নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’-এর আলোকে আগামী বছর থেকেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর মেয়াদি করা হচ্ছে। দুই হাজার ৫৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বছরের জানুয়ারিতে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ লক্ষ্যে নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আরেকটি শ্রেণি বাড়ছে। কিন্ডারগার্টেনের মতো ‘প্লে গ্রুপ’ এর আদলে নতুন সৃষ্টি করা এ শ্রেণির নাম হবে ‘শিশু শ্রেণি’। এরপর ‘নার্সারি’ শেষ করে প্রথম শ্রেণি। নতুন ‘শিশু শ্রেণি’ বাড়ানোর মধ্য দিয়েই ২০২১ সাল থেকে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর হবে।
বিষয়টি অতি জরুরি উল্লেখ করে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিকের পাইলটিং কার্যক্রম হিসেবে প্রাথমিকের দুই হাজার ৫৮৩টি ক্লাস্টার থেকে একটি করে বিদ্যালয় নির্বাচন করে দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচিত বিদ্যালয়ের তথ্য ই-মেইলের পাশাপাশি হার্ডকপি আকারে অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর কথা বলা আছে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে। ওই বছরই স্বল্প পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালুর পর ২০১৪ সালে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি এই শ্রেণি চালু করে সরকার। পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে এক বছর ধরে পড়াশোনা করে।
মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারিভাবে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু না থাকায় শহর ও গ্রামে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে। এতে অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য দেখা দিচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার ব্যয়ও বাড়ছে। প্রাক-প্রাথমিক চালুর পর প্রথম শ্রেণিতে নিট ভর্তি, শিক্ষাচক্র সমাপনী, উপস্থিতি ও সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে। অন্যদিকে অনুপস্থিতি এবং পুনরাবৃত্তির হার কমেছে। এরপরও শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন গড়ে ওঠায় সরকার নতুন শ্রেণি খোলার সিদ্ধান্ত নেয় বলেও জানান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর তথ্য দিয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উন্নত দেশসহ ৫২ শতাংশ দেশের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা তিন বছর মেয়াদি এবং ৩৩ শতাংশ দেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। এ বিষয়টিও মাথায় নিয়ে নতুন শ্রেণি খোলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৯৯টিতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ৩৭ হাজার ৬৭২টি বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের একজন করে সহকারী শিক্ষকও রয়েছেন। এক বছর বাড়াতে ২৬ হাজার ৩৬৬ বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে একজন করে সহকারী শিক্ষক ও একজন করে আয়ার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা শিগগিরই নিয়োগ করা হবে। কর্মরত সহকারী শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ওই শিক্ষকরা তিন বছরের আগে বদলিও হতে পারবে না।
নতুন শ্রেণি খোলার ফলে শিক্ষার্থীদের আনুসঙ্গিক খরচের জন্য গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন থেকে ৫৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি থেকে ব্যয় করার কথা রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘নতুন ‘শিশু শ্রেণি’ চালুর সিদ্ধান্তে দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন একজন করে শিক্ষক ও একজন করে আয়ার পদ তৈরি করে তাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা কনসেপ্ট ডেভেলপ ও পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছি। চার বছর বয়স থেকেই শিশুদের প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি এবং এই শ্রেণির মেয়াদ দুই বছর করার পরিকল্পনা ও সার-সংক্ষেপে গত ২৩ জুন অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
‘চার বছর বয়সেই শিশুরা নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনায়। আগামী বছরে প্রাক-প্রাথমিকের ওই দুটি শ্রেণির জন্যই কারিকুলাম প্রণয়নও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’ অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচিত বিদ্যালয়ে একটি সুনির্দিষ্ট বা স্বতন্ত্র ও সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক অবশ্যই থাকতে হবে।’
‘পাইলটিংয়ের জন্য নির্বাচিত বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক কমপক্ষে তিন বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের আগে কোনো অবস্থায় ওই বিদ্যালয় থেকে বদলি হতে পারবেন না। ’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটির সমন্বয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পাইলটিং কার্যক্রমের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন প্যাকেজ প্রণয়ন করেছে।’
সান নিউজ/ এআর