জেলা প্রতিনিধি: জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেফমুবিপ্রবি) ফিশারিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গণিত বিভাগের একই বর্ষের এক ছাত্রীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে সড়কে ৩ বাংলাদেশি নিহত
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শায়লা সাদিকা শ্রুতি অসুস্থ হয়ে পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারেনি বলে দাবি করছেন।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের পাশে মাঠে র্যাগিংয়ের শিকার হন শ্রুতি। পরের দিন (২৮ আগস্ট) এ ঘটনায় ঐ বিশ্ববিদ্যালয় বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মৌসুমী আক্তারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তিনি।
আরও পড়ুন: চলনবিলে নৌকায় অশ্লীলতা, আটক ১৪
পরে র্যাগিংয়ের ঘটনার বিচার না হওয়ায় ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে এ ঘটনার বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- ফিশারিজ বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের ফাতেমা বিনতে হোসাইন নিশি, মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ, তাহরিন তাসমিয়া সিদ্দিকি হৃদী, মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, ফারহানুল হক প্রান্ত ও হাবিবুর রহমান অন্তর।
ভুক্তভোগী শ্রুতি বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই রুমে কান্না করতাম। আমার রুমে নিশি আপুও থাকেন। তিনি বিষয়টি অনেক ভাবে জানতে চাইলে পরবর্তীতে তাকে আমার ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করি।
আরও পড়ুন: বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১
এরপর থেকেই নিশি আপু আমার গোপনীয় বিষয়টাকে পুঁজি করে মানসিকভাবে নির্যাতন করতো ও ভয়ভীতি দেখাতেন। গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের মাঠে ফিশারিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিশি, হৃদি, খাইরুল, প্রান্ত, মুরাদ ও অন্তর ভাই মিলে ছাত্রী হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমাকে মানসিক নির্যাতন ও অপমান করে।
পরের দিন ২৮ আগস্ট আমার পরীক্ষার কথা জেনেও তারা আমার সাথে এমন আচরণ করে। এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। প্রচণ্ড অপমানে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
আরও পড়ুন: কাল যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না
তিনি বলেন, পরের দিন সকালে আমাকে জামালপুর জেনারেল হাপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে আমার শরীরের বামপাশ অবশ হয়ে পড়ে। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় চিকিৎসক আমাকে ১২ টি ইঞ্জেকশন দেয় এবং অন্যান্য চিকিৎসা দেয়। আমি হাসপাতালে ভর্তি থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি।
পরবর্তীতে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির বরাবর অভিযোগ করেন শ্রুতি। অভিযোগ করার পর থেকেই তাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভয় দেখাচ্ছেন এবং সমঝোতার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৫৩
শ্রুতি আরও বলেন, আমার পরিবারের কাছে ফোন করে কয়েকজন আমার নামে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য করছেন। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ ঘটনায় আমি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের দাবি জানাই।
এদিকে এতো সব অভিযোগের পরেও র্যাগিংয়ের ঘটনায় কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: সিলেটে প্রাইভেটকার চাপায় নিহত ২
এ বিষয়ে নুরুন্নাহার বেগম হল প্রভোস্ট ও সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফরহাদ আলী জানান, গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রুতির রুমের একটু সমস্যার কথা শুনেছি। পরে তার রুমমেট ও আমরা ৩ জন হলের যারা দায়িত্বে আছি, সবাই মিলে বসে ঘটনাটা সমঝোতা করে দিয়েছি।
ঐ ছাত্রী এখনো ঐ জায়গায় রয়েছে। এ বিষয়ে শ্রুতি আমাদেরকে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ জানায়নি। মাননীয় উপাচার্যের নির্দেশ মোতাবেক আমরা সমঝোতা করে দিয়েছি।
আরও পড়ুন: ঢাকাসহ সারাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা
এ ঘটনায় অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও ফিশারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌসুমী আক্তার জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে আমরা ৩/৪ টি মিটিং করেছি। এর সাথে অভিযুক্ত যারা, তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ঘটনাটি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা একটি তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবো।
সান নিউজ/এনজে