নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামের দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছেন ওই গ্রামেরই সন্তান মো. মুন্তাসির মহিউদ্দিন অপু। প্রয়াণের ছয় যুগ পর কীর্তিমান এ মনীষীর জন্মভূমিতে তারই নামানুসারে বিদ্যাপীঠ তৈরি করেছেন তিনি।
‘বিটঘর দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য বিদ্যাপীঠ’ নামের কলেজটির অবকাঠামোসহ যাবতীয় নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছ থেকে পেয়েছে পাঠদানের অনুমোদনও। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অপেক্ষায় আছে সদ্য নির্মিত এ বিদ্যাপীঠটি।
নৈসর্গিক ও মনোরম পরিবেশে নির্মিত কলেজটিতে শিগগিরই ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীর্তিমান এ পুরুষের নামে কলেজটি নির্মিত হওয়ায় স্থানীয়রা উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও খুব তাড়াতাড়িই এ কলেজটিকে আপন করে নিয়ে পরের প্রজন্মের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে স্বপ্নের জাল বুনছেন।
স্থানীয়রা জানান, ‘কুমিল্লা (সাবেক ত্রিপুরা), অধুনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বিটঘর গ্রামে ১২৬৫ বঙ্গাব্দের ১৭ অগ্রহায়ণ জন্মগ্রহণ করেন বাংলার কৃতী সন্তান ও কিংবদন্তির মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য। বাবা ঈশ্বরদাস তর্ক সিদ্ধান্ত সপণ্ডিত ছিলেন এবং মাতা রামমালা দেবীদেব্য দ্বিজে ভক্তিপরায়ণ সাধ্বী নারী ছিলেন।’
‘মানবজীবনে মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য তাদের অন্যতম। কঠোর শ্রম, ন্যায়পরায়ণতা, অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস ও মহৎ আদর্শে নির্ভর করে তিনি নিতান্ত দরিদ্র অবস্থা থেকে জীবন সাধনায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। একদা কঠোর দারিদ্র্যের জন্য লেখাপড়া করার সুযোগ না পেয়ে পরে অর্থ উপার্জন করে শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনোনিবেশ করেন।’
তারা জানান, ‘দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য জীবোদ্দশায় নিজের আয়ের বেশিরভাগ দান করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে, বাবার নামে কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালা (১৯১৪) ও দাতব্য চিকিৎসালয় দেবালয় (১৯১৭)। মায়ের নামে তার গড়ে তোলা রামমালা গ্রন্থাগার (১৯১২), রামমালা ছাত্রাবাস ও নিবেদিতা ছাত্রীনিবাস ও প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৯), নাটমন্দিরসহ (১৯২৫) অনেক প্রতিষ্ঠান আজও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে।’
শিক্ষার বিষয়ে মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের দর্শন ছিল, ‘একমাত্র শিক্ষাই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে, করে তুলতে পারে আত্মনির্ভর।’
বিটঘরের এই কিংবদন্তীর দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার নামানুসারেই শিক্ষার আলো ছড়াতে বিদ্যাপীঠ গড়ে তুলেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মুন্তাসির মহিউদ্দিন অপু। চারদিকে গাছপালা বেষ্টিত কলেজটি এখন ওই গ্রামের আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক কিংবদন্তীকে স্মরণে রাখতে আরেক সমাজসেবকের এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয়দের হৃদয়ে ছাপ ফেলেছে। অপুর এ উদ্যোগ তাই সর্বমহলে খ্যাতিও কুড়িয়েছে।
কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা মুন্তাসির মহিউদ্দিন অপু বলেন, ‘দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের সৃষ্টির মাধ্যমেই তাকে উপলব্ধি করা যায়। তখনকার আমলে তিনিই একমাত্র মানুষ, যিনি নিজের আয় করা টাকা দিয়ে শিক্ষা বিস্তারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।’
‘এতদঅঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া এই কিংবদন্তীকে আমরা মনে রাখলেও পরবতী প্রজন্ম খুব সহজেই ভুলে যাবে। এই মনিষীকে ধরে রাখতে এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তাই তার নামানুসারেই এ কলেজটির নামকরণ করেছি। এতে একজন মহান শিক্ষানুরাগীর প্রতি জাতির ঋণ সামান্য হলেও শোধ করা হবে বলে মনে করি।’
সান নিউজ/ এআর