জেলা প্রতিনিধি: সহপাঠী বন্ধুত্ব, প্রেম, বিয়ে এরপর বিসিএস ক্যাডার হলেন এক সাথে ২ জন। এই দম্পতি হলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক শিক্ষার্থী মুসফিকুর রহমান সিফাত ও ফাতেমা তুজ্জোহরা শোভা।
আরও পড়ুন: কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টা আটক
সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে কৃষি ক্যাডারে সিফাত ও কর ক্যাডারে শোভা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তারা মনে করেন এই সাফল্যের পেছনে ২ জনের একে অপরের অনুপ্রেরণা রয়েছে ।
২০১৩-১৪ (বাকৃবি) শিক্ষাবর্ষে কৃষি অনুষদে ২ জন ভর্তি হন। তারা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ থেকে।
২০২২ সালের ৩ মার্চ তাদের বিয়ে হয়। অনার্স চতুর্থ বর্ষ থেকে তারা এক সাথে বিসিএসের জন্য পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তারা প্রতিদিনই ক্লাস শেষে লাইব্রেরীতে বিসিএস এর গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতেন।
আরও পড়ুন: নতুন প্রজন্ম স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে
শোভা মনে করেন, পড়াশোনার প্রতি বোঝাপড়াটাই বিয়ের পরবর্তী সময়ে তাদের চাকরির পড়াশোনার প্রস্তুতিকে ধরে রাখতে সাহায্য করেছেন।
তিনি আরো জানান, আমাদের গল্প ও অবসর সবকিছুই ছিল বিষয় ভিত্তিক চাকরি ও বিসিএস’র পড়াশোনা। যখন আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতাম তখন কেউই বিরক্ত হতাম না। অনেক কিছু শিখতাম পরস্পর থেকে।
লিখিত পরীক্ষায় ২ জন পাস করার পর ভাইবার জন্য আমরা পরস্পরকে সব সময় প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করতাম। আমরা বিকেলে চা খাওয়া বা রাতে ঘুমানোর আগে হঠাৎ-ই প্রশ্নগুলো একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতাম।
আরও পড়ুন: দুদকের জালে সাবেক ভিসিসহ ৩ জন
আমরা যাতে যেকোনো সময় যে কোন প্রশ্নে ঘাবড়ে না যাই। আমাকে ভাইবা বোর্ড এই বিষয়গুলোই আত্মবিশ্বাসী করতে সহায্য করেছে। আমার মনে হচ্ছিল ভাইবা বোর্ডে আমি সাধারণভাবেই কথা বলছি। প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর বিনয়ের সাথে করেছি। তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন ভাইবা বোর্ডের বিজ্ঞ স্যারেরাও।
শোভা জানান, আমার স্বামী আমার বন্ধু। জীবনসঙ্গী হিসেবে পাশে থাকা, দুঃসময়ে সমর্থন দিয়ে যাওয়া কিংবা বিয়ের পর সংসার সামলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া-সবকিছুতেই স্বামী কৃতিত্ব ছিল।
৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দিতে যখন অনেকটা সময় লেগে গেল, সেই কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণে তিনি আমাকে সহায্য করেছেন।
আরও পড়ুন: সাঈদীর নামে দোয়া করায় শিক্ষককে শোকজ
বিয়ের পরবর্তী সময়ে একটি মেয়ের জন্য পড়াশোনা ধরে রাখা বেশ কঠিন, আমি মনে করি। আমার ক্ষেত্রে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি, বাবা-মা, বোন ও স্বামীর সোবার সাপোর্ট ছিল। সেটা আমাকে মানসিকভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে সহায্য করেছে।
কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সিফাতের ইচ্ছা ছিল দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার। মা-বাবার কথা চিন্তা করে দেশে থেকে যান। এরপর তিনি দেশের সবচেয়ে সম্মানের সরকারি চাকরি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করেন।
তবে ৪০তম বিসিএসে না হওয়া আর করোনার কারণে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা দেরি হওয়ায় মাঝে মাঝে তার হতাশা চলে আসত। অনেক মানুষের কথাও শুনতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগ
সিফাত অন্যদের কথায় কান না দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়াকেই নিজের ধ্যান-জ্ঞান বানিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদেও উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর পরও বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের দিনটির জন্যই ধৈর্য ধরে ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন সিফাত। তিনি ছিলেন বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সবকিছুর পরেও নিজের লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল। স্ত্রীকে পাশে পেয়েছেন অনুপ্রেরণা হিসেবে।
তিনি জানান, জীবনের কঠিন সময়ে আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না। সে সময় যদি কান্না পায়, কাঁদতে হবে তাতে মন হালকা হবে। নিন্দুকের কথায় ভেঙে পড়া যাবে না। পরবর্তীতে নতুন করে চেষ্টা ও পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: এইচএসসির প্রথম দিন অনুপস্থিত ৫৫২২
সৃষ্টিকর্তা পরিশ্রমকারীদের জন্য অবশ্যই সঠিক সময়ে ভালো কিছু রেখেছেন এটা মনে রাখতে হবে। সেই সময় পর্যন্ত ধৈর্য ও পরিশ্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আমি আমার স্ত্রী প্রতি কৃতজ্ঞ,আমার কঠিন সময়গুলোতে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।
এই দম্পতির বিষয়ে বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, সিফাত ও শোভা ২ জনেই তাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে পেয়েছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া।
আরও পড়ুন: অদম্য নুসরাত জাহান আয়শার গল্প
আশা করি তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা ও সততার সাথে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। আশা রাখি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবে এবং তাদের পথ ধরে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে ।
সান নিউজ/এমএ/এইচএন