ঘিরে নতুন একটি বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি হবে। যেখানে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয়দের ভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতি এবং অধিকার রক্ষা এবং মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে বলিষ্ট ভূমিকা রাখবে চালিউড। পাশাপাশি ঢালিউডের সঙ্গে নানা ধরণের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেক্ষেত্রে উভয় প্রতিষ্ঠানই ভালো ভালো কাজের প্রতি উতসাহি হবে। ফলে প্রকারন্তে বাংলাদেশের সামগ্রিক সংস্কৃতির উন্নয়নে এই উদ্যোগ যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক ধরণের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
দিহান জানান, মুল ঢালিউডের মতই সিনেমা ইন্ডাষ্ট্রি ও সংশ্লিষ্ট মানুষদের উন্নয়নে চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, চলচ্চিত্র গায়ক সমিতি, চলচ্চিত্র কারিগরি সমিতি, চলচ্চিত্র থিয়েটার এবং একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এইসব কর্মকান্ডকে প্রচার এবং প্রসারের লক্ষে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মীদের নিয়ে অবধারিতভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি।
আরও পড়ুন : আপনাদের কনসার্টে কুঁড়েঘর আর আসবে না
হেদায়েত উল্লাহ দিহান আরও জানান, তিনি ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হয়েছেন মোঃ জুনায়েদ সরকার বোগদাদি, ফরিদুল্লাহ, পপি আক্তার, মোবারক ইসলাম পাভেল, পুষ্পা বেগম, মিঠুন চন্দ্র দাস, সোমাইয়া ইসলাম, সুভ্রত চাকমা, চাঁদনী ইসলাম, রাজিব ত্রিপুরা, মনিষা ত্রিপুরা, এমিলি দেওয়ান (চাকমা), অংথোয়াইগ্য মারমা, কবির আহমেদ, আমেনা ইসলাম, বাবলু মারমা, ফজলে কদর স্বাধীন এবং সাংবাদিক সাজু আহমেদ। পর্যায়ক্রমে সমমনা আরও কৃতিমান ও সাংস্কৃতিক উদ্যোক্তা, দেশপ্রেমিক মানুষ যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশীয় সংস্কৃতি ভালোবাসেন, লালন করেন, দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে নিবেদিত আরও অনেকেইমন এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। দিহানও মনে করেন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় চালিউডকে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাতে পারবেন তারা। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতিপ্রেমী দেশপ্রেমী, ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সুপরামর্শ প্রত্যাশা করেন তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা এবং পরামর্শ এই প্রকল্প বাস্তবায়নকে তরান্বিত করবে এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সান নিউজ/এমআর