এস আর শফিক স্বপন, মাদারীপুর প্রতিনিধি: টিকটকে আসক্ত হয়ে অভিনব কায়দা বেছে নেয় শিক্ষার্থীরা। জোগাড় করে পুরানো মদের বোতল। সেই বোতলে জুস ভরে শিক্ষা সফরে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গাড়িতে আসার সময় মদ ঢেলে খাওয়ার অভিনয়ে যোগ দেয় সবাই।
আরও পড়ুন: বাড়তি ভাড়া নিলে সেই পরিবহন বন্ধ
সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েলে সমালোচনার ঝড়ে উঠে নেট দুনিয়ায়। পরে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে মদের কোনো চিহ্নই পাওয়া যায় না। ডোপ টেস্টেও নির্দোষ হয় শিক্ষক-শিক্ষকরা। অথচ সামাজিক মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার মাদারীপুরের শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুরের শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা সফলে সোনারগাঁও যায় শিক্ষকরা।
বাসের মধ্যে বিনোদনের সময়ে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব, ছরোয়ার হোসেন, নাজমুল হাসান ও সিয়াম ৪ জন মিলে মদের বোতলে জুস ভরে পান করতে থাকে। বিষয়টি টিকটকে তার অন্যান্য বন্ধুরা ছড়িয়ে দেয়। এতে সমলোচনার ঝড়ে উঠে নেট দুনিয়ায়।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি করলে ৪ শিক্ষার্থী ও ২ শিক্ষককে ডোপ টেস্ট করানো হয়। এতে নেগেটিভ আসে সবার। পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্দোষ হয় দোষীরা।
আরও পড়ুন: ঢাকায় তুমুল বৃষ্টি, জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি
তবে এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখনো বেতন বন্ধ শিক্ষকদের। আর শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ ওয়ালিদ মোরশেদ জানান, ঘটনার দিন আমি আমার পরিবারের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে নিয়ে বাসে উঠি। হঠাৎ একজন ছাত্র বলল, স্যার পেছনে গ্যাঞ্জাম হচ্ছে, তাড়াতাড়ি আসেন।
আমি পেছনে গিয়ে দেখলাম কিছু শিক্ষার্থী আনন্দ উল্লাস করছে। আমি বললাম, হাতে কী? তখন ছাত্ররা বলল এটা স্যার বোতলের ভেতরে মদ না, জুস। আমরা টিকটক করার জন্য মজা করছি। তখন নোমান স্যার এটা হাতে নিয়ে আমার নিকট দেন।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যখাতে কথা কম, কাজ বেশি হবে
আমি পরীক্ষা করে দেখলাম, সত্যিই মদ না জুস। আমি ওদের হাতে দিয়ে বললাম তাড়াতাড়ি বোতলটা ফেলে দাও। ওদের ফেলতে দেরি হওয়ায় পরে আমি নিজে বোতলটা ফেলে দেই।
তিনি আরও বলেন, কারও উসকানিতে যেন এ তথ্য না জেনে সামাজিক মাধ্যমে সুবিধা লাভের জন্য কোন রিপোর্ট বা পোস্ট না করে। কারন এর ফলে একজন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে। বিদেশীদের মত আমাদের দেশেও টিকটক নিষিদ্ধ করা হোক।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিউলী আক্তার বলেন, এ ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কোন একটি দল ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের দ্বারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৩১
পর্যায়ক্রমে কয়েকটি তদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে, মদের যে ব্যাপারটি দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। অতি উৎসাহে ছাত্ররা খেজুরের রস নিয়ে টিকটক করার জন্য এমনটি করেছে। চক্র মহল তিলকে তাল বানিয়ে ঘটনাটি জটিল করেছে। শিক্ষা সফরে যাওয়ার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি, টিএনও ও অভিভাবকের সম্মতিও ছিল।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন শিকদার জানান, ৪ জন শিক্ষার্থী মদের খালি বোতলে খেজুরের রস ভরে টিকটক করেছে। ব্যাপারটি দুঃখজনক। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চার শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষককে ডোপ টেস্ট করিয়েছি। এটি নেগেটিভ এসেছে।
মিডিয়াসহ একটি মহল ফায়দা লুটার জন্য ও বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কিছু সংবাদ পরিবেশন করেছে। এই সংবাদগুলো সম্পূর্ণ বিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: কয়লা আনতে গিয়ে নিহত ২
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন আল খালিদ জানান, শিক্ষা সফরে কমলমতি শিশুরা মদের খালি বোতলে করে খেজুরের রস খেয়েছে। তাদের ডোপ টেস্টে নেগেটিভ এসেছে। আমরা তাদের শাসন করেছি। এরপরেও কিছু সংবাদ মাধ্যম বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ভিত্তিহীন এই সংবাদ পরিবেশন করেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলার শিক্ষা অফিসার ও তদন্ত কমিটির প্রধান খন্দকার মো. মাকসুদুর রহমান জানান, আমরা তদন্ত করেছি, এখানে মদ ছিল না। খেজুরের রস ছিল। তবে টিকটকের জন্য মদের বোতলে করে এভাবে আনন্দ করাটা ঠিক ছিল না। ব্যাপারটি আমরা আরো খতিয়ে দেখছি।
সান নিউজ/এনজে